তালুত ও জালুতের কাহিনী-৪র্থ পর্ব

তালুত ও জালুতের কাহিনী-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

অতপর তালুত বনি ইসরাইলদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন তোমাদের মধ্যে এমন বীর কে আছ, যে কাফের জালুতের মুণ্ডটা কেটে আনতে পার? তালুতের কথায় প্রথমে কেউ সাড়া দিল না। তাই তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা আল্লাহর তায়ালার রহমতী বাহিনী। তোমরা সাহস করে সম্মুখে অগ্রসর হও। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সাহায্য করবে। অতএব কে আছ যে আনন্দের সাথে এই কাজ করতে রাজি আছ।  মনে রেখ, যে ব্যক্তি জালুতের মাথা কেটে এখানে হাজির করতে পারবে তাকে আমি আমার রাজ্যর অর্ধেক দান করব এবং আমার সুন্দরি কন্যার সাথে তার বিয়ে দিব। তালুতের এই আহ্বানে কেউ তেমন উৎসাহিত হতে দেখা গেল না। তখন তালুত নিজেই জালুতের মোকাবেলার জন্য  প্রস্তুতি নিলেন। এমন সময় রেশমি পোশাক পরিহিত উজ্বল বর্ণের এক সুদর্শন যুবক এসে তালুতকে ছালাম দিয়ে বললেন, মহাত্ন! আমি জালুতের মস্তক ছিন্ন করে নিয়ে আসতে প্রস্তুত আছি। আমি আল্লাহ তায়ালার উপর নির্ভর করে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছি। আপনি আমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করুন।

  এ সময় লৌহ বর্ম পরিহিত বিরাট দেহের কধিকারি রাজা জালুত অশ্বপৃষ্টে সেখানে এসে বলল, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে আমার সাথে মোকাবেলা করবে? আমি ক্ষনিকের মধ্যে তোমাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছি। তোমরা আমার সাথে যুদ্ধের নামে যথেষ্ঠ অপমান করেছ। এ অপমানের সাজা আমি এখনই দিচ্ছি।  এ কথা বলে উলঙ্গ তরবারী নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হল। তখন হযরত দাউদ (আঃ) গিয়ে তার সম্মুখে উপস্থিত হলেন।  তার হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। জালুত দাউদ (আঃ) দেখে বলল, তুমি নিরস্ত্র বালক আমার  সম্মুখে কেন এসেছ? হযরত দাউত (আঃ) বললেন, আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করব।

 জালুত জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি দিয়ে আমার সাথে যুদ্ধ করবে?  হযরত দাউদ (আঃ) বললেন, আমার নিকট কিছু রহমতি পাথর আছে, এ পাথর দ্বারা তোমার মস্তক গুড়িয়ে দেব। জালুত হযরত দাউদ (আঃ) কথা শুনে তাচ্ছিল্লের হাসি  হাসলেন এবং বললেন, তোমার যুদ্ধের প্রস্তুতি দেখে আমার দয়া হয় তাই তোমাকে বলছি, এ বয়সে তোমার জীবনটা  নষ্ট করে কি লাভ? তার চেয়ে তুমি ফিরে গিয়ে জীবনটা রক্ষা কর। অর্থ ও সুন্দরী রমণীর মোহে বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে অতটুকু অগ্রসর হয়েছ তা প্রশংসার যোগ্যে। এমন সম্মুখে বিপদ আর অগ্রসর হইওনা।

হযরত দাউদ (আঃ) তখন ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, তুই একটি কুকুর, কুকুরকে মারার জন্য পাথর যথেষ্ঠ এ কথা বলে এক খন্ড পাথর জালুতের মস্তক লক্ষ্য করে ছুড়ে মারলেন। এক পাথরের আঘাতে জালুত অশ্বপৃষ্ঠ হতে ভূতলে পতিত হল।  তখন হযরত দাউদ (আঃ) বাকি দু খন্ড পাথর তার শরীরের উপর নিক্ষেপ করলেন।

