ভূত।। সংগৃহীত গল্প – ০৪ ।।

আমি ভূত বিশ্বাস করতামনা, এখন করি। জীবনের কয়েকটি ঘটনা আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছে যে , “আমি যা অবিশ্বাস করি, করলেই তা মিথ্যা হয়ে যায়না। ” যাই হোক আসল ঘটনায় আসি।
সময়টা হলো ২০০০সাল। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। উল্লেখ করতেই হচ্ছে ১৯৯৮ সালের ২১শে ফেবঃ তারিখে আমাদের পরিবার একটি ভয়াবহ রোড একসিডেন্টে পড়ে।
আমার একমাত্র বোনটি এবং আমার নানী, যিনি আমাকে সবথকে বেশি ভালোবাসতেন, এই দুর্ঘটনায় মারা যায়।
মা খুব ভুগে ভুগে বেচে আছেন। কিন্তু তিনি স্মৃতি হারিয়ে একেবারে শিশু হয়ে যান। আমাকে গাইড করার কেউ ছিলোনা।
লেখা-পড়ায় বরাবরের মতই ভালো করছিলাম, তাই বাবাও খুব বেশি ভাবেননি। আস্তে আস্তে কিছু বাম দলের সাথে জানাশোনা হয়ে যায়।
কিছুদিনের মধ্যেই সাম্যবাদের তাত্বিক লাইনটা বেশ ভালোভাবেই ধরে ফেলি, এবং পুরোপুরি নাস্তিক হয়ে যাই!! তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি।
এত কথা এজন্য বললাম যে এই ঘটনাটি ঘটেছিল যখন আমি পুরোপুরি নাস্তিক। এবং এর পরেও আরও ৮বছর নাস্তিকই ছিলাম।
এবার মুল কাহিনিতে আসি: একসিডেন্টের পরে নানাকে আবার বিয়ে দেওয়া হয়।
নতুন নানী খুবই ভালো মানুষ, তেমনই তার পরিবারের মানুষেরা। নতুন নানীর বাপের বাড়ি ফরিদপুরের তাম্বুলখানা গ্রামে।
এই গ্রামের যে বড় বিলটি আছে তার মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপের মত আট-দশটা করে বাড়ি।
যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছোত ছোট নৌকা। প্রায় সব পরিবারেই একটা করে নৌকা আছে।
ইলেকট্রিসিটি পৌছানোর প্রশ্নই ওঠেনা। আমরা একবার খুব আয়োজন করে সেখানে বেড়াতে গেলাম।
ফরিদপুরের মানুষের রান্নার হাত খুবই ভালো। দুপুরে আয়েশ করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে উঠলাম।
এরপর নৌকো নিয়ে বিলে শাপলা তুলে বেড়ালাম। সন্ধার পরে দেখি নানীর ছোট ভাই, জাহিদ ভাই নৌকা নিয়ে মাছ মারতে চলেছেন।
আমিও যাব সিদ্ধান্ত হলো। আমরা তিনজন, আমি, জাহিদ ভাই ও তার বন্ধু মেহেদি ভাই।
সরন্জাম নেয়া হলো জাল, কোঁচ, হারিকেন এবং পর্যাপ্ত পরিমানে গাঁজা ও সিগারেট। আমিও তখন সিগারেট খাওয়া শিখে গেছি।
বুঝতে পারছিলাম আজ ভোম শংকরেও হাতে খরি হয়ে যাবে, খুব রোমান্ঞ্চ হচ্ছিলো। রাত আটটা।
ঐ গ্রামের জন্য মাঝ রাত। আমরা রওনা হলাম। মেহেদি ভাই গাঁজা বানাতে বসে গেলেন, জাহিদ ভাই দাঁড় টেনে মাঝ বিলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
অর্ধেক চাঁদ আছে আকাশে, আমি নৌকোর মাঝখানে বাবু হয়ে বসে আকাশ দেখছি, আর সিগারেট টানছি।
