প্রেতনারী¬ [শেষ অংশ]

তানিম চমকে ওঠে।
মা।
ঘরে যা গরম। ঘুম আসছিল না।
হু। গরম ভালোই পড়েছে।
মা তিক্তস্বরে বলল, দ্যাখ তো, তোর চাচা-ফুপুরা সব কী শুরু করেছে ? জমি তোর বাবার। এখন বলছে অরিজিনাল কাগজ পত্র নেই। অথচ আমি শুনেছি গত বছরই এ অঞ্চলের ফাইনাল মাঠপর্চা সবাই নাকি পেয়ে গেছে।
তানিম দীর্ঘশ্বাস। ওর এসব ভালো লাগে না। ও বলল, মা তোমাকে একটা কথা বলব?
বল।
বাবা চায় না দৌজাবাড়ির জমি আমরা নিই।
বাবা মানে! কী বলছিস তুই! তর বাবা কখন বলল? কই আমাকে তো কিছু বলেনি?
বাবা মারা যাওয়ার আগে এ নিয়ে বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে … কথাবলতে বলতে তানিমের চোখ একবার দিঘির দিকে চলে যায়। ওর শরীর মুহূতের্ই জমে যায়। ঘাটের কাছে জলে কাঁপন। বিন্দু বিন্দু বুদবুদ, ধীরে ধীরে ঢেউগুলি ছড়িয়ে যায় । পানি থেকে একটা মেয়ের মাথা ভেসে উঠল । তানিম ভীষণ চমকে ওঠে। চিৎকার করে বলে, মা তুমি এখুনি নীচে যাও, গাড়ির কাছে দাঁড়াও, আমি চাবি নিয়ে আসছি।
কেন?
পরে বলছি।
তানিম এক লাফে ঘরে ঢোকে। টেবিলে ওপর মানিব্যাগ। তার পাশে চাবি পড়েছিল। অন্ধকারে আন্দাজ করে তুলে নেয়। ওর বুক ভীষণ কাঁপছিল। একবার মনে হল মেয়েটা ওকে ডাকছে। এখুনি একবার দিঘির ঘাটে যাওয়া দরকার। ঝোকটা প্রাণপন দমন করে তানিম।
তারপর চাবিটা নিয়ে কখন নীচে নেমে এল।
মা গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। চিৎকার করে বলল, কি হয়েছে বলবি তো …
পিছনে দেখ।
ও মাই গড! কে ও?
পরে বলব। এখন গাড়িতে ওঠ। জলদি।
গাড়ি স্টার্ট নিতে বেশি সময় নিল না। হাতের তালু ঘেমে গেছে। আঙুল কাঁপছিল। দ্রুত ভোক্সওয়াগেনটা ঘুরিয়ে ফটকের সামনে নিয়ে আসে। বাঁ দিকে টার্ন নিতে যাবে, ঠিক তখনই ঢেউয়ের প্রবল ধাক্কায় ভীষণ দুলে ওঠে ভোক্সওয়াগেনটা।
আল্লা! মা চিৎকার করে ওঠে।
তানিম ষ্টিয়ারিং ডানদিকে বাঁদিকে ঘুরিয়ে জলের ঘূর্নি থেকেবেরিয়ে আসে। ধবধবে চাঁদের আলোয় যান্ত্রিক শব্দ করতে করতে ধীর গতিতে ভোক্সওয়াগেনটা ছুটতে থাকে। তার পিছনে পিছনে ছুটতে থাকে জলের আকারে একটা মেয়ে। যে এইমুহূর্তে প্রেতনারী …তারই নিঃশ্বাস কিংবা বাতাসের প্রবল ধাক্কায় কেঁপে ওঠে গাড়ি । বিন্দু বিন্দু পানির ফোটায় জানালার আর সামনের কাঁচ ঝাপসা হয়ে উঠেছে । আন্দাজে গাড়ি চালাতে চালাতে শ্যাওলার তীব্র গন্ধ পায় তানিম । থকথকে কাদার গন্ধ পায় … ওর প্রচন্ড শীত করে। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। সেই সঙ্গে নিঃশ্বাসের কষ্ঠ টের পায়। গাড়ির বাইরে অন্ধকার জমে উঠেছে। যেন ঝড় উঠেছে। মায়ের কন্ঠস্বর আর শোনা যাচ্ছে না।
ঝোড়ো অন্ধাকারে প্রাণপন গাড়ি চালাতে থাকে তানিম …
তারপর কখন ফুটফুটে পূর্ণিমার আলোয় বেরিয়ে আসে কালো রঙের ভোক্সওয়াগেনটা …..

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!