কোন তাফসিরকারক লিখেছেন, এক খন্ড পাথর নিক্ষেপ করে জালুতকে খতম করার পরে বাকি দুই খন্ড পাথর তার সৈন্যদের প্রতি নিক্ষেল্প করা হয়। যাতে সমস্ত ময়দানের বিশাল বাহিনী সমূলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।  জালুত ও তার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করার পরে তালুত তার রাজ্য দখল করেন এবং একছত্র অধিপতি হিসাবে রাজ্য পরিচালনা আরম্ভ করে। এদিকে হযরত দাউদ (আঃ) কে অর্ধ রাজ্যদান ও কন্যার বিবাহ সম্পাদনের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যান। এভাবে কিছু দিন অতবাহিত হওয়ার পরে বনি ইসরাইল কতক লোক গিয়ে বাদশা তালুতের নিকট তার ওয়াদা বিষয় আলাপ করেন। তখন তার মনে একটু গৌরবের সৃষ্টি হয়।

 তাই বনি ইসরাইল দের বলে দিলেন, আমার কন্যা অত্যন্ত সুন্দরি কিন্তু দাউদ  তামাটে রঙ্গের ও তার চক্ষু দুটি বিশ্রী। এ ছাড়া আমি যে এখন বিশাল রাজ্যের অধিপতি হয়েছি তাতে যে কোন রাজ পুত্রের সাথে আমার কন্যার বিবাহ করানো উচিৎ। সাধারণ একটা ছেলের সাথে শাহাজাদীর বিবাহ আদৌ সম্ভব নয়। দ্বিতীয় অর্ধেক রাজ্যর কথা বলেছিলাম বটে  কিন্তু সে তো আমার সঙ্গী হিসাবে আমার বর্ম পরিধান করে যুদ্ধ ময়দানে গিয়ে জালুত কে পাথর নিক্ষেপ করেছে।

  আমার সহায়তা ছাড়া একা গিয়ে জালুত কে হত্যা করতে সক্ষম হয়নি। এছাড়া জালুতের মুন্ডচ্ছেদ করে আমার সম্মুখে হাজির করতে সক্ষম হয় নি। অতএব এ আংশিক কাজের জন্য রাজ্য দানের কথা আমি ঘোষণা দেই নি। তালুত শয়তানের ধোঁকায় নিজ ওয়াদা আর রক্ষা করল না। বনি ইসরাইল এর লোকেরা হযরত দাউদ (আঃ) এর নিকট এ খবর জানলেন, হযরত দাউদ (আঃ) তখন বললেন, আমি তালুতের কন্যা বিবাহ এবং রাজ্য লাভের প্রত্যাশী নই। এ কথা বলে তিনি তার ভাই ও পিতাকে নিয়ে শামুয়েলের নিকট চলে যান।

  হযরত সামুয়েল (আঃ) হযরত দাউদ (আঃ) কে দেখে বললেন, এ যুবক একদিন নবুয়াতি লাভ করবে এবং সমগ্র দেশের অধিপতি হবে। তোমরা সকলে তার কদর কর এবং তার কথা অনুসারে চলার চেষ্টা কর।  তোমাদের মঙ্গল হবে।

অতপর হযরত দাউদ (আঃ) সত্তর জন সঙ্গী নিয়ে পার্বত্য এলাকার চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একখানা মসজিদ তৈরি করে গভীর এবাদাত বন্দেগীতে মশগুল হলেন। হযরত দাউদ (আঃ) নির্জন পর্বতের ধ্যান মগ্ন দেখে অনেক লোকের ভয় হল। তারা গিয়ে বাদশা তালুতকে হযরত দাউদ (আঃ) ধ্যান মগ্নতার কথা জানাল এবং বলল, যে ব্যক্তি একটি সামান্য পাথরের আঘাতে জালুতের বিশাল বাহিনীসহ তাকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। সে আপনাকেও পর্যুদস্ত করতে সক্ষম। অতএব আপনি তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা গ্রহন করুন। তালুত এ খবর পেয়ে একদল সৈন্য নিয়ে পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলেন। সারাদিন পথ চলার পরে সন্ধ্যা বেলা হযরত দাউদ (আঃ) মসজিদের সন্নিকটে গিয়ে পৌঁছালেন। 

তালুত ও জালুতের কাহিনী-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।