অচেনা আরোহী

বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে ২৫০/৩০০ গজ দক্ষিণে রাস্তার পূর্ব পাশে আমার শ্বশুরের এবং আরেকটু দক্ষিণে গিয়ে রাস্তার পশ্চিমে চাচা শ্বশুরের বাসা।। চাচা শ্বশুরের শালা তার বাসায় থেকে পড়াশোনা করত।।

২০০৫ সনের মার্চ বা এপ্রিল মাসে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম।। তখন এক রাতে ১১টার দিকে কাকি শ্বাশুরী ফোনে বলে তার ভাইয়ের হঠাৎ প্রচন্ড বমি শুরু হয়েছে।। আমার ডাক্তার স্ত্রী যেন দ্রুত সেখানে যায়।। আমি ওকে সেই বাসার গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসতে থাকি।।

হাইওয়ে পার হওয়ার আগে উঃ দঃ উভয় দিক দেখে রাস্তার মাঝ বরাবর আসা মাত্র পিছন থেকে আমার নাম ধরে একটা ডাক শুনতে পাই।। কন্ঠটা ঠিক আমার স্ত্রীর মতো।। পিছনে ফিরে দেখি গেট পর্যন্ত কেউ নেই।। কিছুক্ষণ পিছনে তাকিয়ে থেকে সামনে এগোতে গেলে আবার ডাক শুনতে পাই।। পিছনে তাকিয়ে এবারও কাউকে না দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।।

চোখ ধাঁধানো আলো দেখে সামনে তাকিয়ে দেখি একটা বাস দ্রুত গতিতে আমার দিকে ছুটে আসছে।। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রাস্তার কিনারে পৌঁছুতে না পারলে বাসটা আমাকে চাপা দিবে।। জীবন বাঁচানোর তাগিদে যখন রাস্তার কিনারে যাবো দেখি একটা সাইকেল খুব ধীর গতিতে রাস্তার পাশ দিয়ে আমার দিকে আসছে।।

সাইকেল চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে বাসের নিচে পড়তে হবে আর সামনে এগোলে সাইকেলের নিচে পড়তে হবে।। সাইকেলের নিচে পড়লে প্রাণে বাঁচা যাবে তাই সামনেই এগোলাম।। কিভাবে যে সাইকেলটার সামনে দিয়ে রাস্তার কিনারে পৌঁছে গেলাম আমি জানিনা।। এর মধ্যে বাসটা চলে গেল।।

সাইকেলটাও ধীর গতিতে যাচ্ছে।। যার জন্য জীবনটা খোয়াাতে যাচ্ছিলাম সেই সাইকেলওয়ালার দিকে রাগে ক্ষোভে তাকিয়ে দেখি সে একটা কালো চাদর মুড়িয়ে দিয়েছে।। এত গরমে চাদর মুড়িয়ে দেওয়া লোক, নাম ধরে ডাকা বিষয়টা উপলব্ধি করে একছুটে শ্বশুরের বাসায় ঢুকে পড়ি।।

কলেজ পড়ুয়া শালাটা আমার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে কারণ জানতে চাইলে সব খুলে বলি।। স্থানটার কথা শুনে ও জানায়, ওই স্থানে আগে তিনজন বাস চাপায় মারা পড়েছিল।। সর্বশেষ যে মারা যায় সে আমার শ্বশুরবাড়ির লোক।। সে এক্সিডেন্টের কয়েক ঘণ্টা পরে মারা গিয়েছিল।। তাকে নাকি কে নাম ধরে ডেকেছিল।।

কে ডাকে তা দেখতে গিয়েই সে বাস চাপা পড়ে।। সব শুনে আমি থ হয়ে গিয়েছিলাম।।

বানভাসি গ্রাম

একটি বাড়ি এবং কিছুকথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *