হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর জন্মের পূর্ব ঘটনা-শেষ পর্ব
জ্যোতিষীর কথা শুনে নমরুদ খুব বিচলিত হয়ে পড়ল। জ্যোতিষীদেরকে নমরুদ জিজ্ঞেস করল এর প্রতিকার কি আছে? জ্যোতিষীরা বলল, জাহাপনা এর প্রতিকার আপনি ভালো জানেন। আমরা প্রতিকারের কোন পথ দেখছি না। তখন নমরুদ বলল, এখনই রাজ্যময় ঘোষণা করে দাও আজ থেকে এক সপ্তাহ কোন মানুষ যেন স্ত্রী সহবাস না করে। এ আদেরশ অমান্যকারীকে চরম শাস্তি দেয়া হবে। নমরুদের নির্দেশের সাথে সাথে সারাদেশের সর্বসাধারণকে আদেশটি জানিয়ে দেয়া হলো।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর পিতা তারিক নমরুদের রাত্রিকালীন পাহারাদারীর চাকরি করতেন। তিনি নমরুদের ঘষোণা শোনার পরে কামলালসায় অসহ্য হয়ে উঠলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর মাতাও অনুরূপ যৌন লিপ্সায় অধির হয়ে উঠেন। এমতাবস্থায় গভীর রাত্রে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর মাতা রাজদরবারে চলে আসেন এবং নমরুদের মহলে প্রবেশ করেন। সেখানে সে তারিককে তরবারী ও মশাল নিয়ে পাহারারত অবস্থায় দেখতে পান। দারোয়ান ও অন্যান্য পাহারাদারেরা সকলেই ঘুমিয়েছিল। খোদ নমরুদ ঘুমে বিভোর ছিল। এমন সময় তারিক নিজ স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। হঠাৎ কে যেন তাঁর হাতের তরবারী ও মশাল ছিনিয়ে নিয়ে বলল যাও স্ত্রীর সাথে মিলন করে আস। তারিক তখন তড়িত গতিতে নিজ শয়ন কক্ষে গেলেন। পিছনে পিছনে তাঁর স্ত্রীও কক্ষে প্রবেশ করলেন। একন্ত নিরবতার মাঝে তাঁদের উভয়ের মিলন ঘটল। এ মিলন ক্ষণে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর নূর তারিকের পৃষ্ঠ হতে তাঁর মাতার রেহেমে পৌঁছাল। পরক্ষণে তারিক স্ত্রীকে সতর্কতার সাথে বাসায় ফিরে যেতে বললেন এবং নিজে নমরুদের মহলে পৌঁছে দেখেন তাঁর বদলী লোকটি মশাল ও তরবারী নিয়ে সেখানে দণ্ডায়মান রয়েছে। তারিককে দেখা মত্র মশাল ও তরবারী তাঁর হাতে দিয়ে যে বিদায় হল। সকল কাজের পিছনে আল্লাহ তা’য়ালার কুদরত ছিল সদা সক্রিয়। যেভাবে যা তিনি সম্পন্ন করতে ইচ্ছা করেন সেভাবেই তা সম্পন্ন হয়।
নমরুদ জ্যোতিষীদের ভবিষ্যৎবাণী শোনার পর হতে সর্বদা দিশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় কাটাত। তিন দিন অতিবাহিত হবার পরে নমরুদ জ্যোতিষীরা বলল, হে মহান প্রভু! আপনার কঠোর ঘোষণায় তেমন ফল উদয় হয় নি। সে অসুভ শক্তি গত পরশু দিন রাত্রে পিতার পৃষ্ঠদেশ হতে মাতার রেহেমে চলে গেছে।
নমরুদ জ্যোতিষীদের কথা শুনে রাজ্যময় ঘোষণা দিল আগামী এক বছর পর্যন্ত আমার রাজ্যে যত সমতান ভূমিষ্ঠ হবে তাদেরকে আতুর ঘরেই মেরে ফেলতে হবে। এবার শুধু ঘোষণা নয়। দেশের সর্বত্র গুপ্তচর, পাহারাদার ও সৈন্য মোতায়েন করে দিল। যাতে কোন গর্ভবতী তার সন্তানকে জীবিত রাখতে না পারে। দেশব্যাপী অভিযান আরম্ভ হল। দৈনিক শতশত সন্তানকে হত্যা করা শুরু হল।
নমরুদ নিজ খোদায়ী দাবি টিকিয়ে রাখার নিমিত্ত দুর্দান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল। দেশের অধিকাংশ মানুষ আকাশের খোদার উপর বিশ্বাসী ছিল। তা দেখে নমরুদ একদা ঘোষণা দিল আমি আকাশের খোদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাঁকে হত্যা করব। এ মর্মে সে একপাল পাহাড়ি শকুন এনে ওগুলোকে শিক্ষা দিতে লাগল। ওরা যেন নমরুদের সওয়ারী বহন করে আকাশে নিয়ে যেতে পারে এবং সেখানে বসে সে আকাশের খোদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। বাস্তবিকই শিক্ষাপ্রাপ্ত শকুন দ্বারা একদিন সে একটি পালকিতে চড়ে শুন্যে উঠে গেল। কয়েক ঘন্টা পরে সে রাজ দরবারে নেমে এসে বলল আকাশের খোদাকে আমি হত্যা করে এসেছি। এই দেখ আমার নিক্ষিপ্ত তীরের মাথায় রক্ত মাখা। এ কথা বলে একটি রক্তমাখা তীর প্রদর্শনের জন্য সকলের সম্মুখে রেখে দিল। দেশের সকল মানুষ তার অনুগত থাকতে বাধ্য। না হয় জীবন রক্ষা পাবে না ভেবে মানুষেরা রাজার কথায় “জি হুজুর” জবাব দিয়ে ক্ষান্ত থাকত।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) –এর জন্মের পূর্ব ঘটনা-প্রথম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন