কফির আদিকথা ..

তরতাজা একটা সকাল শুরু করতে কিংবা কর্মব্যস্ততার মাঝে ক্লান্তি দূর করতে কফির তুলনা মেলা ভার।আসলে কফি কেবলই যে পানীয় তা নয়।কফি এখন একটা প্রতিষ্ঠিত শিল্পের নাম।প্রতিদিন ১.৬ বিলিয়ন কাপ কফি সারা পৃথিবীজুড়ে পান করা হয় যা কিনা তিন শতাধিক অলিম্পিক সাইজড সুইমিংপুল[৫০ মিটার দৈর্ঘ্য,২৫ মিটার প্রস্থ ও ২ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট সুইমিংপুল] ভর্তি করতে পারবে! তেলের পরে কফিই হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম কমোডিটি বেজড প্রোডাক্ট!কিন্তু এই কফির যাত্রাই বা শুরু হল কিভাবে?

১২০০ বছর আগে খালিদ নামে এক আরব ছাগল পালকের হাত ধরেই এর সূচনা।সে প্রতিদিন ছাগল চড়াতে নিয়ে গিয়ে খেয়াল করলো তার ছাগল গুলো ইথিওপিয়ান পাহাড়ের ঢালে জামের মত বিশেষ ধরনের এক ফল খেয়ে বেশ চনমনে ও উজ্জীবিত হয়ে উঠে।খালেদ তখনও জানতো না পৃথিবীকে সে কি উপহার দিতে যাচ্ছে!এই বিশেষ ফল কাঁচা খাওয়ার বদলে ফুটিয়ে খেতে শুরু করলো সে।এবং নাম দিল al qahwa.
আস্তে আস্তে সেই সময়ের সূফীদের মাঝেও এই al qahwa জনপ্রিয় হয়ে উঠল।রাত জেগে ইবাদত বা জিকর করার জন্য এই পানীয়ের চাইতে ভালো কিছু ছিল না।হজযাত্রী,পর্যটক,মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে চারদিকে ছড়াতে শুরু করলো কফি।১৫ শতকের শেষ দিকে এই পানীয় পৌঁছে গেল মক্কা ও তুরস্কতে।কায়রোতে পৌঁছাল ১৬ শতকে এবং বেশ ভালো রকমের জনপ্রিয়তা পেল এই পানীয়।

১৬৫০ সালে Pasqua rosee নামের এক তুর্কি ব্যবসায়ী এই পানীয়কে প্রথমবারের মত ব্রিটেনে নিয়ে এলেন।বিক্রি করলেন লম্বার্ড স্ট্রিটে জর্জইয়ার্ড নামের এক ক্যাফেতে।তারপর কেবলই ইতিহাস।মাত্র ৫০ বছরের মাথায় ১৭০০ সালে কেবল লন্ডনেই ৫০০ এবং সারা ইংল্যান্ডে প্রায় ৩০০০ কফিহাউজ গড়ে উঠে।Lloyd’s of London নামে যে ব্রিটেনভিত্তিক খ্যাতনামা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি রয়েছে,তা আদিতে ‘Edward Lloyds Coffee Shop’ name একটি কফিশপ ছিল।এইসব কফি হাউজগুলো ‘পেনি ইউনিভার্সিটি’ নামেও পরিচিত ছিল।এক পেনি অর্থাৎ এক পাউন্ডের ২৪০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ দাম দিয়ে আপনি দিনভর বিখ্যাত সব চিন্তাবিদদের ভাবনা শুনতে এবং তাঁদের সাথে কথাও বলতে পারবেন।

প্রথমদিকে মুসলিমরা যেভাবে কফি পান করত,ইউরোপিয়ানরা ও সেভাবেই কফি প্রস্তুত করত।ফুটানো পানির সাথে কফি পাউডার ও চিনি।১৬৮৩ সালে এক নতুন উপায়ে কফি প্রস্তুতপ্রণালী আবিস্কার হল।এটি বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠল।
Cappuccino Coffee আসলে Marco d’Aviano নামে Capuchin সন্ন্যাসী সংঘের একজন যাজকের দ্বারা অনুপ্রাণিত।এই যাজক ১৬৮৩ সালে ভিয়েনা অবরোধ চলাকালে তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিলেন। তুর্কিদের হটে যাওয়ার পরে তাদের ফেলে যাওয়া টার্কিশ কফির মালামাল থেকেই ভিয়েনাবাসী নতুন স্বাদের কফি প্রস্তুত করলেন।এর স্বাদকে শক্তিশালী করতে সাথে মিশানো হল ক্রিম ও মধু।ফলে কফির রঙ বদলে বাদামী বর্ণ ধারণ করল যা কিনা দেখতে Capuchin সন্ন্যাসীদের পোশাকের রঙের মত। তাই Marco d’Aviano কে স্মরণ করতেই ভিয়েনাবাসী এর নাম রাখে Cappuccino(কাপ্পুচ্চিনো) কফি।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

দুঃখিত!