আদিত্য উঠে দাঁড়াল। ওকে ভাঙতি কিছু টাকা দিয়ে দরজা অবধি পৌছে দিলাম। তারপর দরজা বন্ধ করে গেস্টরূমে উঁকি দিলাম। সাদেক মিঞা ভোস ভোস করে ঘুমাচ্ছে। তবে গেস্টরুমে আতরের তীব্র গন্ধ পেয়ে অবাক হলাম।
আমার ঘরে যেতেই বাজে একটা আশটে গন্ধ। মনে পড়ল আদিত্য নিশিকাটি গ্রামে হাজেরাকে দেখেছে বলল। আসলে আদিত্যর কোনও কারণে হেলুসিনেশন হয়েছে। ভারি সেনসেটিভ ছেলে।
হাজেরার রান্নার কদ্দূর কি হল। হলে সাদেক মিঞাকে ডেকে খেতে বলব। রান্নাঘরে গেলাম। রান্নাঘরে হাজেরা নেই। ডালের চুলা বন্ধ। ভাতের হাঁড়ি বারান্দায়। বারান্দায় হাজেরা নেই। বাকি রূমগুলো দেখলাম। নেই। বাথরুমে নেই। ও বাইরে যায়নি তো । না। আমার ঘরে আমি যে চেয়ারে বসে ছিলাম সেখান থেকে মেইন গেইটা দেখা যায়। নাহ্ । কেউ বেড়িয়ে যায়নি।
জেসমিনকে ফোন করলাম। হাজেরা কি তোমার ওখানে?
না মামা।
আশ্চর্য!
কেন আপনার ওখানে নেই?
না। আচ্ছা। তোমায় সব পরে জানাচ্ছি।
আচ্ছা।
ইন্টারকমে নীচে ফোন করলাম । জামাল ধরল, বললাম, সেভেন বি- থ্রিরকাজের মেয়েটি কি নীচে নেমেছে?
না স্যার।
তুমি সিওর?
জ্বী, স্যার।
বেশ খানিকটা স্তম্ভিত হয়ে রিসিভার রেখে দিলাম। আদিত্যর তাহলে হেলুসিনেশন হয়নি। আমার কি হচ্ছে? আমি হাজেরাকে দেখছি না কেন? ওয়াল ক্লকের দিকে তাকালাম। একটা বাজতে পাঁচ মিনিট। গেস্ট রুমে ঢুকলাম। বিছানার ওপর বসে আছে সাদেক মিঞা। কানে সিটিসেলের একটা শস্তা সেট ঠেকিয়ে কার সঙ্গে ফোন কথা বলছে। সেটটায় আবার লাল সুতলি বাঁধা। সাদেক মিঞা বলল, আইচ্ছা আমি আইতেছি। তুমি আধামন চুন সংগ্রহ কর সালামত। তারপর ফোন অফ করে আমার দিকে তাকিয়ে সাদেক মিঞা বলল, স্যার। আমারে এখনি একবার মানিকগঞ্জের ঘিওর যাইতে হইব। মৌলভী সুলেমান মুন্সির পুকুরে জিনিসটা দেখা গেছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, আচ্ছা যাও। তার আগে একটু ভাত মুখে দিয়ে যাও।
সময় নাই ছার। সন্ধা নাগাদ জিনিসটা ভাইসা উঠব। তখনই চূনপড়া ছিটাইতে হইব। বলতে বলতে সাদেক মিঞা বিছানা থেকে নেমে গেস্টরুমের বাইরে বেরিয়ে এল। বলল, আমার ব্যাগখান কই ছার?
ও তোমার ব্যাগ । তোমার ব্যাগ তো রান্নাঘরে। এসো।দিচ্ছি।
রান্নাঘরের মেঝের ওপর একটা রুইমাছ পড়ে আছে। বেশ বড় মাছ। আমারশরীর কেঁপে উঠল।
সাদেক মিঞা বলল, জিনিসটা তাইলে এইখানে। বলে মাছটা ধরে ব্যাগে ভরল। তারপর বলল, আমি মাছটা নিয়া গেলাম স্যার। এইটা এইখানে থাকলে মুসিবত আছে।
আমি কী বলব বুঝে উঠতে পারলাম না।
দরজার কাছে এসে সাদেক মিঞা বলল, আমি আবার আসমু সার। দেখলেন তো কেমন ব্যস্থ থাকি। তয় আপনার ছুট বইনের পোলায় হারা বছর আদার-বাদারে ঘুইরা বেড়ায়। কিয়ের মইধ্যে গিয়া পড়ে, কি দেখে না দেখে, নিজেও ঠাওর পায় না। তারে এই তাবিজখান দিয়েন স্যার ।এই তাবিজ ধারণ না করলে হে বড় বিপদে পড়ব কইলাম।
বলে শূন্য থেকেই একটা কাইতন লাগানো ছোট্ট রুপোর তাবিজ আমাকে দিল।
আমি কখনও কোনওদিনই এইসব তাবিজ-কবজের মন্ত্রশক্তি কিংবা অতিপ্রাকৃত ঘটনায় বিশ্বাস করিনি।
আজ আর তাবিজ না নিয়ে পারলাম না ..
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।