অদ্ভুত রাত এবং একটি সাদা পরী

২০১০ সালের জুন মাস। রাত ১ টায় গুলশানে একটা DJ Party থেকে বাসায় ফিরলাম। আমার বাসা ছিল শনির-আখড়ায়। বাসায় আসার পর আম্মুর মুখে বকা শুনে গোছল করে বিছানায় গেলাম ঘুমানোর জন্য। আজ ডিনার করবো না। আমার রুম থেকে বাহিরে যাবার জন্য একটা দরজা ছিল। বাড়িটা দুতলা। একটু পুরনো। আমরা ৩ মাস হল বাড়িটাতে উঠেছি। আমি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

হটাত আনুমানিক রাত ২.৩০ এর দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভেঙ্গে যায় নাকি ব্যাপারটা স্বপ্নে দেখি তা আজো একটা রহস্য। যাই হোক, আমি দেখলাম আমার গায়ে একটা সাদা কাপড় জড়ানো। কেউ যেনও আমাকে সেই সাদা কাপড়টা সহ টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার সাথে করে। আমি ঘুমানোর আগে দেখেছিলাম যে সেই দরজা দিয়ে বাইরে যাওয়া যায় সেটা লাগানো ছিল। ভুল হবার প্রশ্নই আসে না, কারণ আমি নিজে চেক করে ঘুমিয়েছিলাম।

সেই সময় দেখলাম দরজাটা হা করে খোলা। হটাত অনুভব করলাম আমার শরীরে কেউ বা কিছু একটা যেনও হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হাতটা আশ্চর্য রকমের ঠাণ্ডা। যখন ব্যাপারগুলো এতটা অনুভব করতে পারছিলাম তখন সেটাকে স্বপ্ন হিসেবে আখ্যায়িত করা সম্ভব না। আমি তাকিয়ে দেখলাম কেউ যেনও সত্যি সত্যিই আমার হাত ধরে বসে আছে। আমি যা দেখলাম তা আমার মোটেও বিশ্বাস হচ্ছিল না।

দেখলাম, আমার সাড়া গায়ে সাদা কাপড় জড়ানো। আমি আমার রুমে নেই। উপরে খোলা আকাশ আর পাশের পড়ে থাকা স্তুপ দেখে বুঝতে পারলাম আমি আমাদের বাসার ছাদে আছি এখন। আমার পাশে এক ভয়ঙ্কর সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। সেই মেয়ে খুব শক্ত করে আমার হাত ধরে রেখেছে আর ক্রমশই আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটার গায়েও অনেক সুন্দর একটা সাদা কাপড় দেখলাম। চাঁদের আলোতেও সেই কাপড় ঝলমল করছিলো।

আমার বারংবার মনে হচ্ছিল যে এটা বাস্তবে ঘটা সম্ভব না। পুরো ব্যাপারটাই কল্পনা। আমার ভয়ঙ্কর কোনও দুঃস্বপ্ন। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু গলা দিয়ে কোনও শব্দ বের হল না। আমি বারবার তার হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। পারলাম না। আমার সব চেষ্টা বিফলে গেলো। মেয়েটা সাঁড়াশির মত শক্ত করে আমার হাতটা ধরে রাখল।

আমার হটাত মনে হল, আমার মাথায় কিছু একটা বসে পড়ছে। খুব ভারি। আমার গায়ে প্রবলভাবে কোনও কিছুর চাপ অনুভব করতে পারলাম। শেষবারের মত তাকিয়ে মেয়েটার মুখটা চোখে পড়লো। এরপর আর কিছুই মনে নেই। আমি জ্ঞান হারাই।

সকালে চোখ খুলে দেখি আমি হসপিটালে। আমার মা আমার পাশে বসে কাঁদছে। দেখলাম আমার আর অনেক আত্মীয়রাও আছে সেখানে। সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠার স্পষ্ট দেখতে পেলাম। দেখলাম আমার ছোট চাচা, যিনি ইংল্যান্ডে থাকেন, তিনিও চলে এসেছেন। হাসপাতালে আমাকে কেউই কিছু বলল না।

২ দিন পর আমাকে বাসায় নিয়ে আসা হল। এরপর জানতে পারলাম, আমি একটানা ৬ দিন অজ্ঞান ছিলাম। সেদিন সকালে আম্মু আমার রুমে গিয়ে আমাকে পায়নি। তিনি দেখেন রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো। এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখা যায় আমি সেখানে নেই, কিন্তু বিছানায় কিছু রক্ত পড়ে আছে। একদম তাজা রক্ত। সেদিন সাড়া বাড়ি খুঁজাখুঁজির পর আমাকে পাওয়া যায় ছাদে, সিঁড়ির পাশে পড়ে ছিলাম আমি।

আমাকে এরপর অনেক কবিরাজের কাছে নেয়া হয়েছে। সবাই বলেছেন যে, এটা একটা পরী ছিল। আমরা এখন বাসাবোতে থাকি। আমি সুস্থ আছি আল্লাহর রহমতে। কিন্তু এখনও মাঝে মাঝে সেই রাতের কথা মনে পড়ে। আঁতকে উঠি। সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি তাড়া করে ফেরে আমাকে।

জাদুকর ও ডরোথি

জ্বীনের বাদশা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *