স্পেনে তখন হাকামের রাজত্ব। একদিন রাজধানীর নিকটবর্তী একটি স্থান তাঁকে আকৃষ্ট করলো। সেখানে তাঁর জন্য একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণের পরিকল্পনা তিনি ঠিক করে ফেললেন। স্থানটি ছিল এক বৃদ্ধার। বৃদ্ধা সেই স্থানের উপর একটি কুটিরে বাস করতেন। হাকাম স্থানটি উচিৎ মূল্যে খরিদ করার প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু বৃদ্ধা রাজী হলেন না। তিনি দ্বিগুণ মূল্য দিতে চাইলেন, তবুও বৃদ্ধা সম্মত হলেন না।
ক্রুদ্ধ হয়ে হাকাম জোর করে স্থানটি বৃদ্ধার নিকট থেকে কেড়ে নিলেন। অল্প কালের মধ্যেই সে স্থানে বিরাট সুন্দর প্রাসাদ নির্মিত হলো, সম্মুখে তার একটি সুন্দর উদ্যান। বৃদ্ধা কিন্তু নিরুৎসাহিত হলেন না। তিনি সোজা কাজীর কাছে হাকামের বিরুদ্ধে নালিশ করলেন। কিছুকাল পর হাকাম কাজী সাহেবকে দাওয়াত করলেন তাঁর নতুন প্রাসাদ ও বাগান দেখতে।
নির্দিষ্ট সময়ে কাজী একটি গাধা ও কয়েকটি শূন্য থলে নিয়ে উপস্থিত হলেন। বাদশাহ একটু বিস্মিত হলেন। সঙ্গে সঙ্গে একটু কৌতুকও বোধ করলেন। কাজী বাদশাহর কাছে বিনীত নিবেদন জানিয়ে বললেন, “জাঁহাপনা, আমাকে এই বাগান থেকে কয়েক বস্তা মাটি দিতে হুকুম করুন।” এই অদ্ভুত অনুরোধে বাদশাহ তৎক্ষণাৎ রাজী হলেন। কিন্তু মাটি দিয়ে কাজী কি করবেন, তিনি তা আর ভেবে পান না।
কাজী বস্তাগুলো মাটি দিয়ে ভর্তি করলেন, তারপর বাদশাহকে আরও বিস্মিত করে তিনি বস্তাগুলো গাধার পিঠে তুলে দিতে তাকে সাহায্য করতে অনুরোধ করলেন। বাদশাহর কৌতুহল চরমে উঠলো। তিনি তাতেও রাজী হয়ে সানন্দে বস্তাগুলো তুলে দিতে অগ্রসর হলেন। কিন্তু বস্তাগুলো এত ভারী ছিল যে, বাদশাহ শত চেষ্টা করে তার একটিও নড়াতে পারলেন না।
কাজী বাদশাহর দিকে ফিরে চেয়ে বললেন, “আপনি এই সামান্য কয়েক তাল মাটি তুলতে পারলেন না। কিন্তু মহা বিচারের দিন আপনি কি করে গোটা বাগানটাই কাঁধে করে আল্লাহর আদেশে বৃদ্ধা ফিরিয়ে দেবেন? কারণ, স্থানটি আপনি বৃদ্ধার নিকট থেকে অন্যায়ভাবে দখল করেছেন।” বাদশাহ লজ্জিত হলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধাকে ডেকে পাঠালেন। বৃদ্ধার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তিনি বাগান ও প্রাসাদ সমেত স্থানটি বৃদ্ধাকে দিয়ে দিলেন।
শাসনের কর্তৃত্বভার, বড় গুরুদায়িত্ব সে। তার ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য জবাবদিহি করতে হবে মহাবিচারের দিন। আল্লাহর কাছে তার হিসেব নিকেশ দিতে হবে। তাই খলীফাদের, মুসলিম বাদশাহর চিন্তার শেষ নেই, ব্যাকুলতার সীমা নেই। আবার কেউ হয়তো আত্মবিস্মৃত হয়ে ক্ষণিকের জন্য কর্তব্যের কথা ভুলে যান, তখন রূঢ় আঘাত দিয়ে, কৌশল ও তৎপরতার সঙ্গে তার সম্বিত ফিরিয়ে আনতে হয়।
খলীফা মানুষ তো। ভুল তাই হতে পারে, কিন্তু ভুলের জন্য ভুগতে হয় জনগণকে, দুর্বলকে। তাই দেশের উজীর, দেশের কাজী, খলীফার প্রতিটি কার্যে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখেন, নির্মমভাবে আঘাত দিতে, অপ্রিয় ও রূঢ় সত্যকথা বলতে একটুও ইতস্ততঃ বোধ করেন না।