হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৪র্থ পর্ব
হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দরবেশ বালাম বাউর তখন বার বার এসমে আজম স্মরণ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু এসমে আজম আর স্মরণ হল না। তখন বাধ্য হয়ে দরবেশ এসমে আজম ছাড়াই রাজার যুদ্ধ জয়ের জন্য দোয়া করলেন। কিন্তু সে দোয়া আল্লাহ্র দরবারে কবুল হল না। তাই তাঁর পরের দিনের যুদ্ধে রাজার সৈন্যগণ হযরত ইউসা (আঃ) এর সৈন্যদের হাতে ভীষণভাবে মার খেতে লাগল। অবস্থা বেগতিক দেখে রাজা দরবেশ বালাম বাউরের সাথে পরামর্শ করে একটি ফন্দি বের করল যে, যদি হযরত ইউসা (আঃ) এর সেনাদের মধ্যে একটি পাপ কাজের ঘটনা ঘটানো যায় তবেই রাজার জয়ের সম্ভাবনা আছে। নচেৎ কোন আশা নেই।
রাজার পরামর্শ মতে কতগুলো অতীব সুন্দরী যুবতী হযরত ইউসা (আঃ) এর সেনাবাহিনীর মধ্যে ঢুকে তাঁদেরকে উত্যক্ত করতে লাগল। রমনীদের দেহের
লাবণ্য বহু মূল্যবান পোশাক পরিচ্ছেদের চমক এবং ভ্রমরকালো চক্ষুদ্বয়ের চাহনীতে সৈন্যদেরকে দিশেহারা করে ফেলল। তবুও তারা পদস্খলিত হয়নি। অবশ্য জামেরী নামক এক যুবক সৈনিক জনৈক যুবতীর রূপে মুগ্ন। সে ঐ রমণীকে ধরে হযরত ইউসা (আঃ) এর নিকট উপস্থিত হল এবং বলতে লাগল, হে নবী! আমি এ নারীর সাথে মিলন করলে তা আমার জন্য কি অন্যায় হবে?
হযরত ইউসা (আঃ) বললেন, সাবধান! কোন মতেই তুমি এ জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হইও না। কারণ তোমার একার পাপের জন্য সমগ্র সেনাবাহিনী কলঙ্কিত হবে। যায় পরিণাম আমাদের জন্য মারাত্মক হবে।
কিন্তু ঐ সৈনিকটি হযরত ইউসা (আঃ) এর এ উপদেশ ও সতর্কতার প্রতি কর্ণপাত না করে নির্জনে গিয়ে তাঁর সাথে অবৈধ যৌন মিলন ঘটালো। এর ফলে হযরত ইউসা (আঃ) এর সেনাগণের মধ্যে ব্যাপক আকারে কলেরা রোগের সৃষ্টি হল। তাতে সেনাবাহিনীর মানসিক দুর্বলতা দেখা দিল। যুদ্ধে আর তাঁদের একক বিজয় হল না। দু’পক্ষেই ঘোরতর যুদ্ধ চলতে লাগল এবং যুদ্ধে কোন পক্ষেই জয় পরাজয় হচ্ছিল না।
হযরত ইউসা (আঃ) এর সেনাদলের মধ্যে ব্যাপকভাবে কলেরার প্রকোপ, যুদ্ধের ময়দানে এ অবস্থায় মূল কারণ জামেরী নামক সৈন্যটির উক্তরুপ পাপ কাজের খবর হযরত ইউসা (আঃ) এর কর্ণগোচর হওয়া মাত্র তিনি রাগান্বিত হয়ে উক্ত পাপাচারিণী নারীটি সহ জামেরীকে বল্লমের সাহায্য হত্যা করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর সৈন্যদেরকে জামেরীর বল্লমবিদ্ধ লাশ দেখিয়ে সতর্ক করে দিলেন, যারা যুবতীদের সাথে কোনরূপ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করবে, তাঁদের অবস্থা জামেরীর অনুরূপ ঘটবে। এরূপ অবস্থা দেখে যুবতীগুলো সৈন্যদল থেকে বের হয়ে পালাল। ফলে হযরত ইউসা (আঃ)-এর সৈন্যগণের মন হতে পাপকাজের বাসনাও দূর হল এবং কলেরা রোগের প্রকোপ কমে গেল।
হযরত ইউসা (আঃ) এর সৈন্যগণের মনোবল পূর্বের মত বৃদ্ধি পেল। রাজার সৈন্যগণ তাঁদের সাথে যুদ্ধে হার মানতেছিল। তবুও রাজার সৈন্যরা হতাশ না হয়ে জান প্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল। কিন্তু রাজার সৈন্যগণের প্রায় শেষ হয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেছিল। অথচ যুদ্ধে জয়-পরাজয় চুড়ান্ত হল না। হযরত ইউসা (আঃ) বড়ই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কারণ ঐদিন ছিল শুক্রবার। তৌরাত কিতাবের বিধান অনুযায়ী তখন শনিবার দিনটি ছিল এবাদাতের জন্য নির্ধারিত।
ঐ দিন যুদ্ধ বিগ্রহ নিষেধ ছিল। তাঁর অনুসারী সৈন্যরা শনিবার যুদ্ধ বন্ধ রেখে এবাদাতে মশগুল হবে। কিন্তু বিধর্মীরা উক্ত বিধান মানবে না। তারা নবীর অনুসারী সৈন্যদের উপর একতরফা হামলা চালাবে। এমতাবস্থায় তাঁদের পরাজয় এবং মৃত্যু সুনিশ্চিত। এ চিন্তা করে হযরত ইউসা (আঃ) সেজদায় গিয়ে আল্লাহ্ পাকের দরবারে দোয়া করলেন যে, হে আল্লাহ্! আপনি অনুগ্রহ করে আজকের দিনটি অন্ততঃ ৩ ঘণ্টা দীর্ঘ করে দিন, যাতে আজকেই তোমার দ্বীনের শত্রুদেরকে নির্মূল করতে পারি।
হযরত ইউসা (আঃ) এর দোয়া আল্লাহ্ পাকের দরবারে কবুল হয়ে গেল। ঐ দিন অন্যান্য দিনের চেয়ে ৩ ঘণ্টা পর সুর্য অস্তমিত হল। ঐ সময়ের মধ্যে হযরত ইউসা (আঃ) এর সৈন্যগণ বালাক রাজার সৈন্যবাহিনীকে বিপর্যস্ত করে দিল। বহু সৈন্য নিহত। বাকী সৈন্য যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করল। উল্লেখ্য যে, হযরত ইউসা (আঃ) দোয়ার ফলে বালাক রাজার সৈন্যগণ পরাজয়বরণ করল এবং বালাম বাউর দরবেশের চেহারা হতে আল্লাহ্র নূর চলে গেল।
হযরত ইউসা (আঃ) এর জন্ম নবুয়াত প্রাপ্তি ও ধর্ম প্রচার-৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন