দুনিয়া কাঁদার জায়গা
হযরত আব্দুল মালেক ইবনে নুমাইর (র.) একটি ঘটনা বর্ণনা করেন যে, কুফার এক বাসিন্দার মৃত্যুর পর স্বজনরা তার লাশ কাফনের কাপড় দ্বারা ঢেকে দিল। হঠাত মৃত ব্যক্তি নড়ে উঠল এবং চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বলতে লাগল, ঐসব লোকেরা আমাকে ধোঁকা দিয়ে ধ্বংস করেছে। আমার দুর্ভাগ্য। লোকেরা বলল, তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ব্ল, মৃত্যু লোকটি বলল, আমি বলতে পারছি না। কেন বলতে পারছ না? সে বলল, আমি জীবিত অবস্থায় আবু বকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ)-কে গালাগাল করতাম। সে কারণেই আমি কালেমা পড়তে পারছি না।
যখন তোমর সাথীরা একা রেখে আসবে, সে কবরে পোঁকার খাদ্য হবে তুমি, তোমার কাফন কবরের পেটে যাবে, মনে রেখ! এ কোমল শরীর সব বিগড়ে যাবে। সাপ বিচ্ছু কবর পূর্ণ থাকবে, কি হবে তখন আমল ছাড়া সেখানে।
আল্লাহ পাক বলেন, আমার প্রিয় বান্দাগণ! তোমরা কেন আমাকে রাগান্বিত কর? আল্লাহকে রাজী করা নিজের জীবনের আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। যদি আল্লাহ পাক জাল্লা শানুহু রাজি হয়ে যান, তাহলেই সব পাওয়া গেল। আল্লাহ পাক যদি নারাজ হন, তাহলে মৃত্যুর পর বড় কঠিন অবস্থার সম্মুখিন হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সে কঠিন আযাব মানুষ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ পাক বলেন-
হে আমার বান্দাগণ, আমার নাফরমানী করার আগে ভেবে নাও, তোমার মধ্যে এ শক্তি আছে কি না, আমার আগুনের তাপ সহ্য করার? তোমাদের শক্তি নেই, যে রাগ সহ্য করবে। গান শোনার আগে ভেবে দেখ, এ কারণে যখন জাহান্নামের গলিত শিশা ঢালা হবে। তা সহ্য করতে পারবে কি না।
অন্য নারীর দিকে নজর দেওয়ার পূর্বে ভেবে দেখ, আগুনের পেরেক চোখে যখন প্রবেশ করানো হবে তখন সহ্য করতে কিনা। সুদ খাওয়ার পূর্বে ভাব যে, পেটের ভিতর সাপ বিচ্ছু ভরে দেওয়া হবে। আর এ সাপ বিচ্ছু পেটের ভিতর কাঁটতে থাকবে। পাহাড়ের মত বড় বড় পেট হবে। সে পেটে শুধু সাপ বিচ্ছু ভরা থাকবে। তখন তাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
অতএব, ভাই ও বোনেরা আমার? সে সময়টা এমন হবে যে, কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারবে না। সে সময় যে জিনিস সাহায্য করতে পারবে তা হল বান্দার নেক আমলগুলো। সেটাই হল আসল পুঁজি। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির জানাযা আমরা নিয়ে যাই, সে লাশ অদৃশ্যভাবে ডেকে ডেকে একটাই কথা বলতে থাকে, এ দুনিয়া আবাদ করার জন্য নয়। এটা ক্ষণস্থায়ী। ধ্বংস হবে।
দুনিয়া হাসার স্থান নয়, কাঁদার জায়গা। এ ঘর ভেঙ্গে যাবে, শেষ হয়ে যাবে, তছনছ হয়ে যাবে।
হযরত আলী (রা.) এক কবর স্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এ কবিতা গুলো আবৃতি করছিলেন।
হে কবরবাসী! তোমাদের সম্পদ বন্টন হয়ে গেছে।
তোমাদের ঘরে অন্য লোকের বাসস্থান।
তোমাদের স্ত্রীগণ অন্য স্বামীর ঘরের রমনী।
তোমাদের সন্তানরা তোমাদের স্নেহ থেকে বঞ্চিত।