হযরত আবু আলী শাকীক বখলী (রঃ) – পর্ব ১

তুরস্কের এক বিরাট মন্দির।  মন্দিরে পাথরের প্রতিমা।  মানুষ এ প্রতিমার উপাসনা করে।  বখল দেশের এক বণিক এসেছেন মন্দির দেখতে।  বাণিজ্য উপলক্ষে তিনি তুরস্কের এসেছেন।  কোথাও কী আছে ঘুরে ফিরে দেখছেন, এক পূজারী নতজানু হয়ে সাশ্রু নয়নে পাথর প্রতিমার পূজা করছেন।

বণিক চুপ করে থাকতে না পেরে তাকে বলেই ফেললেন, আপনার সৃষ্টিকর্তা অসীম শক্তির আধার, চিরসঞ্জিব।  অথচ তাঁকে ফেলে আপনি কি না প্রতিমার পূজা করছেন- যে জড় পদার্থের প্রাণ নেই জ্ঞান নেই।  কোন কিছু করার শক্তি নেই।  স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি মানুষ হয়ে আপনি অনুভূতিহীন- আপনার লজ্জা হয় না?

পূজারী বললেন, মেনে নিলাম আমার এ দেবতার কোন শক্তি নেই।  কিন্তু আপনার আল্লাহরই বা কী ক্ষমতা আছে শুনি? তা যদি থাকত, তাহলে রুজি-রোজগারের জন্য আপনাকে বখল ছেড়ে তুরস্কে আসতে হত না।  সেখানেই রুজির ব্যবস্থা করতে পারতেন? পুরোহিতের কথায় বণিকের চোখ খুলে যায়।  তাই তো! তিনি কোন অন্যায় বলেননি।  সেদিনই তিনি তুরস্ক ত্যাগ করলেন।  পথে দেখা হল এক অগ্নি-উপাসকের সঙ্গে।  তাকেও তিনি কিছু কথা শুনিয়ে দিলেন।  অগ্নিপূজক বললেন, তুমি কি কাজ কর? তিনি বললেন, ব্যবসা- বানিজ্য।

তাহলে তুমিও তো স্বার্থের পেছনে দৌড়াচ্ছ।  যা ভাগ্যে আছে, তুমি তা পাবেই, তোমার কি এ বিশ্বাস নেই?

একথা শুনে বণিক আরও সচেতন হলেন।  মনে শুরু হল চিন্তা- ভাবনার গভীর আলোড়ন।  আর পার্থিব বিষয়- বাসনা সম্পুর্ণ দূর হয়ে গেল তাঁর মন থেকে।  বণিক বৃত্তি ত্যাগ করে তিনি বখলে ফিরে এলেন। 

তখন বলখের আমীর ছিলেন আলী ইবনে ঈসা।  ঘটনাক্রমে তাঁর পোষা কুকুরটি চুরি যায়।  আর চোর সন্দেহে আলীর   অনুচরেরা অকথ্য অত্যাচার শুরু করে আলোচ্য বণিকের এক পড়শীর ওপর।  আর তিনি তাঁর সাহায্য এগিয়ে এলেন।  যেভাবে হোক, আমীরের কুকুর তিনি বের করে দেবেন।  এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেচারাকে তিনি উদ্ধার করলেন, তারপর   হাত ওঠালেন আল্লাহর দরবারে।  দয়াময়! কুকুরের সন্ধান দিন।  না হলে আমার মুখরক্ষা হবে না।  আমার প্রতিবেশীকেও অযথা জুলুম সহ্য করতে হবে।  তবে মুখরক্ষা নিয়ে আমার তেমন ভাবনা নেই।  আমি ভাবছি নির্দোষ প্রতিবেশীর কথা, দয়া করে ঐ দুর্বল দাসকে বিপন্মুক্ত করুন।  আল্লাহ এ প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন।  কুকুর চোর নিজে এসে বণিকের কাছে সেটি দিয়ে গেল।  আর তিনি প্রসন্ন চিত্তে তা পৌঁছে দিলে আমীরের কাছে।  আল্লাহ অনির্বচনীয় মহিমায় তিনি পরিপূর্ণরূপে এক আত্মা নিবেদিত দাসে পরিণত হলেন। 

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আবু আলী শাকীক বখলী (রঃ) – পর্ব ২  পড়তে এখানে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!