বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা

ক্লাসরুমে ওরা বসা। কয়েক বন্ধু। গল্প করছে।
‘গাছে ফল ধরে।’ বিলু বলল।
‘সব গাছে ফল ধরে না।’ মুখ বাঁকা করে নান্টু বলল।
‘আমাদের গ্রামের বাড়িতে নারিকেল গাছে কত ডাব ধরে আছে।’ গর্বের সঙ্গে বলল বিলু।
‘আবারও ভুল বললি, প্রথমে বল, আমাদের ডাব গাছে কত ডাব ধরেছে। দ্বিতীয় বার বল, নারিকেল গাছে বাধায় বাধায়, জোড়া জোড়া, ঝোপা, ঝোপা নারিকেল ধরেছে। তোর কী মনে নেই, আমাদের স্কুলে একবার হেলাল স্যার ধাঁধার প্রতিযোগিতা করেছিল, সেই প্রতিযোগিতায় আমাকে একটা প্রশ্ন ধরেছিলেন, ‘ডাব না খেলে কী হয়?’আমি এক বাক্যে উত্তর দিয়েছিলাম। ‘নারিকেল হয়।’ বলল নান্টু।

‘তোরা কি গতকাল সকালে টিভিতে মীনা কার্টুন দেখেছিস?’ মিতা বলল।
মীনা কার্টুনের কথা শুনে নান্টু রেগে বলল, ‘টিভিতে কি শুধু মীনা কার্টুন হয়? মীনা কার্টুন ছাড়া অন্য কিছু দেখা যায় না, বুঝি।’
‘অবশ্যই দেখা যায়।’ বিলু বলল।
‘তাহলে শোন, আমি কিন্তু টিভিতে বিজ্ঞাপনগুলোই বেশি দেখি। কারণ কী জানিস, বিজ্ঞাপন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কিছু কথা মনে করিয়ে দেই, যেমন দাঁত ব্রাশ করা, হাত পরিষ্কার করা, আরও কত কি? আমি কিন্তু টিভির সামনে বসলেই বিজ্ঞাপন দেখি, বিজ্ঞাপন ছাড়া অন্য কিছু দেখি না।’ নান্টু বলল।
‘ঘুরে ফিরে সব চ্যানেলে তো একই রকম বিজ্ঞাপন।’ বিলু বলল।
‘তাতে কি, তবু আমার ভালো লাগে বিজ্ঞাপন দেখতে।’ নান্টু বলল।
‘তুই কি ভবিষ্যতে বিজ্ঞাপন নির্মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাস।’ হাসতে হাসতে মিতা বলল।
‘শোন, সে দিন আমার বাবাকে বলেছিলাম। বাবা, তোমার স্কুল লাইফের বন্ধুরা কে, কোথায়, কোন অবস্থানে আছেন? বাবা বললেন, ‘আমি জিলা স্কুলে পড়তাম। আমার বন্ধুরা সবাই ভালো ছাত্র ছিল। এখন সবাই প্রতিষ্ঠিত। আমার বন্ধুরা সবক্ষেত্রেই আছে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ডাক্তার, কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ সাংবাদিক, কেউ সাহিত্যিক, কেউ প্রভাষক, আরও অনেক জন অনেক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত।’
‘তাই আমি বলি কি, আমরা সবাই কি এক পেশা গ্রহণ করতে পারব, পারব না। বাবার বন্ধুবান্ধবদের মতো আমাদের বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করতে হবে। কার ভাগ্য কী আছে, কে বলবে।’ নান্টু কথাগুলো বলল।
নান্টু কথা শেষ হওয়া মাত্র বিলু বলল, ‘এবার অবশ্য ঠিক কথাটাই বলেছিস।’
নান্টু সবার মুখের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল, ‘আমি আবার কবে ঠিক কথা বলতে পারি।’
নান্টুর কথার সুর ধরে মিতা বলল, ‘আমাদের সব কথা, সব সময় সঠিক কথা বলি না। আমরা যাও একটু বলি, তুই তাও তো বলিস না। কারণ তুই ইচ্ছে করেই মিথ্যা কথা বলিস, একটু বেশি বেশি। এটা তোর স্বভাব।’

পিন্টু এতক্ষণ কোনো কথা বলেনি শুধু শ্রোতা হিসেবে ওদের কথা শুনে যাচ্ছে, পিন্টু ভাবল আড্ডাটা হয় তো বা ঝগড়ার দিকে যেতে পারে। তাই হঠাৎ বুদ্ধি বের করে বলল, ‘তোরা কি জানিস, গত রাতে আমি কাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি?’
ওরা সবাই পিন্টু কথা শুনে অবাক। গভীর রাতে পিন্টু কার সঙ্গে আড্ডা দিল, সাহস তো কম নয়। একে একে সবাই আগ্রহের সঙ্গে বলল, ‘বল না পিন্টু, বল কাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছিস?’
পিন্টু বলল, ‘তাহলে তোর সবাই মনোযোগ সহকারে আমার কথাগুলো শোন। আবার যেন ভয়ে চিৎকার দিস না। গত রাতে স্কুলের পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছি। এক ব্যাঙ এসেই বলল, ‘বস, একটা বিচার করতে হবে।’
আমি বললাম, ‘কিসের বিচার?’

ব্যাঙ বলল, ‘বস, আজ পানি থেকে উঠে যখন শুকনো জায়গায় চুপে চুপে শরীরে ভিটামিন ডি সংগ্রহ করার জন্য উঠি, কোথা থেকে এক সাপ এসে আমাকে কামড় দিয়ে ধরে। খাওয়ার জন্য খুব চেষ্টা করে কিন্তু খেতে পারে না। বস কী অপরাধ আমার? কেন আমাকে খাওয়ার চেষ্টা করল সাপটা? ওরা কি অন্য কিছু খেতে পারে না?’

সাপও সঙ্গে এসেছে। সাপের অভিযোগ- পানির মাছগুলো ব্যাঙ একাই খেয়ে ফেলে। সাপ খেতে পারে না। সেই রাগে ব্যাঙকেই সাপ খেয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল। অবশেষে সমাধান দিলাম ব্যাঙ পানি থেকে মাছ ধরে সাপের গর্তে রেখে দেবে। তবেই সে বাঁচবে। গেল এক সমস্যা।

তারপর ঘটল আরেক ঘটনা। এল এক পরি আর এক ভূত। এসেই পরি বলল, ‘গুরু, একটা সমস্যার সমাধান করে দেন।’
আমি বললাম, ‘কী সমস্যা?’
পরি বলল, ‘আমার চলাফেরায় ইদানীং খুব সমস্যা করছে এই ভূতটা। এ ছাড়া আমার ভালো ভালো খাবারগুলোতেও হাত দিচ্ছে সে। ভূতেরও একই অভিযোগ। তাহলে কী করা যায়? আমি মহাবিপদে পড়ে গেলাম।

ভূতকে বললাম, ‘তোমার সমস্যা অনেক বড়, চিন্তার বিষয়, তাড়াহুড়া, করে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না। গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে তোমাদের সমস্যার সমাধান দেওয়া যাবে। তোমরা বরং দুই দিন পরে এসো। এই দুই দিনে আবার ঝগড়া বিবাদ করো না।’পরি আর ভূত আমার কথা মতো চলে গেল।

আবার দেখি এক শেয়াল, আর কুকুর এসে হাজির, সমস্যা হাঁস আর মুরগি খাওয়া নিয়ে। শেয়াল বলল, ‘বস, হাঁস বা মুরগি ধরতে গেলেই কুকুর টের পেয়ে আমাদের ধাওয়া ধরে। কুকুরকে একটু বোঝান ও কেন এমন করে?’
কুকুরকে বললাম, ‘তোমার কী খবর?’
কুকুর বলল, ‘দুই এক মুঠো ভাত যার বাড়িতে খাই তার কোনো ক্ষতি হোক কেউ চাইবে? দুই এক মুঠো খেয়েই তো বেঁচে আছি।’
আমি বললাম, ‘তোমাদের দুইজনের যুক্তি ঠিক আছে।’
শেয়াল রেগে বলল, ‘তোর তো পেট কখনো ভরে না। সব সময় পেটে ক্ষুধা লেগেই থাকে। তুই একটু আমাকে চুরি করার সুযোগ দে, দুইজনে হাঁস মুরগি সমান সমান ভাগ করে খাব।’ শেয়ালের এমন প্রস্তাব পেয়ে লোভী কুকুর রাজি হয়ে গেল। ওদের সমস্যা মিটে গেল। আমাকে বস বলে চলে গেল।

পিন্টুর কথা শেষ হওয়া মাত্র সবাই হেসে উঠল। ক্লাসের ঘণ্টা পড়ল। হেলাল স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন। ওরা যার যার মতো সিটে বসে পড়ল। ওদের আড্ডা আজকের মতো এখানেই শেষ।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!