হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা-শেষ পর্ব
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা- পঞ্চম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নমরুদের কন্যা অগ্নিকুণ্ডের মাঝে গিয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর নিকট দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ করেছে এ খবরটি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। তখন দেশে বুদ্ধিজীবী, চিন্তাশীল ও বিদ্বান ব্যক্তিদের মধ্য থেকে কতকে অগ্নিকুণ্ডের মাঝে গিয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর নিকটে দ্বীনের শিক্ষা গ্রহণ করল। প্রতিদিন এভাবে অগ্নিকুণ্ডের মাঝে লোক যাতায়াত আরম্ভ করল। যারা একবার সেখানে যায় তারা এক এক জন পাকা ঈমানদার হয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। দিন যত অতিবাহিত হতে থাকে লোকের যাতায়াত তত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
নমরুদ অবস্থা দেখে খুবই চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়ল। কারণ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর অনলকুণ্ডে যে হারে লোক যাতায়াতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে অচিরেই স্থানটি দ্বিতীয় দরবারে পরিণত হবে। তাই সে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে অগ্নিকুণ্ড থেকে বের করে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিবে বলে স্থির করল।
হামান নামক এক বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিল নমরুদের প্রধান উজির। সে সব ব্যাপারটি ভাল করে লক্ষ্য করল। তারপর নমরুদের নিকট এসে বলল, জাহাপনা! অগ্নি একটি দেবতা। আমরা তা পূজা অর্চনা করি না বলে সে আমাদের প্রতি বিরুপ হয়েছে। যাতে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে দগ্ধ করা সম্ভব হল না। অতএব আসুন আমরা প্রথমে অগ্নিপূজা আরম্ভ করি। তাহলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে। হামান এ পর্যন্ত বলার পরই একটি আগুনের উত্তপ্ত স্ফুলিঙ্গ এসে তার চোখে প্রবৃষ্ট হয়। সঙ্গে সঙ্গে তার দুটি চোখ জ্বলে যায়। তখন সে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে এবং বলতে থাকে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বড় যাদুকর। তাঁকে প্রকাশ্যে হত্যা করা ছাড়া মহারাজের দ্বিতীয় পথ নেই। এখনই জল্লাদ পাঠিয়ে তাঁকে হত্যা করুন। নমরুদ হামানের কথাবার্তা শুনে বলল, এখন শুধু তোমার চক্ষু গিয়েছে। তোমার পরামর্শ গ্রহন করলে আমার চক্ষুও রক্ষা পাবে না। এই বলে সে অখান থেকে চলে গেল এবং নিজ উদ্ভাবিত প্রোগ্রাম অনুসারে ইব্রাহীম (আঃ) কে নিরবে দেশ ত্যাগের ফন্দি আটতে লাগল।
আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে যে সমস্ত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন অন্য আর কোন নবীকে এতবড় কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন করেন নি। অধিকাংশ নবীকে আল্লাহ তা’য়ালা একটি বা দুটি বড় পরীক্ষা দ্বারা শোধন করে নিয়েছেন। কিন্তু হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে এক এক করে পাঁচটি বড় রকমের পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। এর প্রথমটি ছিল গুহায় তাঁর জন্ম ও অনিয়মিত প্রতিপালন। দ্বিতীয়টি ছিল তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ। তৃতীয়টি ছিল জালেম রাজা কতৃক তাঁর স্ত্রী অপহরণ। চতুর্থটি ছিল নিজ স্ত্রী এবং পুত্রকে নির্জন মরুভূমিতে প্রেরণ। পঞ্চমটি ছিল নিজ সন্তানকে কুরবানী করা। সমস্ত পরীক্ষায় তিনি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যার পরিনামে আল্লাহ তাঁয়ালা তাঁকে মুসলিম জাতির পিতা হিসেবে ঘোষণা দেন এবং কলিমুল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু) বলে সম্বোধন করেন। সকল নবী, রাসূলগণের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর পরেই হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর স্থান।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মূর্তি ভাঙ্গার ঘটনা- প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন