হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা– পর্ব ৩
হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত রহিমা আর নবীকে ছেড়ে বিদায় গ্রহণ করার ন্যায় মানুষ নয়। তাই তিনি সর্বদা নবীর খেদমত ব্যস্ত থাকতেন। দিনের কিছু সময় গিয়ে মানুষের বাসায় ঝি-এর কাজ করে যা সামান্য উপার্জন করে আনতেন তা দ্বারা হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর পথ্য ও নিজের আহারের ব্যবস্থা করতেন। এ ভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে চলল। হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর শরীরের কীট কতক মরে যায় আবার কতক নতুন ভাবে জন্ম নেয়। কীটের সংখ্যা বাড়া ছাড়া কমে না।
তাঁর শরীরের সামান্য মাংস হাড্ডি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। একদিন কয়েকটি জীবিত কীট মাটিতে গড়িয়ে পড়ে যায়। তখন হযরত আইয়ুব (আঃ) স্ত্রী রহিমাকে ডেকে বললেন, রহিমা! মানুষ মাটির তৈরি। মানুষ মৃত্যুবরণ করার পরে তাঁর শরীরের হাড় মাংস পুনরায় মাটিতে পরিণত হবে। মাঝ খানে আল্লাহ্র কিছু পোকা যদি এ মাংস, রক্ত খেয়ে তৃপ্তি লাভ করে। তাতে আপত্তি কি? এতে অন্তত ওদেরকে খাবার দান করার পুণ্য অবশ্যই পাওয়া যাবে। অতএব যে পোকাগুলি গড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেছে ওগুলিকে উঠিয়ে আমার শরীরের উপর দিয়ে দাও। হযরত রহিমা স্বামীর আদেশ অনুসারে পোকাগুলো উঠিয়ে তাঁর শরীরের উপর দিয়ে দিলেন।
একদিন হযরত রহিমা গ্রামে গিয়ে কোন কাজ পেলেন না, তখন তিনি খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হলেন। তিনি স্বামীকে আজ কি খেতে দিবেন। তাই হন্যে হয়ে সারা গ্রাম ঘুরলেন কিন্তু কোথাও কোন ব্যবস্থা করতে পারলেন না। অবশেষে এক কাফের রমণীর নিকট গিয়ে বললেন, হে মহীয়সী! আপনি আমাকে আজকের জন্য একটি টাকা ধার দিন। আমি আগামী দিন এ ধার শোধ করব।
আমার স্বামী রোগাগ্রস্থ তাঁর আহারের কোন ব্যবস্থা নেই। অতএব আপনি একটি টাকা না দিলে আমি আমার স্বামীর জন্য খাবার নিয়ে যেতে পারব না। অতএব আপনি একটু দয়া করুন। মহিলা রহিমার কথা শুনে বলল, আমি কাউকে ধার দেই না। জীবনে অনেককে টাকা পয়সা দিয়েছি। কেউ আজ পর্যন্ত টাকা ফেরত নিয়ে এখানে আসে নাই। অতএব ভাওতাবাজী ছেড়ে সোজা পথ দেখ। হযরত রহিমা বললেন, তবে আমাকে কিছু কাজ দিন বিনিময়ে একটি টাকা দিবেন।
মহিলা বলল, আমার কোন কাজ নেই। তবে তুমি যদি একটি টাকা নিতে চাও তাহলে তোমার মাথার সুন্দর চুলগুলি আমাকে কেটে দিয়ে যাও। আমি ঐ গুলির বিনিময়ে তোমাকে টাকা দিতে পারি। হযরত রহিমা বললেন, আমি আমার মাথার চুল দিব না। যেহেতু আমার স্বামী বিছানা থেকে ওঠার সময় লাঠি ব্যবহার করতে সক্ষম নয়। কারণ তাঁর হাতের তালুতে কোন চামড়া নেই।
সে বিছানা থেকে উঠার সময় আমার মাথার চুল ধরে ওঠেন। অতএব চুল আপনাকে দিলে তিনি কি ধরে উঠবেন। তখন মহিলা বলল, তবে চুলের অর্ধেকটা দিয়ে দাও। রহিমা নিরুপায় দেখে অর্ধেক চুল কেটে দিতে রাজি হলেন। মেয়ে লোকটি তখন হযরত রহিমার অর্ধেক চুল গোড়া থেকে কেটে রাখল এবং বিনিময়ে তাঁকে একটি টাকা দিয়েছিল। হযরত রহিমা টাকা নিয়ে স্বামীর জন্য পথ্যাদি ও নিজের জন্য সামান্য খাবার কিনে নিয়ে গেলেন।
শয়তান এ সময় একজন দরবেশের বেশে হযরত আইয়ুব (আঃ)-এর কাছে এসে বলল, হুজুর! আপনি একজন নবী অথচ আপনার স্ত্রী চরিত্র ভাল না। সে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় চুরি করে ও অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করে। যার ফলশ্রুতিতে আজকে এক ঘটনার হাতে নাতে ধরা পড়ে এবং তাঁর মাথার চুল কেটে দেয়। আমরা আপনাকে নবী হিসেবে শ্রদ্ধা করি। আপনার স্ত্রী ভাল হোক এটা আমরা কামনা করি। তাই এ খবরটি আপনার নিকট জানিয়ে গেলাম। এই বলে দরবেশ চলে গেল।
হযরত আইয়ুব (আঃ) দরবেশ লোকটির কথা বিশ্বাস করলেন এবং অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে বললেন, আমার স্ত্রী এমন স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে যা আমি কোন দিন ভাবতে পারি নি। আমি তাঁর উপার্জন খাব না। সে আমাকে তাঁর অসৎ উপার্জন দ্বারা এ যাবত খাবার ব্যবস্থা করেছে। আল্লাহ্, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। আমি যদি সুস্থ হই তাহলে স্ত্রীকে একশত বেত্রাঘাত করব। আমি পুনরায় আল্লাহ্র কছম করে বলছি, আমি সুস্থ হবার পরে অবশ্যই তাঁকে বেত্রাঘাত করব।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আইয়ুব (আঃ) এর কঠিন পরীক্ষা – পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন