রাসুর সাঁতার শেখা

প্রচণ্ড গরম পড়েছে। পুলক স্কুল থেকে বাড়িতে এল। বাড়িতে এসে স্কুলব্যাগটা টেবিলে রাখল। দ্রুত শার্ট-প্যান্ট পরিবর্তন করে দৌড়ে গেল পুকুর পাড়ে। দাঁড়িয়ে মনে মনে কী যেন ভাবল পুলক। তারপর ডিগবাজি দিয়ে নামল পুকুরে।

পুলক ডুব দিচ্ছে আর বগের মতো মাথা লম্বা করে পাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখছে কেউ এল কি না। এর মধ্যেই পুকুরপাড়ে এসে হাজির হলো ওর বন্ধু পলাশ। পলাশ এসে দেখে পুলক নেমেছে।
পলাশ বলল, ‘কি রে, কখন নেমেছিস ?’
পুলক বগের মতো মাথা লম্বা করে বলল, ‘এই তো কিছুক্ষণ হলো, তুই নামবি না? নেমে পড়।’
পলাশ বলল, ‘না রে, আমি নামবো না, স্কুলে যাওয়ার আগে গোসল করেছি।’
পলাশের এমন কথা শোনার পর পুলক ডুব দিয়ে পুকুরের ভেতর থেকে কাঁদামাটি উঠালো। তারপর ছুড়ে মারল পলাশের শরীরে। সঙ্গে সঙ্গে পলাশ ডিগবাজি দিয়ে পুকুরের নেমে পড়ল।
কিছু সময় পর ওদের বন্ধু পলটু এসে হাজির। পলটু হাতে একটা গামছা নিয়ে পুকুরপাড়ে এসে বসল। তারপর বলল, ‘কত শত ডুব দিল, এখন পর্যন্ত?’
পুলক বলল, ‘তুই দেরি করলি কেন? কত বার ডুব দিয়েছি, তা গুনি নাই।’
পলাশ হাতে পানি নিয়ে বলল, ‘তুই দেরি করলি যে, নামবি না?’
পলটু হাতের গামছাটার এক মাথায় গিট্টু দিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, ‘নামতে পারি, তবে শর্ত আছে।’
পুলক মাথার ভেজাচুল নাড়তে নাড়তে বলল, ‘শর্ত আবার কীসের, বল দেখি?’
পলটু বলল, ‘তাহলে শোন, তোদের দুজনের মধ্যে কে পুকুরের মাঝ থেকে আগে মাটি তুলে পারবে। যে আগে তুলতে পারবে, তাকে আজ বিকেলে ফুটবল খেলতে নেবো। আর যে জলের ভেতর থেকে মাটি তুলতে দেরি করবে, তাকে খেলতে নেবো না।’
পুলটুর নিজস্ব একটা ফুটবল আছে । সেই ফুটবল দিয়ে ওরা খেলে।
পলটুর কথা শুনে পুলক আর পলাশ ইশারায় কি যেনো বলল।

তারপর দুজন একসঙ্গে ডুব দিল। পুকুরের ভেতর থেকে একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে কাদামাটি তুলল। আনন্দে পলটু ডিগবাজি দিয়ে পুকুরে নেমে পড়ল।
তারপর তিনজন সাঁতারের প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।
রীতু জলে ভাসা বল নিয়ে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। পুলক দেখে হাত দিয়ে ইশারা দিল, রীতু বলটা ঢিল দিল। জলের ভেতর থাকা ওরা বলটা থাপাথাপি করে ধরতে লাগল। রীতু নেমে ওদের সঙ্গে খেলতে লাগল।
ওরা সবাই গোল হয়ে বলটা মাঝখানে রেখে ছেড়ে দেয় আর যে ডুব দিয়ে বলটা ধরে। যে আগে ধরে সে এক পয়েন্ট পায়। বিশ পয়েন্টে এক গেম। এভাবে জলের ভেতর ওরা খেলতে লাগল।
হঠাৎ পুলক বলটা ধরে আর জলের ভেতর থেকে ওঠে না। ওরা সবাই অবাক, পুলক গেল কোথায়! ওকে কুমির ধরে নিয়ে গেল ? ওরা এটা ভাবছে না, কারণ এই পুকুরে তো কুমির নেই, তাহলে ও গেল কোথায়! ওরা সবাই ডুব দিয়ে খুঁজতে লাগল। কিন্তু পুলক বলটা ধরে পুকুরের দক্ষিণ পাশে কলমির গাছ আর কচুরিপানার নিচে নাকটা আর মুখটা বের করে আছে। ওরা অনেক খোঁজাখুঁজি করছে কিন্তু পাচ্ছে না।
হঠাৎ পুলক কচুরিপানার ভেতর থেকে বলল, ‘এই যে, আমি এখানে।’
সবাই পুলকের কাছে গেল। পুলককে বকা দিল সবাই।
আবার খেলা শুরু করল ওরা। শেষ মুহূর্তে কালু ওর মামাতো ভাই রাসুকে নিয়ে এসে হাজির হলো পুকুরপাড়ে। কালুর মামাতো ভাই শহরে থাকে, তাই সে সাঁতার জানে না।
রাসুর সাঁতার শেখার খুব ইচ্ছা। তাই সে এসেছে গ্রামে। কালু রাসুকে সাঁতার শেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে।
কালু পুকুরের পশ্চিম পাড়ে থেকে বলল, তোরা সবাই শোন, এ আমার মামাতো ভাই রাসু, ও সাঁতার জানে না। শেখাতে হবে।’
পুলক ডান হাত তুলে বলল, ‘কোনো সমস্যা নেই, রাসুকে নিয়ে পুকুরের মাঝে নেমে আয়, আমরা সবাই মিলে সাঁতার শেখবো।’
কালু আর রাসু পুকুরের জলের ভেতর নামল। ওরা খেলা বাদ দিয়ে রাসুকে সাঁতার শেখানোর শুরু করল। জলের ভেতর সবাই হাত মেলে দিল। তার ওপর রাসুকে হাতের ওপর শুইয়ে দিল।
তারপর কালু বলল, ‘রাসু, এবার তুই, হাত-পা একসঙ্গে নাড়াতে থাক।’
রাসু হাত পা নাড়াতে লাগল। এভাবে বেশ কয়েক বার করল ওরা।
রাসুর পেটের নিচ থেকে হঠাৎ হাত সরিয়ে নিল ওরা। তখনি রাসু জলের ভেতর পড়ে গেল। প্রচুর জল খেল রাসু।
রাসুকে জলের ভেতর থেকে টেনে ওঠাল। তারপর পাড়ে শুইয়ে দিয়ে পেটে চাপ দিয়ে জল বের করল ওরা।
রাসু শুয়ে থেকে ধীরে ধীরে বলল, ‘আমি আর সাঁতার শিখব না।’
কালু বলল, ‘এক দিনে সাঁতার শেখা হবে না। কাল আবার আসতে হবে।’
পুলক সবাই বলল, হ্যাঁ, সাঁতার শিখতে আবার আসতে হবে।’রাসুকে নিয়ে ওরা সবাই কালুদের বাড়িতে গেল।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!