চাই…ফেরিওয়ালা চাই…

চাই…ফেরিওয়ালা চাই… লাগবে মাজি? আরশোলা মশা মারার উষুধ… এক পুরিয়া… পাঁচ টাকা… লাগবে? উকুন মারার ইঁদুর মারার উষুধ… এক সাদা দাড়িওয়ালা বুড়ো, টুপি পড়ে কাঠের একটা বাস্ক গলায় ঝুলিয়ে পুরিয়া বিক্রি করত আর হাঁক দিত। ভাগ্যিস আমার মাথায় কখনও উকুন হয়নি, কিন্তু আমাদের বাড়ির বেশ কয়েকটা ইঁদুরের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠেছিল ওই দাদুর পুরিয়া। কিন্তু এটা তো উপন্যাসের একটা অধ্যায় মাত্র। এই রকম অনেক অধ্যায়ে আমরা শরিক হয়েছি। এই রকম উদাহরণ আমাদের বাবা মা দাদু দিদার ঝুলিতে একটু বেশী আছে, আর আমাদের মেমরি চিপে একটু কম, আর আমাদের ছেলে মেয়েদের মেমরি হার্ড ড্রাইভ-এ আরেকটু কম থাকবে।
বাড়ির সামনে দিয়ে একজন লম্বা কালো লোক ঘাড়ে একটা বড় ঝোলা ঝুলিয়ে আসত। আমি তখন রাক্ষস খোক্ষস ভুত পেত্নী রাজা রানীতে বিশ্বাসী। তাই আমার মা আমাকে ভয় দেখিয়ে একবার বলেছিল, আমি যদি বেশী দুষ্টুমি করি তাহলে ওই লোকটা আমায় তার ওই নোংরা কালো ঝুলিতে পুরে নিয়ে যাবে। সে দুষ্টু বাচ্চাদের তার ঝুলি তে বন্ধ করে নিয়ে যায়। কিন্তু আমার বিশ্বাস যখন পরীদের কাহিনি ছেড়ে উড়ে এসে আসল জীবনে এসে বসল তখন আমার মানসচক্ষে ধরা পড়ল যে ওই কাঁধে ঝোলানো কালো বস্তায় কোন বাচ্চা না, থাকে খবরের কাগজের দিস্তা বোঝাই যা সে প্রত্যেক বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে। • বাঁশি শুনে আর রহিতে পারি না- অনেকেই হয়তো নিজেদের বাড়ির সামনে এক জোড়া লোক, এক জনের পিঠে বোঝাই থাকে একটা মোটা চটের বস্তা, আর তার এক হাতে থাকে একটা কাঠের মাঝারি ধরনের লাঠি।
তার সঙ্গীর হাতে থাকে এক অদ্ভুত ধরনের বাদ্যযন্ত্র। আর সেই অদ্ভুত ধরনের যন্ত্র থেকে অদ্ভুত ধরনের আওয়াজ বেরোয়। দেখে মনে হয় গিটারের আদিমতম রূপ হলে সেইটা ঠিক এই বাজনাটার মতোই দেখতে হত। আমি ভাবতাম এরা হয়তো আমাদের গান শোনাতে আসে। কিন্তু পিঠে বোঝাই করা ওই বস্তাটার রহস্যটা আমি ঠাউর করতে পারতাম না। মগজ টাকে অনেক টা খাটানোর পর তাদের আসল কাজ ধরা পড়ল। তারা কোন মার্জিত যন্ত্রবাদক নয়। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলো ধোনাই করে। বালিশ তোশক বানিয়ে দেয়। এইবার বস্তাটার মাহাত্যটা তো বুঝলাম কিন্তু বাজনা টার কাহিনীটা অধরাই রয়ে গেল। তবুও এখন ও অব্দি যখন সেই বাজনার আওয়াজ কানে এসে পড়ে, যতক্ষণ হয় তাকে মগজে ধরে রাখার চেষ্টা করি। • লাল নীল সবুজের মেলা বসেছে- ছোটবেলায় গরম কালের দিন গুলো কিসের জন্য মনে থাকে।
প্যাচপ্যাচে ঘাম মাখানো গরমের জন্য? টক মিষ্টি আমের স্বাদের জন্য? স্কুলের দিদিমনির বকার হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য? হয়তো হতে পারে কিন্তু তার আরেকটাসরঞ্জাম ছিল আমার গরমের ছুটি তে। শোলার বাক্সতে লাল নীল সবুজ হলুদ রঙ এর সরু প্যাকেট। গ্রীষ্মের গরমে সেটাই অমৃতের সমান ছিল। ঠং ঠং করে ঘন্টা বাজিয়ে আসত সেই বাক্সটা কাঁধে ঝুলিয়ে। তার ভেতরে থাকত মিষ্টি রঙিন জল জমিয়ে বানানো ‘পেপসি’। হাতের আঙুলের চেয়ে একটু বড় প্যাকেটে প্যাকেটে সুসজ্জিত থাকত বরফের ঢেলার উপরে। সেই মূল্যবান জিনিসটিকে পাওয়ার জন্য মায়ের দুপুরের ঘুম নাস্তানাবু দ করতাম। আজ সেই চলন হয়তো নেই। এখন আইসক্রিম শপে চকলেট সসের সাথে খেতে পছন্দ করে সবাই।
এই হল কিছু আমার দেখা ফেরিওয়ালা যারা হয়তো আমার জীবনযাত্রার অঙ্গ, যাদের এখন আর আশে পাশে দেখা যায় না। কিন্তু তারা এখনও আছে আমার মণিকোঠায় খুব সাবধানে। এখনও আছে ফেরিওয়ালা, ট্রামে বাসে রাস্তায় এমন কি বাড়ির সামনে। কিন্তু জঙ্গলে বাঘের মতো তাদের অস্তিত্ব এখন সঙ্কটজনক অবস্থায় ঠেকেছে। না না আমি রাস্তায় ব্যানার নিয়ে নামতে বলছি না তাদেরবাঁচানোর জন্য কিন্তু তাদের মনে রাখা টাও আমাদের দায়িত্ব।

বর্তুমুণ্ডা

অচেনা ভূত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *