মেকুর (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-এক)

[ আমার সাথে একজন মেকুরের দেখা হয়েছিল।
জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় থাকাকালীন তার সাথে বেশ হৃদ্যতাও হয়েছিল। তিনিও কথায় কথায় আমাকে তার জীবন নিয়ে গল্পাকারে কিছু লিখতে বলেছিলেন। জীবিকার ধান্দায় এতো ব্যস্ত থাকতে হয়েছে যে, চাইলেও সময় করে উঠতে পারি নাই। তাই এবার জোর করেই লিখতে বসে গেলাম। আগেও লিখেছিলাম। তবে এবারে পর্বাকারে একটু অন্য ভাবে এই ব্লগে পোষ্ট করছি। আশাকরি পাঠক শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন। শুরুতে একটু এলোমেলো লাগলেও শেষে ঠিকই ভালো কিছু থাকবে আশাকরি। মেকুরেরা এমনিতেই দুর্বোধ্য, কিন্তু খুবই সহজ জিবনধারণ করে। আর জটিল জীবনে অভ্যস্তরা তাই এদেরকে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।

মেকুর সম্পর্কে কিছু বলা দরকার।
মেকুর হলো একজন মানুষ যে তার ভিতরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে সকল মানবীয় ভালো গুন আনার জন্য ভিতরে ভিতরে চেষ্টা করে থাকে। একই সাথে সকল খারাপ গুনকে বিসর্জন দেবার সাধনা করে। এক নীরব অভ্যন্তরীন বিপ্লব ঘটতে থাকে তার ভিতরে।
তো গল্প শুরু করলামঃ- ]

১.

প্রতিদিনের মত অফিসে সময় পার করছি।
পিওন এসে খবর দিলো, একটা পার্শেল এসেছে আমার নামে।
‘কোথা থেকে?’
‘স্যার, যে পাঠাইছে তার নাম লেখা নাই। শুধু লিখা আছে ‘মেকুর’।
‘ঠিক আছে, নিয়ে এসো’।

কুরিয়ারের ফর্মালিটিজ শেষ করে খুলে দেখি একটা ডায়েরী।
বেশ পুরনো।
কেমন যেনো অতীতের গন্ধ মাখানো। আমার নানা বাড়ীর দেয়ালের সাথে লাগোয়া বুকসেলফ খুললে এই গন্ধ পেতাম। কাছারী ঘরের উপরে মাচার ভিতর রঙ্গীন মার্বেল খোজার সময় এলোমেলো বোচকা গুলো থেকেও এই ঘ্রান পেয়েছি কত! একটা ডায়েরী এসেছে আমার নামে। কোনো প্রেরকের নাম নাই। চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা। পরের ডায়েরী খোলা মানে একান্ত নিজস্ব সময়ে অপরের বেডরুমে ঢুকে উকি মারার মত ব্যাপার। তবে যেহেতু আমার নামে পাঠিয়েছে, আমি খুললে কো্নো দোষ হবে না।

ডায়েরিতে কা্রো নাম বা মালিকের কোনো ইনফরমেশন নাই। প্রথম পাতায় শুধু বড় করে লেখা আছে,
“একজন কুলাঙ্গারের দিনপঞ্জী”। আরো কিছু কথা আছে। সেগুলো পড়া শুরু করলাম। বুঝলাম এটা তিনিই পাঠিয়েছেন। আমার পরিচিত সেই মেকুর।

” আমি একজন কুলাঙ্গার।
তবে আমাকে একজন ‘কুলাঙ্গার’ হতে গিয়ে কত ত্যাগ ও কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তা কেউ কল্পনা ও করতে পারবে না। এ জন্য যা কেউ কল্পনা ও করতে সক্ষম না, সেটা নিয়ে প্যাচাল না পারাই ভালো মনে করছি। তবে এই দিনপঞ্জীতে আমি আমার কুলাঙ্গার জীবনের কথা উল্লেখ করেছি। আমার অভিজ্ঞতা আমি এখানে শেয়ার করলাম শুধুমাত্র নিজের হৃদয়ের জমাট বাঁধা কিছু লাভাকে শীতল করতে। ”
এর পরে তার স্বাক্ষরের যায়গায় ‘মেকুর’ লেখা ।
তারিখ দেয়া ১৭-০৮-২০০৬ ইং।

আমি অতীতের গন্ধ পাবার আশায় পাতা উল্টালাম।
ডিজিটাল ক্যামেরার জুমের মতো দূর অতীত এক নিমিষে আমার কাছে চলে এলো।
আমি হারিয়ে গেলাম বাদামী-কালো অক্ষরের ভিতর।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!