স্বামীকে উপদেশ দান-পর্ব ৫

স্বামীকে উপদেশ দান-পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

ভ্রমণ করতে করতে সহসা তাদের উভয়ের দৃষ্টি নীল নদের একটি নতুন চরের প্রতি পতিত হল। আছিয়া তাঁর স্বামীকে বললেন, প্রিয়তম! ঐ দেখুন নদীর মধ্যে একটি নতুন চরের সৃষ্টি হয়েছে। ওটা শুধুই বালুকার স্তূপ। এখন পর্যন্ত ঐখানে কোন গাছপালা বা তৃণলতা উৎপন্ন হয় নাই। আচ্ছা আপনার কি এমন শক্তি আছে যে, ঐখানে কোন বীজ বপন ব্যতীত একটি বৃক্ষ বা তৃণের সৃষ্টি ঘটাতে পারেন?

নিশ্চয়ই তা পারবেন না। কোন মানুষেরই পক্ষে তা সম্ভব নয়! অথচ বিশ্বস্রষ্ঠা পরম প্রভু ইচ্ছা করলে ঐ চরের বুকে যে কোন শ্রেণীর বৃক্ষ, গুল্ম বীজ ব্যতীতই উৎপন্ন করতে পারেন। কেননা তিনি যে অসীম ক্ষমতার আধার সর্বশক্তিমান। ভেবে দেখুন! এ জন্যই কোন মানুষের উচিত নয় তাকে নিজেকে আল্লাহ বলে প্রচার করা, আল্লাহ কেবন তিনিই যিনি সকল কিছুকে সর্বাবস্থায় সৃষ্টিতে সক্ষম।

আছিয়া একটি ক্ষুদ্র কীটের প্রতি ফেরাউনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতঃ আবার বললেন, স্বামী! আপনি কি এ ক্ষুদ্র কীটের অনুরূপ একটী জীবও সৃষ্টি করতে পারেন? অথবা এর মৃত্যু ঘটিলে একে বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হন? নিশ্চয়ই তা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। তবু আপনি নিজেকে সবার খোদা বলে যে দাবী করছেন সে দাবী কেমন করে মানা যেতে পারে?

আছিয়ার এ অপ্রাসঙ্গিক বাক্য শুনে ফেরাউনের মাথা এক পলকেই গরম হয়ে উঠল। তার এ প্রমোদ ভ্রমণ মিথ্যা হয়ে গেল। আছিয়ার এ ধরণের কথাবার্তাগুলোকে সে সহ্যই করতে পারত না। মুহূর্তে সে বিরক্ত এবং ক্রোধে অধীর হয়ে প্রমোদ উদ্যান হতে বের হয়ে গেল। ক্রোধের আধিক্যে তার মুখ হতে কোন কথাই উচ্চারিত হল না। তবে বেগম অপেক্ষা মুছার উপরে সে ক্রোধ হল আরও বেশী।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, আর কোন কথা নয়, আর কোনরূপ ক্ষমা নয়, মুছাকে সে এবার আশা, আকাঙ্খা, যশ, গৌরব সমস্ত কিছু বরবাদ করে দিবে। মুছাকে বিনাশ করার পরে যদি দেখা যায়, আছিয়া তখনও পথে আসে নেই তা হলে তখন আছিয়াকেও পৃথিবী হতে বিদায় করে দেবে।  

আছিয়া বিচলিত হয়ে ফেরাউনের মনোভাব বুঝতে পেরে মুসা আঃ কে সাবধানে থাকতে বললেন। মুছা আঃ বললেন-পালিয়ে বাঁচব? তেমন কাপুরুষ আমি নই। আমি ন্যায়ের পক্ষে আছি। প্রয়োজন হয় সত্যের উপরে সুদৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তবু পালিয়ে যাব না। আপনি আমাকে আশীর্বাদ করুন, আমার উপরে যে কোন কঠিন বিপদ আসুক বীরের মত তার সামনে বক্ষ পেতে দিব। অদৃষ্টে যা লিখা আছে, তা তো ঘটবেই, সেজন্য পরোয়া করব আমি আপনার এত ভীরু ছেলে নই। আম্মা! আমি আপনাকে ফেলে রেখে অন্য কোথাও যাব না।

আছিয়া বললেন, বাবা! তোমার এ কথা বীরোচিত বটে কিন্তু এতে বুদ্ধিমত্তা নেই। সাপের মত জীবকে কখনও বিশ্বাস করবে না। তবে তার নিকট হতে নিজেকে সদয় বাঁচিয়ে রাখতে হয়। নতুবা যখন তখন বিপদ ঘটতে পারে। কাজেই তোমাকে আমার এ নির্দেশ মেনে নিয়ে মিশর রাজ্য ছেড়ে যেতেই হবে। স্মরণ রাখবে, নিষ্ঠুর অত্যাচারী ন্যায়-অন্যায় মেনে চলে না। তারা যা ইচ্ছা তা করে বসতে পারে।

তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তুমি আমাকে যেমন রক্ষা করতে সক্ষম হবে না। তেমন নিজেও বিপদ হতে রক্ষা পাবে না। মুছা! আমি নিজের বিষয় মোটেও ভাবি না, শুধু তোমাকে নিয়ে দিনরাত আমি উদ্বিগ্ন আছি। এটার কারণ এই যে, আমি যদি জগৎ হতে বিদায় গ্রহণও করি তবে তাতে কোন ক্ষতি নেই। তাতে কারও ক্ষতি হবে না বরং আমার মত হাজার হাজার নারী বিনাশ হলেও তাতে জগৎবাসীর কিছু যাবে আসবে না। কিন্তু তোমার সামান্য অকল্যাণও ঘটতে দেয়া যেতে পারে না।

মুছা! বিভিন্ন লক্ষণ দ্বারা আমি উত্তম রূপে বুঝেছি যে, আল্লাহ তোমাকে একটি বিরাট ও মহান কর্তব্য সাধনের উদ্দেশ্যে দনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু তোমার সে কর্তব্য এখনও সম্পন্ন হয় নাই। তাই স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। আত্নবিসর্জন করা তোমার জন্য অপরাধ স্বরূপ। তাই আমি বলছি তুমি এখন এ মুহূর্তে এস্থান হতে প্রস্থান কর এবং অন্যত্র গিয়ে মানব সমাজে স্রষ্টার বাণী প্রচার কর। আমি করুণাময় আল্লাহর কাছে আশীর্বাদ করি যেন তুমি এ কর্তব্য সাধনে সফলতা লাভ কর।

স্বামীকে উপদেশ দান-শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!