হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ইসলাম সেবা

প্রথম পর্যয়ে যারা ইসলাম ধর্মের অনুরাগী হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তাঁদের সংখ্যা কম থাকাতে কাফেররা তাঁদের উপর কঠোর নির্যাতন চালাত।

তারপরও তাঁরা ইসলাম ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন না। তাঁদের উপর প্রতিদিন প্রচুর নির্যাতন চালাত। এত কিছুর পরেও তাঁরা সে নতুন ধর্মের দিকে তাকিয়ে নিরবে তাঁদের অত্যাচার সহ্য করত। এরপরও ইসলাম ধর্মকে ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন না।

আর সে আত্মত্যাগীরা হলোঃ হযরত বেলাল (রাঃ), হযরত হিন্দিয়া (রাঃ), হযরত জারিয়া (রাঃ) এবং হযরত বিনতে জারিয়া (রাঃ)  এর নাম উল্লেখযোগ্য।

তাঁদের উপর কাফেররা যে অমানুষিক অত্যাচার করত তা দেখে হযরত বকর (রাঃ) সহ্য করতে না পেরে তিনি তাঁদের মালিকের কাছে উচিত মূল্য দিয়ে তাঁদেরকে মুক্ত করেছিলেন এরপর তাঁরা এ অমানুষিক অত্যাচার থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন।

হযরত বেলাল (রাঃ) উমাইয়া ইবনে খলফ নামক প্রভাবশালী ব্যক্তির গোলাম ছিলেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে, হযরত বেলাল (রাঃ) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন তখন থেকে উমাইয়া তাঁর উপর অমানুষিক অত্যাচার আর নির্যাতন আরম্ভ করে।

হযরত বেলাল (রাঃ)  এর উপর যে ধরনের অমানুষিক অত্যাচার হয়েছে তা একজন বিবেকবান মানুষ শুনলে তাঁর শরীর শিহরে উঠবে।

একদিন হযরত বেলাল (রাঃ)  কে গরম বালুকণার মাঝে ফেলে একটি লোহা দিয়ে শরীরের মাঝে দাগ লাগিয়ে দিল।

এরপর পুনরায় গলায় রশি বেঁধে মক্কার অলিতে-গলিতে ঘুরিয়ে নির্যাতন করত। তারপরেও হযরত বেলাল (রাঃ) ‘আহাদ, আহাদ’ অর্থাৎ, আল্লাহ্‌ এক, আল্লাহ্‌ এক এ ধরনের বাক্য ছাড়া অন্য কোন বাক্য তিনি মুখে উচ্চারণ করতেন না।

মাদারেজুন নবুয়্যত, ইবনে মাজা, তবকাতে ইবনে সা’আদ গ্রন্থে লিখিত আছে যে, একদিন হযরত আবু বকর (রাঃ) উমাইয়ার বাড়ির সম্মুখ দিয়ে কোথাও হয়তো যাচ্ছিলেন।

ঠিক ঐ মুহুর্তে হযরত আবু বকর (রাঃ) দেখেলেন যে হযরত বেলাল (রাঃ) – এর উপর প্রচুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। হযরত আবু বকর (রাঃ) এ দৃশ্য দেখে সহ্য করতে না পেরে উমাইয়াকে খুব নত কণ্ঠে বুঝিয়ে বললেন।

কিন্তু উমাইয়া তাঁর কথায় কোন কর্ণপাতই করল না। উমাইয়া তাঁকে বলল যে, তোমার যদি তাঁর দিকে এতই দরদ হয় তাহলে তুমি তাঁকে মুক্ত করে নিয়ে যাও না কেন?

একথা শুনে হযরত আবু বকর (রাঃ) ঐ জায়গা ত্যাগ করে চলে আসলেন। এর পরের দিন সকালে হযরত আবু বকর (রাঃ) উমাইয়ার নিকটে এসে হযরত বেলাল (রাঃ) – এর জন্য উপযুক্ত মূল্য দিয়ে হযরত বেলাল (রাঃ) – কে মুক্ত করে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)  এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “আমি আল্লাহ্‌ তা’য়ালার ওয়াস্তে বেলাল্কে মুক্ত করে এনেছি।”

হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর এ কথা শুনে খুবই আনন্দিত হলেন এবং বেলাল্কে আনন্দের সাথে গ্রহণ করলেন। ঠিক একইভাবে হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত আমের ইবনে ফুহায়রাকে স্বর্ণের বিনিময় মুক্ত করেছিলেন। আমের (রাঃ) হিয্রতের সময় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে ছিলেন এবং বিয়রের মাউনায় শাহাদাত বরণ করলেন। জারিয়া ও হিন্দিয়া নামক দু’জন বাঁদীকেও হযরত আবু বকর (রাঃ) এক মহিলার কাছ থেকে কিনে এনে মুক্ত করলেন। ঠিক একইভাবে যুনাইন ও উম্মে আবস নামে অপর দু’জন বাঁদীকেও মুক্ত করেছিলেন।

ইসাবা ও ইবনে হিশামের সীরাত পুস্তকে উল্লেখ করা আছে যে, একদা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কা’বা ঘরের কাছে বসে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের ইবাদাত করছিলেন। সে সময় কয়েকজন কুরাইশ লোক বুদ্ধি করল, এ সুযোগে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবন শেষ করে দিতে হবে। তখন আবু জেহেল এসে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর গলায় কাপড় বেঁধে মাটিতে হেঁচড়াতে লাগল।

হযরত আবু বকর (রাঃ) এ খবর শুনেই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে কাফিরদের হাত থেকে রক্ষা করলেন এবং তাদেরকে বললেন, “তোমরা কি তাঁকে মেরে ফেলতে চাও? আমার পালনকর্তা মহান আল্লাহ্‌ তা’য়ালা এবং যিনি তোমাদের কাছে নিদর্শন নিয়ে এসেছেন?” তাঁর কথা শুনে কাফিররা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে ছেড়ে দিয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) – এর উপর প্রচুর আঘাত করে। তাঁদের এ আঘাতে হযরত আবু বকর (রাঃ) অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

অনেকক্ষণ পরে হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর পরই তিনি জানতে চাইলেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কেমন আছেন? আমাকে তোমরা তাঁর কাছে নিয়ে চল।

সকলে তাঁকে নিষেধ করলেন এবং বললেন যে, তুমি তাঁর সাথে চলাফেরা করা ক্ষান্ত করে দাও। কিন্তু না, হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁদের বাধা মানার লোক নয়। পরিশেষে হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর মাতা জনৈক লোকের সহযোগিতায় তাঁকে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর খিদমতে তাঁকে নিয়ে যান। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ), হযরত আবু বকর (রাঃ)  কে দেখে আনন্দের সাথে তাঁকে আলিঙ্গন করলেন।

হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি প্রার্থনা করুন যাতে আমার মাতা ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)দু’হাততুলে তাঁর মাতার জন্য দোয়া করলেন। দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গেই হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর মাতা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।