করিম মিয়ার পুত্র হইল। দাদী শখ কইরা নাম রাখল শামসুর রহমান। ডাকনাম শামসু। করিম মিয়া গরিব গ্রাম্য কৃষক, অভাবের অন্ত নাই। তার ভাঙ্গা ছনের ঘরে শামসুর মা রে নিয়া তার যুদ্ধ চলে অভাবের সাথে প্রতিনিয়ত। শামসু পড়াশোনায় ভাল। ক্লাস ফাইভের বৃত্তি সে পাইসে। করিম মিয়া শুরু করল অন্য স্বপ্ন দেখতে। সন্তান শিক্ষিত হবে, বিদ্যান হবে । তার মত মহাজনের দেনায় ভয়ে তটস্থ থাকতে হবে না। অশিক্ষিত করিম মিয়া এই স্বর্গীয় স্বপ্নে বিভোর থাকে অনেক দিন। শামসু স্কুল পার করে, কলেজ পার করে, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। এর মাঝে এক বারের জন্যেও করিম মিয়া শামসুর হাতে কোদাল দেয় নাই। তার গর্বের স্বপ্নে সে কালি লাগতে দেয় নাই। নিজে একবেলা কম খাইসে।
শামসুর মা এক কাপড়ে বছর পার করছে। তাগো স্বপ্ন কিনতে হইসে চড়া দামে। শামসু শহরে ভার্সিটি তে পড়ে। এইখানে সব স্মার্ট পোলাপানের ছড়াছড়ি। ক্লাসে তার নাম শামসু দেইখা তার লজ্জার অন্ত নাই। সে নাম বদলাইলো। সে সামি হইয়া গেল। শহরের ভাবসাব আলাদা। এইখানে পার্ট নিয়া চলতে হয়। ডাইনদিকের সিথি ওয়ালা চুল লইয়া বিব্রতই হইতে হয়। মাল্টিকোটেড গ্লাস ছাড়া চশমা পড়া চলবে না। আরো বহুত হাঙ্গামা। সব সামি সামাল দেয়। সে উপরের দিকে উঠতে থাকে। অন্য রকম এক নেশায় সে বিভোর হয়। আল্ট্রামডার্ন সোসাইটির সিটিজেন হওয়ার নেশা। সব সে বদলায় আস্তে আস্তে। ভার্সিটির পাট শেষ কইরা সে চাকরিতে ঢোকে একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্কের পদস্থ কর্তা হিসেবে। তার স্বপ্নের পথচলা শুরু হইলেও দুঃস্বপ্ন শুরু হয় করিম মিয়ায়। শামসুর বাপ শামসুর বেইজ্জতির কারন। বর্গাচাষীর পুত পরিচয় শামসুরে মারাত্মক বিব্রত করে। অবশেষে শামসু চরম সিদ্ধান্ত নেয়। সে আপাদমস্তক সামিতে পরিনত হয়। করিম মিয়ার সাথে তার সমস্ত সম্পর্ক সে কৌশলে ছিন্ন করে। শামসুর মা পোলার অপেক্ষায় বইসা থাকতে থাকতে করিম মিয়ারে ছাইরা আকাশের তারার সাথে মিলায় যায়। করিম মিয়া একলা হইয়া যায়। শামসু তার জন্যে এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়। ভিটা মাটি আগেই গেছে। শরীরে সে শক্তিও নাই। বর্গা নিয়া যে সে পেট চালাবে তাও সম্ভব না। একা মানুষ। ভিক্ষার থালা হাতে নিয়া সে গ্রাম ছাইড়া যায়। গ্রামের মানুষ নাক সিটিকায় তার বিদ্যান পোলার বাপভক্তি দেইখা। সে গঞ্জে ভিক্ষা করে।
মিস্টার সামি তার কোন খোজ নেয় না। তাও সে শামসুরে কোন অভিশাপ দেয় না। পোলা ভুল করতে পারে , বাপ পারে না। এইভাবে একদিন ভিক্ষার থালা হাতে নিয়াই নীলগঞ্জ হাটে প্রবল জ্বরের ঘোরে মারা যায়। মরার আগে তার চোখের কোন দিয়া চিকচিক কইরা পানি পরতেসিল আর মুখ দিয়া একটা শব্দই শোনা গেসিল। ” শামসু”! মিস্টার সামি তখন থাইল্যান্ডে শশুরের টাকায় জলহস্তী সাইজ বৌ নিয়া মৌজ মাস্তি তে ব্যাস্ত। তার বাপের লাশ দাফন হয় বেওয়ারিশ হিসেবে। আহা কি সুসন্তান! বিদ্যান সুপুত্র! ( সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে)