
এই ঘটনাটি আমার মেঝো ফুফুর কাছ থেকে শোনা । ফেনী থেকে পরশুরামগামী যে রেল লাইনটি আছে এক সময় ভোর ৫টা থেকে রাত৯টা পর্যন্ত একটি ট্রেন এই পথে নিয়মিত যাতায়াত করতো । বৃটিশ আমলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ত্রিপুরা রাজ্যে মালামাল নেয়ার জন্য এই লাইনটি তৈরি করা হয়েছিল । বর্তমানে অবশ্য এই লাইনে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে ! আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা।আনন্দপুর ইউনিয়নের কালিহাট নামক স্থানে কালা পোল নামের একটি জায়গা ছিল । আর সেই কালা পোলের পাশে ছিল ছোট্ট একটি গ্রাম নাম তার ধোঁয়াছরি । ছবির মতই দেখতে সুন্দর ছিল সেই গ্রামখানি । চারদিকে ছিল তার সবুজে ভরা । দেখলে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যেত ।
এই এলাকায় তখন বিদ্যুত্ আসেনি তাই রাত একটু গভীর হলে চারপাশে সুনসান নীরবতা নেমে আসতো । আর সেই নীরবতার মাঝে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর মাঝে মাঝে খেকে থেকে শেয়ালের ডাক ছাড়া কিছু শোনা যেতনা । ঘটনা :- একদিন এই গ্রামের এক মেয়ের বিয়ের আসর থেকে যৌতুকের দাবীতে বর চলে যায় । এভাবে বিয়ে আসর থেকে বর চলে যাওয়ার কারনে সেদিন সারা রাত মেয়েটি এবং তার মা বিলাপ করতে করতে কান্নাকাটি করে।পরে ফজরের আযান দেয়ার একটু আগে মেয়েটি লজ্জা শরমের ভয়ে ঐ কালা পোলের পাশে রেলগাড়ির নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।আত্মহত্যার পরে তার দেহটি পাওয়া গেলেও মাথাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি । গ্রামবাসি অনেক খোঁজাখোঁজি করেও মাথাটি না পেয়ে পরে শুধু দেহটি দাফন করে। এই ঘটনার কয়েক দিন পরের কথা । একদিন গভীর রাতে বিকট এক কান্নার আওয়াজ শুনে গ্রামের সব মানুষের ঘুম ভেঙ্গে গেলো । তারা লহ্ম্য করলো বিলাপের সুরের মত একটি কান্নার আওয়াজ তাদের কানে ভেসে আসছে । আর কান্নার আওয়াজটি আসছিলো ঠিক কালা পোলের ঐ দিক থেকে ।
সবার কাছে কান্নার আওয়াজটি অতি পরিচিত মনে হলেও কেউ সাহস করে ঘর থেকে বের হয়নি । পরদিন সকালে গ্রামের মানুষ ঐ স্থানে গিয়ে দেখলো কে যেন রেল লাইনের পাশে ছোট্ট একটা গর্ত খুঁড়ে গেছে । তার পর থেকে প্রায় সময় গভীর রাতে বিলাপের সুরের মত সে কান্নার আওয়াজ শোনা যেত ! একদিন চাঁদনী প্রসার গভীর রাতে গ্রামের কিছু যুবক যাত্রাপালে দেখে বাড়িতে ফিরছিল । গ্রামে ঢোকার পথে হঠাত্ করে তাদের চোখ গেল কালা পোলের ঐ দিকে । তারা লহ্ম্য করল রেল লাইনের উপর সাদা পোশাক পরা একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে । কিন্তু তার দেহের সাথে মাথাটি ছিলনা । ঠিক সে সময় মেয়েটি বিলাপের সুরের মত কান্না শুরু করে দিল । মাথাবিহীন মেয়েটি কিভাবে শব্দ করছে তা ভেবে যুবকরা সবাই অবাক হয়ে গেল ।
এই দৃশ্য দেখে যুবকেরা তখন ভয়ে গ্রামের দিকে দৌঁড় দিল। পরদিন সকালে এই ঘটনা তারা মসজিদের ইমাম সাহেব কে জানালো । সব শুনে ইমাম সাহেব গ্রামবাসিকে রাত্রি বেলা ঐ কালা পোলের দিকে যেতে নিষেধ করেন । সেদিন রাতে কে যেন মসজিদের ইমাম সাহেব কে স্বপ্ন দেখালো মেয়েটির মাথা খুঁজে বের করতে । আর সে মাথা কবরে দাফন করতে। স্বপ্ন দেখার পরদিন ইমাম সাহেব গ্রামবাসিকে নিয়ে কালা পোলের আশেপাশে মাথাটি খুঁজতে বের হলেন । এক সময় কালা পোল থেকে আধা কি:মি: দূরে একটি ধানহ্মেত থেকে মাংস পঁচা মাথাটি উদ্ধার করে । পরে সেখান থেকে মাথাটি এনে কবরে দাফন করা হয়েছিল । সেদিনের পর থেকে গ্রামের মানুষ আর কখনো সেই বিকট শব্দের কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়নি ।