ষ্টক ক্লিয়ারেন্স

শান্তিপুরের রাম বসাকদের তিন পুরুষের তাঁতের ব্যবসা। দেশভাগের কিছু আগেই রাম বসাকের দাদু নন্দ বসাকের সপরিবারে পাকাপাকিভাবে শান্তিপুরে আগমন বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে। সেই থেকে জাত ব্যবসাই বসাক পরিবারের রুজিরুটির একমাত্র সম্বল। রাম বসাকই প্রথমবার নিজের ঘরের তাঁতের শাড়িকে অন্য দোকানদারের মাধ্যমে নয়, নিজে হাতে পৌঁছে দিতে চাইলেন বাঙালীর ঘরেঘরে। শান্তিপুরেই প্রথম খুলে বসলেন ‘বসাক শাড়ি মিউজিয়াম’। এরপর ‘বসাক শাড়ি মিউজিয়াম’ শাখা প্রশাখা মেলে একদিন পৌঁছে গেল খোদ কলকাতাতেও।

রাম বসাকের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। বছরের এই সময়টা, মানে চৈত্রের সেলের সময়ও দূর্গাপূজোর মতই ব্যস্ততা থাকে বসাকদের দোকানগুলোতে। পূজোর সময় রকমারি শাড়ির অফুরন্ত ষ্টক না থাকলে মহিলা কাষ্টমারদের সন্তুষ্ট করা এক কথায় অসম্ভব। এই অফুরন্ত ষ্টক মেনটেইন করতেই পূজোর মাস ছয়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রোডাকশন বাড়ানোর তোড়জোড়। পূজো থেকে দেওয়ালী পর্যন্ত সিজিনাল বিক্রিবাটার পরে বেঁচে যাওয়া শাড়ির ষ্টক ক্লিয়ারেন্সে এই চৈত্র সেলই একমাত্র ভরসা। বিক্রয় মূল্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫-৩০% ছাড়ের জিভে জল এনে দেওয়া সেলের লোভে বাঙালী রমণীকুল যে ঝাঁপিয়ে পরবে তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে। অন্যান্য শাড়ির দোকানদারের মতই রাম বসাকেরও নাওয়া খাওয়ার সময় নেই এই চৈত্র মাসের ষ্টক ক্লিয়ারেন্সের চক্করে।

দোকান বন্ধ করে বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতেই রাত দশটা বেজে গেল। খিদেয় রাম বসাকের পেটে শুরু হয়ে গেছে ছুঁচোর জিমনাস্টিক। গলা উঁচিয়ে গিন্নিকে খেতে দিতে বলে, হাত মুখ ধুয়ে বাইরের জামা কাপড়েই গিয়ে বসলেন খাবার টেবিলে। মাত্র কয়েক মিনিটেই কাঁসার থালায় একটুখানি খিচুড়ি আর কাঁচের বাটিতে সদ্য ফ্রিজ থেকে বের করা ঠাণ্ডা আমের চাটনি দিয়ে গিন্নি বললেন-
– “এটুকু আগে খেয়ে নাও..”
– “এটা কি ভোগের পেসাদ?”
গিন্নিকে করা প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে বসাক কত্তা আমের চাটনি খিচুড়িতে ঢেলে খাওয়াতে মননিবেশ করলেন। খিচুড়িটার সাথে কেমন যেন বর্ষণস্নাত গত পরশু রাতের গরম গরম খিচুড়িটার মিল রয়েছে। মনে যাই আসুক না কেন কথা বাড়ানোর সাহস হল না বসাক কত্তার। খিচুড়ি শেষ হতেই সেই পাতেই গিন্নি পরিবেশন করলেন দু’হাতা চাইনিজ চিকেন ফ্রায়েড রাইস এবং বলাই বাহুল্য এই দ্বিতীয় পদটিও গত রাতের অবশিষ্ট। চাইনিজ চিকেন ফ্রায়েড রাইস গলাধঃকরণ করতে করতেই বসাক কত্তা সঠিকভাবেই অনুমান করলেন পরবর্তী পদ হতে চলেছে সাদাভাত আর সঙ্গে দিনের বেলার বেঁচে যাওয়া রুই মাছের কালিয়া, কারণ ‘বসাক শাড়ি মিউজিয়াম’-এর মতই গিন্নির হেঁসেলেরও যে চলছে ষ্টক ক্লিয়ারেন্স।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!