
বান্দরবানের বাইশারী নামক এলাকায় নাকি মাসে একদিন এক বৃদ্ধের দেখা পাওয়া যায়। মারমারা সেই বৃদ্ধের নাম দিয়েছে “জাদি লাম” — যার মানে “জ্ঞানী বৃদ্ধ”। এই বৃদ্ধ নাকি মারমাদের “তাইফুন তালেক” নামের এক দেবতাকে পূজা করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।
“তাইফুন তালেক” হলেন মৃত্যুর দেবতা। বলা হয়ে থাকে, মৃত্যুর দেবতা যদি কাউকে পছন্দ করেন, তবে সেই মানুষ শতবর্ষজীবী হতে পারে। আবার, যদি কাউকে অপছন্দ করেন বা তার সর্বনাশ করতে চান, তাহলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে রক্ষা করতে পারে না। তবে এই দেবতা সরাসরি সেই মানুষটিকে আঘাত না করে বরং তার পরিবারের কাউকে (বিশেষ করে ছোট শিশুদের) শাস্তি দেন।
এই শাস্তির ধরনটাও ভয়ানক অদ্ভুত। যার প্রতি দেবতার রোষ পড়ে, সে যত নিরাপদেই থাকুক না কেন, হঠাৎ করেই ঘর থেকে উধাও হয়ে যায়। পরে তাকে “প্রান্তিক পাহাড়” নামের এক পাহাড়ের পাদদেশে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় — মাথা পাথরে থেঁতলে ভয়ানকভাবে ক্ষতবিক্ষত।
এতকিছুর পরেও “জাদি লাম”-কে কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। একবার একজন ব্যক্তি, যার সন্তান তথাকথিত মৃত্যুর দেবতার রোষে মারা গিয়েছিল, রাগের মাথায় “জাদি লাম”-কে জনসম্মুখে প্রচণ্ড মারধর করে। এমনকি তার গায়ের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলে।
“জাদি লাম” সেদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। কিন্তু সেই রাতেই সেই লোকের ঘর থেকে আর্তচিৎকার ভেসে আসে। এলাকার লোকজন আগুনের আলো ও কুপি হাতে ছুটে যায় তার বাড়ির দিকে। গিয়ে দেখে লোকটি ঘরের মেঝেতে মৃত পড়ে আছে — সারা গায়ের চামড়া তুলে ফেলা হয়েছে। শুধু একদলা রক্তাক্ত মাংসপিণ্ড পড়ে আছে। তার স্ত্রী তখনই হতবাক, বোবা।
অনেক পরে সেই নারী জানান, স্বামী-স্ত্রী রাতের খাবার শেষ করে ঘুমোতে যাচ্ছিলেন। স্বামী হুক্কা টানছিল। হঠাৎ দরজা নিজে থেকেই খুলে যায়। প্রবল ঝড়ের মতো বাতাস ঘরে ঢোকে, বাতি নিভে যায়। এরপর সে শুধু শুনতে পায় তার স্বামীর প্রাণান্তকর আর্তনাদ। বাতাস এক মিনিটের মতো ছিল, তারপরই বাতি নিজে নিজে জ্বলে ওঠে। দরজা-জানালাও আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু তখন স্বামীর চামড়া ছাড়ানো মৃতদেহ পড়ে থাকে ঘরের মেঝেতে…
ঘটনাটা আমি শুনেছি আমার এক মারমা বন্ধুর কাছে। কথার ছলে সে বলছিলো, বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে এমন বহু ঘটনা ঘটে, যার কোনও ব্যাখ্যা নেই…