অপুর্ব লাগছে প্রকৃতি!! অর্ধেক চাঁদও শহরের পুর্ণিমাকে হার মানায়। গাঁজা পর্বে আমাকে ডাকা হলোনা।
কিছুটা মন খারাপ হলো। এরপর শুরু হলো মাছ ধরা। আমি বসে আছি চালক মেহেদি ভাইয়ের কাছাকাছি। জাহিদ ভাই জাল মারছেন ।
মাছ খারাপ উঠছেনা। একটু দুরে বেশি মাছ পাওয়ার আশায় আমরা এগিয়ে চললাম। যতই এগুই ততই মাছের পরিমান বেড়ে যায়।
আস্তে আস্তে লোকালয় থেকে বেশ দুরে চলে এলাম। প্রচুর মাছ উঠছে। মাছ গুলো নৌকার খোড়লে জমা করা হচ্ছে।
আমি নিষ্কৃয় বসে আছি। হঠাত ঠান্ডা বাতাস উঠলো, গা হীম করা অনুভুতি।
এর পরেই হঠাত নৌকার চারপাশ থেকে কেমন মুট-মুট শব্দ হতে শুরু করলো। জাহিদ ভাইদের কোন বিকার দেখলামনা।
একমনে মাছ ধরছেন। কিন্তু শব্দটা ক্রমেই অসহ্য উঠছে।
আমি একবার বলেই ফেললাম “ভাই, কেমন একটা কুট-মুট শব্দ পাচ্ছি।” জাহিদ ভাই অভয় দিয়ে বললেন “নৌকার খোলে মাছ লাফানোর জন্য এমন শব্দ” আমি ভাবলাম “তাই হবে”!!! তবে একটু ভয় ভয় হটে লাগলো। হারিকেনটা একটু উস্কে দিলাম।
জাহিদ ভাই বেশ কিছু মাছ তুলে মেহেদি ভাইকে বললেন ” এবার তুই”। বলে হারিকেন নিয়ে খোড়লের মাছ দেখতে গেলেন , এবং চিতকার করে লাফিয়ে সরে গেলেন।
আমি লাফ দিয়ে উঠে সরতে সরতে বললাম “ভাই কি হয়েছে”।
তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন “পেত্নি, মাছ খাচ্ছে!!” আমি একটু উকি দিয়ে তাকালাম খোড়লের ভেতর। যা দেখলাম তাতে গা শিউড়ে উঠলো।
একটি মাছেরও শরির নেই, শুধু অসংখ্য মাথা পড়ে আছে, আর রক্ত মেশানো পানি!! মেহেদি ভাই বললেন “এখান থেকে সরে যেতে হবে!” প্রানপনে দাঁড় টানা শুরু হলো, এবার শব্দটা কুট-কুট থেকে অনেক বেড়ে গিয়ে মট-মটের মত লাগছে।
জাহিদ ভাই চিতকার করে বললেন “ওরা নৌকা ভাঙতে চাইছে….” বলেই আরও জোরে দাড় বাইতে থাকলেন, কিন্তু অদ্ভুত কারনে আমরা খুব একটা এগুতে পারছিনা।
আমার মনে ঝড় বইছে! এটা কিভাবে সম্ভব?? প্রানান্তকর চেষ্টা চলছে বাড়িতে পৌছানোর, শব্দ বেড়েই চলেছে। আমি দুজনের গা ঘেষে বসে আছি।
দোয়া দরুদে বিশ্বাস করতামনা বলেই পড়ছিলামনা। কিন্তু ভয়াবহ ভয় জড়িয়ে ফেলেছিলো আমাকে।
যাহোক শেষ মেশ জাহিদ ভাইদের বাড়ির দ্বীপমতো জায়গাটায় পৌছতে পারলাম।
নৌকো পাড়ে ঠেকতেই ঝপঝপ করে লাফিয়ে নামলাম। নৌকাটা কোন রকম বেধে রেখেই দে দৌড়! এক দৌড়ে বাসা। জাহিদ ভাইয়ের চিল্লাচিল্লিতে সবাই উঠে এল।
কাহিনি শুনে সবাই হতবাক। পরে শুনেছিলাম। বিল এলাকায় মাছ ধরতে গিয়ে অনেকেই এই বিপদে পড়েছেন।
অনেকের নৌকা উল্টে দেয়া হয়েছে। কে এমন করে মাছ খায়? ওরা কারা, যাদের বলা হয় মাছ খেকো পেত্নী? কে উল্টে দেয় নৌকা? কে? কোথায় ওরা থাকে? আপনাদের কি মনে হয়?

রসগোল্লার হাঁড়ি

►মৌলবি আবদুস সোবহান◄ভূত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *