এক:
দুপুর বেলায় অফিসে ফিরে বদলি অডার পেতে কার ই বা ভাল লাগে । রন্জুর তো পুরো মাথা খারাপ হয়ে গেলো । চিঠিটায় এক ঝলক চোখ বুলিয়ে ছুড়ে দিল টেবিলের উপড়। তারপর ফিসফিস করে বললো – শালার চাকরিই করমু না । তখন দেখি কে বদলি করে । ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ও সরাসরি ডুকে পরলো বসের রুমে । অন্য সময় হলে অনুমতি না নিয়ে ঢুকতো না । কিন্তু এখন ব্যাপারটা ভিন্ন । মনে মনে ও ভাবলো -চাকরিই যখন করমু না আর বস্ কিসের ? আজ শালারে নিমু এক হাত ।
রন্জু একটি বেসকারি এন.জি.ও তে প্রোগাম অফিসার হিসাবে কাজ করছে গত সাত মাস যাবত । সব কিছু ভালই চলছিল কিন্তু নারায়ন নামে একজন জয়েন করার পর সব ক্যামন এলো মেলো হয়ে গেছে । রন্জুসহ অফিসের সবার ধারনা নারায়ন সারাদিন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের চামচামি করে সময় কাটায় ।
রন্জুর বস ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের নজরুল মল্লিক, সুন্দরী মহিলা প্রোগার অফিসারের হাত দেখেছিলেন । হঠাৎ রন্জু ঢোকাতে দু’জনই বেশ বিব্রত হয়ে গেল । তিনি তোতলাতে তোতলাতে বললেন – রন্জু তু—-তুমি ?
-আপনার সাথে কথা আছে ।
-নক করে ঢুকবা না ? নজরুল মল্লিক মুর্হুতে নিজেকে সামলে নেন । তারপর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন -লোপা তুমি তা হলে যাও ; রাতে কথা হবে । রন্জুর ইচ্ছে করে নজরুল মল্লিকের মুখে কষে একটা থাপ্পর মারতে । মেয়েটি রন্জুর দিকে না তাকিয়ে রুম থেকে বেড় হয়ে যায় ।
-আমাকে বদলি করা হয়েছে ।
-আমি কি করবো ? হেড অফিস যা ভাল মনে করেছে তাই করেছে । আর শুধু বদলির কথা বলছো কেনো ? প্রমোশনও তো পেয়েছো ? নজরুল মল্লিক চেয়ারে হেলান দিয়ে বলেন ।
-আপনি আগে থেকেই জানতেন না , আমাকে বদলি করা হবে ?
-আমার জানা অজানায় কিছু যায় আসে না । হেড অফিস ….
-রাখেন আপনার হেড অফিস । পাঁচ বছর যাবৎ ঢাকায় আছেন আর মেয়েদের হাত দেখছেন । আপনার লজ্জা করে না ? আমাকে তারাতে পারলে তো অফিস টাকে লিলা ভুমি বানাতে পারেন । আমি কিছু বুঝিনা মনে করেছেন ?
-তুমি কিন্তু তোমার সিমা লঙন করছো রন্জু । নজরুল মল্লিক আঙুল উচিয়ে বলে ।
-কিসের সীমা ! কিসের সীমা ? সত্যি কথা বললে সিমা লঙন হয়ে যায় না ? মনে করেন আমি জানিনা আপনি যে আমার বদলির জন্য হেড অফিসে চিঠি দিয়েছেন ?
-দেখ , দেখ রন্জ । ভাল হবেনা কিন্তু । নজরুল মল্লিকের তোতলামি বেড়ে যায় ।
-ও-ই রন্জু কি ? রন্জু কি ? আপনে করে ক । হরামজাদা লুইচা । রন্জু রাগে ফেটে পরে ।
রন্জুর হৈই চৈইয়ে অনান্য স্টাপরা নজরুল সাহেবের রুমে ছুটে আসে । মুরুব্বী মতন একজন রন্জুর কাধে হাত রেখে বলে – তুমি আমার সাথে আসো তো ভাই । আসো আমার সঙ্গে ।
মল্লিক সাহের কিছু একটা বলতে চাইলে মুরুব্বী মতো লোকটা তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বলে -আমি দেখছি ব্যাপারটা ।
তিনি রন্জুকে এক প্রকার টেনে রুম থেকে বেড় করে নিয়ে যান তার রুমে । ভদ্রলোকের নাম মোতালের হাসান । এ ব্যাঞ্চের সবচাইতে পুরানো ষ্টাপ । এ্যকাউন্টেন হিসাবে আছে । সততা আর ভাল ব্যবহারের জন্য সবাই তাকে বেশ সন্মান করে এবং সেই সঙ্গে ভালওবাসে ।
আপনি জানেন না হাসান ভাই ঐ শালা লুচ্চাটায় আমার বদলির জন্য হেড অফিসে চিঠি দিয়েছে । রন্জু অনুযোগের সুরে বলে ।
-আহা তুমি শান্ত হও । আর সিনিয়রদের এভাবে কিছু বলতে হয় না । তাতে সমস্যা আরো বাড়বে বৈই কমবে না ।
-কিসের সমস্যা । শালার এই অফিসে চাকরিই করবো না । শালারে একটা শিক্ষা দিয়ে ছাড়বো । আজ ও দেখি নতুন আসা মেয়েটার হাত ধরে বসে আছে ।
-থামো তো মিয়া । বসো । নাও এই পানিটা খাও । রাগ পরে যাবে । হাসান সাহেব রন্জুকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় ও দিকে । তার পর জিজ্ঞেস করে – লাঞ্চ করেছো ? রন্জু কিছু বলেনা । চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে বসে থাকে ।
-শোন রন্জু , তুমি সবে মাত্র ডুকেছো । এখনও তেমন কিছু বুঝ না । আমি আছি আজ ১৬ বছর হলো । ধৈর্য্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে । আমি দেখেছি তোমার বদলি অডার ; মিয়া তুমি তো এখন ম্যানেজার হয়ে গেছো । বেতন ,সুযোগ সুবিদা সব বেড়ে যাবে । কৈই মিষ্টি খাওয়াবা তা না করে রাগা রাগি করছো । এতোটা উত্তেজিত হওয়া ঠিক না ।
-কিন্তু এই মূর্হুতে আমার ঢাকার বাইরে যাওয়া সম্ভব না হাসান ভাই । বাড়িতে আমি ছাড়া পুরুষ মানু্ষ কেউ নেই । মা আর ছোট বোনটাকে কার কাছে রেখে যাবো ? না , না । হাসান ভাই আমার পক্ষে কোথাও যাওয়া সম্ভব না ।
-এখন চলো আগে লাঞ্চ করে আসি , পড়ে এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে । হাসান সাহেব রন্জুকে নিয়ে বের হয়ে পরে ।
দুই:
রাত সাড়ে ১০টা ।
রন্জু ট্রেনের জন্য কমালাপুর রেল ষ্ট্রেশনে অপেক্ষা করছে । ট্রেন ছাড়ার সময় প্রায় হয়ে গেছে কিন্তু ট্রেন এখনও প্লাটফমে এসে দাঁড়ায়নি । ট্রেনে করে রন্জু প্রথমে চিটাগাং যাবে । সেখান থেকে বাসে করে যাবে দীঘিনালা । দীর্ঘ যাত্রা । ছোট বেলা থেকে ঢাকায় থাকলেও রন্জুর খুব একটা ঢাকার বাহিরে যাওয়া হয়নি । বন্ধুদের সঙ্গে ক’য়েক বার চিটাগাং যাওয়া হয়ছে তাও আবার বাসে । সেখান থেকে কক্সবাজার । ট্রেনে এটাই ওর প্রথম জার্নি ।
হাসান ভাই বুঝিয়ে দিয়েছে কিভাবে যেতে হবে । ওনার পরামশেই রন্জু শেষ পর্যন্ত ঠিক করেছে , নতুন জায়গায় জয়েন করবে । ভাল না লাগলে ইস্তফা দিয়ে চলে আসবে ।
হাসান ভাই বলেছেন- আরে ভাই চাকরি তো যে কোন সময় ছাড়া যায় । নতুন জায়গায় যাও , দু একদিন দেখ , তারপর ভাল না লাগলে ছেড়ে দিয়ো । রন্জুও ভেবে দেখেছে , হাসান ভাই ঠিকই বলেছেন – দেখা যাক দু একটা দিন ।
পৌনে ১১টার সময় ট্রেন এসে প্লাটফমে দাঁড়ালো । রন্জুর জন্য অফিস থেকে ১ম শ্রেনীর কামরায় সিট বুকিং করা আছে । ট্রেনে উঠে ও বেশ অবাক হলে গেল ; এতো বিলাস বহুল কামরা ওর ধারনায় ছিল না । কামটাতে হালকা একটা আলো জ্বলছে । পুরো বগিটাতে মাত্র ৮টা আসন রন্জু মনে মনে গুনলো । তা ও আবার লিবার টেনে শুয়ে পরা যায় । গান শুনার ব্যবস্তা আছে । নিজেকে ওর খুব ধনী ধনী মনে হলো ।
রন্জুর আসন নম্বর ৩ ।
ওর আসনটা কামরার বাম পাশের মাঝখানে । ওর সামনে দু-টো ,পেছনে দুটো আসন । ডান পাশটাতে রয়েছে ছোট ছোট তিনটি টেবিল সঙ্গে দুটো করে চেয়ার আর একটি আলমিরা । দেখে বোঝা যায় খাওয়া দাওয়া করার জন্য ওগুলো ওখানে রাখা হয়েছে । কামরার পরিবেশটা রন্জুর খুবই ভাল লেগে গেল । ও গুন গুন করে গান গাইতে লাগল -কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা …………. ।
মাথার উপরে লকারে ওর ব্যাগটা রেখে পেছনের আসনে চোখ যেতেই রন্জু চমকে উঠলো -পেছনের আসনে একজন লোক বসে আছে । একটু আগেও তো আসনটা খালি ছিল , কেউ ছিল না । কপাল ; ভ্রু কুচকে রন্জু ভাল করে তাকাল । পা লম্বা করে লোকটা শুয়ে আছে । মুখের উপর ছাই রঙের একটা রুমাল রাখা । মনে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে । রন্জু ব্যাগটা রেখে বসে পড়লো । মনে মনে বিষয়টা মিলাতে না পারলেও গুরুত্ব দিল না । বসতে গিয়ে ও অনুভব করলো সিটটা কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে । শীত মনে হয় চলে আসছে । ক্যামন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে । বা পাশের জ্বানালাটা খুলে ও বাইরে তাকালো । লোকজন ছোটা ছুটি করছে ট্রেনে ওঠার জন্য । জনা কয়েক অল্প বয়সি ছেলে ফেরি করে পান সিগারেট বিক্রি করছে । রন্জুর হঠাৎ ইচ্ছে হলো সিগারেট খেতে । ও হাত নেড়ে একটা ছেলেকে ডাকলো । কিন্তু ছেলেটা ওর দিকে না তাকিয়ে ছুটে গেলো অন্য দিকে । রন্জু আরেকটা ছেলেকে ডাক দিল কিন্তু সে ও তাকালো না রন্জুর দিকে । আশ্চর্য কেউ আসছে না কেন ? এবার রন্জু বেশ বিরক্ত হয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে একটু জোরেই ডাক দিল । কিন্তু ছেলেটি রন্জুর দিকে তাকালো না ; একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো -লাগবো চা ; সিগারেট । চা ; সিগারেট । যেন রন্জুর আওয়াজ ছেলেটার কানে পৌচ্ছেছেনা ।
রন্জু এবার অবাক হয়ে ভাবলো সবার হলো কি ? ওকে কি কেউ দেখছে না ? জানালার গ্লাস তো খোলা । তাহলে !
রন্জু জানালার দিকে তাকিয়ে ট্রেন থেকে নামার জন্য উঠবে ঠিক সেই সময় খুব ভারি গলায় কেউ একজন বলে উঠলো -স্যার কিছু লাগবে ?
রন্জু চমকে উঠে গুরে তাকালো , সাদা উর্দি পরে একজন দাঁড়িয়ে আছে । লোকটা কিছুটা ঝুকে আছে রন্জুর দিকে ও তাকাতেই সোজা হয়ে দাঁড়াল । ওকে তাকতে দেখে লোকটি আবার ও বললো – স্যার কিছু লাগবে ?
রন্জু ঢোক গিলে উপরে নীচে মাথা নাড়লো লাগবে । তারপর বললো এক প্যাকেট বেনসন সিগারেট হবে ? লোকটা পকেট থেকে সিগারেট আর ম্যাচ বেড় করে দিয়ে বললো – স্যার আর কিছু লাগবে ? রন্জু না করতেই ; লোকটা চলে যাচ্ছিল রন্জু বললো- দাম নেবেন না ?
-স্যার নামার আগে বিল পাবেন ? বলে লোকটা অন্য কামরায় চলে গেল । ঠিক এমন সময় ট্রেনটা দুলো উঠলো । তারপর খুব ধীরে ধীরে সামনের দিকে চলতে শুরু করলো । হঠাৎই হুরমুর করে তিন জন ২০ থেকে ২৫ বছরের তরুণী রন্জুর কামরায় উঠে এলো ; । সবাই বেশ হাপাচ্ছে । দেখে বোঝা যায় অনেকটা দৌড়ে ট্রেনে উঠেছে । সবার গায়ের রঙ বেশ ফসা । বেশ ভুসা দেখে বোঝা যায় বেশ সবাই সম্ভান্ত পরিবারের মেয়ে হবে । মেয়ে গুলো নিজেদের মধ্যে সিট নিয়ে কথা বলছে আর হাসছে । একজনের হাতে টিকিট ধরা । অন্য দু’জনের হাতে ছোট ছোট লাগেজ । একজন হাসতে হাসতে বললো – যাক উঠা গেছে । আর একটু হলেই মিস করতাম । রন্জু মনে মনে বললো -যাক নায়িকাও চলে এলো । নিজের কথায় নিজেই হাসলো । রন্জুর সামনের চারটি আসন খালি । পেছনে একটি । অন্যটিতে মুখে রুমাল দিয়ে ঐ ভদ্র লোক বসে আছে । লোকটির কথা মনে হতেই রন্জু পেছনের দেখার ভাব করে আসটির দিকে তাকালো । কাউকে দেখতে পেল না । ও ভাবলো আছে হয়তো আছে কোথাও ..
মেয়েগুলো একেবারে সামনের দুটো আসনে দু’জন আর তার পেছনের একটি আসনে অথাত রন্জুর ঠিক সামনের দুটো আসনের ডান পাশেরটায় বসে পরলো । পেছেন থেকে সিটে বসার পরে মেয়ে গুলোকে একদম দেখাই যায় না । রন্জু সিগারেট খাচ্ছিল । মেয়েগুলোর একজন বললো -সিগারেটের বাজে স্মেল পাছি । অন্য জন বললো -এই যে তোর আবার খুঁত খুঁত শুরু হয়ে গেল । মনে আছে আমাদের প্রতিজ্ঞার কথা । সমস্ত বাজে অভ্যেস গুলো বাদ দেবার জন্যই আমাদের এ র্জানি । পেছনে বসে থাকা অন্য জন বললো – আমার মনে হয় না ও পারবে । তার পর তিনজনই হেসে উঠলো । মেয়ে তিনটি আসার পর কামরার পরিবেশটাই পাল্টে গেছে । রন্জু সিগারেটা জানলা দিয়ে ফেলে দিল । ট্রেনটা বেশ গতি পেয়ে গেছে । ট্রেন লাইনের পাশে থাকা বাড়ি ঘর গুলো ছুটে চলে যাচ্ছে পেছনে । হালকা একটা ফুলের গন্ধ নাকে লাগতেই রন্জু চোখ বন্ধ করে গন্ধটাকে আরো গভীর ভাবে টেনে নিতে চাইলো । তমার কথা মনে হলো ওর । মনে হলো তমার চুলের মাঝে ও এ রকম একটা গন্ধ পায় । হঠাৎই তমার জন্য বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো । রন্জু বিরবির করে বললো-তমা আমি তোকে অনেক বেশি ভালবাসি । তমা আর রন্জু ক্লাস মেট ছিল । সেখান থেকেই দু’জনের সর্ম্পকের শুরু । তমার জন্যই রন্জুর ঢাকা ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনি । রন্জু আর তমা ইচ্ছে আছে সব ঠিক ঠাক থাকলে আগামি বছরের প্রথম দিকে বিয়ের কাজটা শেরে ফেলার ।
হঠাৎ একটা শব্দে হতে রন্জু চোখ খুলে তাকাল । দেখলো ওর সামনে বসা মেয়েটি সিটের উপর দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ? রন্জু নড়ে চড়ে বসে বললো – আমাকে কিছু বলছেন ?
মেয়েটি হেসে বললো -আমি তানিয়া । চিটাগং যাচ্ছি । আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
-জ্বি আমিও চিটাগং যাচ্ছি ।
-সেখানেই থাকেন বুঝি ? মেয়েটির ছোট করে চুল কাধের দু’পাশে পরে আছে । দেখতে খুব ভাল লাগছে ।
-জ্বী না । চিটাগং থেকে দীঘিনালা যাবো । আমার পোষ্টিং হয়েছে সেখানে ; জয়েন করতে যাচ্ছি । রন্জুর হঠাত মনে হলো মেয়ে গুলো মলম পাটির কেউ নয় তো ? আজকাল মলম পাটির কথা খুব শোনা যাচ্ছে । মেয়ে মলম পাটির সদস্য ও কি আছে ? তা ও আবার এমন সুন্দরী ? হাসান ভাই বলেছেন কারো দেয়া কিছু যেনো না খায় । গত বছর নাকি ওদের এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে মলম পাটির কবলে পরে । তারপর থেকে অফিস বেশ সর্তক । অফিস ব্যবস্থাপনায় যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে । টিকিট কেটে দিচ্ছে । সম্ভব হলে যাত্রা পথে একবার চেকিং এর ব্যবস্থা করছে । মেয়েটি হেসে কিছু বললো । রন্জু শুনতে না পেয়ে বললো – জ্বি ।
-আপনি বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছেন । আমি বিরক্ত করছি না তো । মেয়েটি আবারও হাসল ।
-না । বিরক্ত হচ্ছি না ।
-আমরা তিনজন বোন ঢাকাতেই থাকি । আমাদের আদি বাড়ী চিটাগং । তারপর গলা নামিয়ে আস্তে বললো -বাবা দু আপুর বিয়ে ঠিক করেছে ; তাই সেখানে যাচ্ছি । মেয়েটি হাসছে ।
-ও আচ্ছা । রন্জু মৃদু হেসে মেয়েটির কথায় মজা পাবার ভান করলো ।
-আপনি বিয়ে করেছেন ? সরাসরি এরকম প্রশ্নে রন্জু বেশ হকচকিয়ে গেল । তারপর হেসে মাথা নাড়লো ; না ।
-আচ্ছা বলেন তো আমার নাম কি ? আমি একটু আগে আপনাকে আমার নাম বলেছি ।
রন্জু এবার বেশ ভেবাচেকা খেয়ে গেল । কিছুতেই মেয়েটির নাম মনে করতে পারলো না । নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগছে ।
আহা : তানি কি শুরু করলি ? সামনে বসে থাকা দুজনের একজন বললো । সঙ্গে সঙ্গে রন্জুর মনে পরে গেলো মেয়েটির নাম তানিয়া ।
-আপনার নাম তানিয়া । ঠিক ।
-না ঠিক না । আপু বলেছে দেখে পেরেছেন । তা না হলে আপনি ভুলে গিয়েছিলেন । কি ঠিক বলিনি ?
রন্জু হেসে মাথা নাড়লো ।
-আমার দু’আপুর একজনের নাম তমালিকা , অন্যজনের নাম তিথি । আপনাকে বেড় করতে হবে কোন জনের নাম কি ? তবে সর্ত একটা কারো কাছে নাম । জিজ্ঞাসা করা যাবে না । যদি পারেন আপনার জন্য থাকবে আমার তরফ থেকে একটা গীফট ।
রন্জুকে সিগারেট এর প্যাকেট বেড় করতে দেখে । তানিয়া বললো – নো এসমোকিং প্লিজ । বড় আপুর সিগারেটের গন্ধ একধম পছন্দ নয় ।
রন্জু উঠতে উঠতে হেসে বললো -ঠিক আছে এখানে খাবো না । আপনি কি কেনন্টিনের এর দিকে যাবেন ? রন্জু সেদিকে যাবার ইচ্ছে ছিল না । তবু বললো – যাবো ।
-যদি কিছু মনে না করেন । এখানে চা দিতে বলবেন প্লিজ । তিনটা চা অথবা কফি । যামনে যাবার সময় দেখলো পেছনের সিটের লোকটা আগের মতোই মুখে রুমাল দিয়ে শুয়ে আছে । দু’টো কামরা পেরতেই রন্জু উর্দি পরা ঐ লোকটাকে পেয়ে গেল । রন্জুকে দেখে লোকটাই এগিয়ে এসে বললো -স্যার কিছু লাগবে ?
-হা । আমার কামরায় তিনটা চা অথবা কফি পাঠাতে হবে । আপনি একটু গিয়ে দেখেন ওনাদের আর কি কি লাগবে ।
-কাদের কথা বলছেন স্যার ? লোকটি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো ।
-ঐ যে , যে তিনটি মেয়ে ট্রেন ছাড়ার মুর্হুতে উঠলো । আরে বাবা একটু যেয়ে দেখেন না ।
-আমি দেখছি স্যার ।লোকটা দ্রুত চলে যাচ্ছিল রন্জু বললো -এখানে সিগারেট কোথায় খাবো ।?
-স্যার সামনেই ক্যান্টিন । সেখানে বসে ইচ্ছে করলে সিগারেট খেতে পারেন । যা-ই অডার করবেন এখন বিল দিতে হবে না । আপনি শুধু আসন নম্বারটা বলবেন । লোকটি চলে গেল ।
তিন:
একে ক্যানটিন না বলে হোটেল বলা ভাল ।
ঢাকার চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট গুলোর মতো । সাজানো গোছানো । বা পাশে একটা কাউন্টার , তাতে একজন দাঁড়িয়ে খাতায় কিছু লিখছিল রন্জু ঢুকতে দেখে খাতা বন্ধ করে ওর দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো -স্যার কি লাগবে ?
-আমি সিগারেট খাবো ;একটা এসট্রে লাগবে আর এককাপ কফি । রন্জু একটা টেবিলে বসলো । কিছু সময়ের মধ্যেই লোকটি একটা এসট্রে আর দুটো ম্যাগাজিন এনে রেখে গেল টেবিলে । রন্জু ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে কফি , সিগারেট প্রায় শেষ করে এনেছে ; এমন সময় উর্দি পরা লোকটা এসে ঢুকলো । রন্জকে দেখে ওর দিকে এগিয়ে এসে বললো – স্যার কাদের কথা বলেছেন । আপনার কামরায় তো কাউকে পেলাম না ।
-কি বলছেন ?
আমার কামরায় গিয়েছেন তো ? রন্জু বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো । আমার সামনের দুটো আসনে তিনটি মেয়ে বসে আছে চিটাগাং যাবে ।
-আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে আপনার কামরা নং 27 সিট নং 27F কেউ নেই ।
-ঠিকই তো আছে । চলেন তো দেখি । রন্জু কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে সিগারেটটা এস্ট্রেতে গুজে উঠে পরলো ।
আসলেই নিজের কামরায় এসে বেশ অবাক হলো রন্জু । কেউ নেই কামরাটিতে । পেছনের সিটটিও ফাঁকা ।
-এখানেই তো ছিল । উর্দি পরা লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো রন্জু ।
-দেখুন তো ? লকারে ওদের লাগেজ গুলো রয়েছে কিনা । উর্দি পরা লোকটি সামনের সিটের জানালার উপরের দুটো লকারই চেক করলো । তা পরে বললো – না স্যার ! কিছু নেই ।
রন্জু নিজের লকারটাও দেখলো । ওর ব্যাগটি যেমন রেখেছিল তেমনিই আছে । বন্জু মনে মনে বললো- গেল কোথায় ? অন্য কোন কামরায় গেল না তো ?
-স্যার টুয়েন্টি সেভেন এ আপনিই একমার যাত্রি ।
-বলেন কি !!
এ সিটটাতে তো আরেকজন শুয়েছিল । মুখে রুমাল দিয়ে শুয়ে ছিল । রন্জু কপাল ভ্রু কুচকে গেছে । হঠাৎ শরীর ক্যামন ছমছম করে উঠলো ।
-স্যার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো ?
-আশ্চর্য এখানে ভুল হবার কি আছে ? জল জেন্ত মানুষ গুলো উধাও হয়ে গেলো । ট্রেন তো কোথাও থামেনি ? থেমেছে ?
-জ্বি না স্যার ।
-ঠিক আছে , আপনি যান বলে রন্জু ওর সিটে বসে পরলো । ঘটনাটা ঠিক মেনে নিতে পারছে না ও । সবাই গেলো কোথায় ? মেয়েগুলো তো সিটের সঙ্গে নম্বর মিলিয়ে তারপর বসলো । তাহলে তো অন্য কোন কামরায় যাওয়ার প্রশ্নই আসে না । যাগ গে , যেখানে খুশি । বলে রন্জু ঘুমাবার জন্য লিবার টেনে সিটটাকে নীচু করে শুয়ে পড়লো । পাশ দিয়ে খুব শব্দ করে আরেকটা ট্রেন গেল । ট্রেনটা খুব জোরে ছুটে চলেছে । এটা ওটা চিন্তা করতে করতে রন্জু ঘুমিয়ে পড়লে ।
মুখের উপড় নি:শ্বাস পরার ঘুম ভেঙ্গে গেল রন্জুর । চোখ খুলতেই দেখতে পেলো ওর মুখের উপড় তানিয়া ঝুকে আছে । কিছু বুঝতে পারলো না ও ; ভয় পেয়ে গেল ।
-কি ব্যাপার ?
-ঘুমিয়ে পরেছিলেন ? অন্য দু’জন দাঁড়িয়ে আছে তানিয়ার পেছনে ।
– কি হয়েছে ? রন্জু আবারও প্রশ্ন করলো ।
-কিছু হয়নি । আপনি ঘুমিয়েছেন কিনা দেখছি ।
-কোথায় গিয়েছিলেন সবাই ?
– কোথায় আবার যাবো ? এখানেইতো ছিলাম । আপনিই তো চা বলতে গিয়ে কোথায় হাওয়া হয়ে গিলেন ? পুরো ট্রেনে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি আপনাকে ।
-আমাকে খুঁজেছেন । আজব তো ? এটা কি ভুতরা ট্রেন নাকি ? সোজা হয়ে বসতে বসতে বললো রন্জু ।
-ভুতরা ট্রেন ? বুঝলাম নাতো ব্যাপারটা । তানিয়া কপাল কুচকে বললো।
-এ্যই যে আপনারা বলছেন কোথাও যাননি । অথচ ওয়েটার এসে আপনাদের খুঁজে পেল না । আপনারা আপনাদের লাগেজ সহ গায়েব হয়ে গেলেন । এখন বলছেন এখানেই ছিলেন ।
-লাগেজ নিয়ে আবার কোথায় যাবো ? ঐ যে লাগেজ তো জায়গাতেই আছে । আমি আর মেঝপা আপনাকে খুঁজতে বেড় হয়ে ছিলাম । কিন্তু বড়পা তো এখানেই ছিলো । কি আপা ? তানিয়া ওর পাশে দাঁড়ানো দু’জনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো । দু’জনই মাথা নেড়ে হ্যা বললো । রন্জু তাকিয়ে দেখলো মেয়েদের লাগেজ গুলো জায়গাতেই আছে ।
-কি জানি । রন্জু বিরবির করে বললো । মেয়েরা নিজেদের জায়গায় গিয়ে বসেছে । রন্জু ঘড়ি দেখলো প্রায় দুটো বাজে।। বোতল খুলে ও পানি খেলো । একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছে করলো খুব । কিন্তু উঠে কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না । চোখ বন্ধ করে ও ঘুমাতে চেষ্টা করলো ও ।
টেনের খোলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিল রন্জু । সো সো করে বাতাস আসছে । দু’পাশের ঘুমিয়ে পরা শহর নগর বন্দর এর পাশ দিয়ে নিশাচর অজগরের মতো এগিয়ে চলেছে রাতের ট্রেন ।
এখানে কি করছেন ? হঠাৎ প্রশ্নে চমকে ঘুরে দাঁড়ালো রন্জু । তিথি দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে । শাড়ি পরে আছে মেয়েটি । চুল গুলো বাতাসে উড়ছে । ট্রেনের অল্প বাতির আবছায়ায় মেয়েটিকে অসম্ভব রুপসি বলে মনে হলো রন্জু’র কাছে ।
-কি দেখছো এমন করে ? তিথি এগিয়ে এসে রন্জুকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে ও বুকে মাথা রাখলো । রন্জু দু’হাত দু’পাশে রেখে দাঁড়িয়ে আছে কি করবে বুঝতে পারছে না । ঘটনার আর্কষীকতায় ও বেশ আবাক হয়ে গেল । মেয়েটি কি পাগল নাকি ? রন্জু মেয়েটিকে ঠেলে সড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে পাললো না , তিথি ওর বুকে মুখ ঘষছে । রন্জু ভেতরের অন্য একটি মানুষ জেগে উঠছে ক্রমশ । তিথি রন্জুকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে বললো- এতো দিন কোথায় ছিলে ? কোথায় ছিলে ? তারপর রন্জুর ঠোটে মুখ রাখলো । রন্জুর বাঁধা দেবার চেষ্টা করে ও পারলো না । ধীরে ধীরে নিজেকে সোপে দিলো তিথির কাছে । চুপ করে দাড়িঁয়ে রইলো । সমস্ত শরীর গরম হয়ে গেছে । নাকে ভেসে আসছে হালকা একটা চাপা ফুলের ঘ্রাণ ।সিগারেট ফেলে দিয়ে ও দু’হাত দিয়ে তিথিকে বুকের সঙ্গে চেপে ধরলো । তিথির মুখ ওর ঠোট ছেড়ে গলায় নেমে এসেছে । হঠাৎ রন্জুর মনে হলো তিথি ওর কাধের কাছটা জ্বিব দিয়ে চাটছে । তারপর তীব্র একটা কামড় অনুভব করলো ও । মনে হলো দুটো দাঁত চামড়া ছেদ করে ভেতরে ঢুকে গেলো । দু’হাত দিয়ে রন্জু তিথিকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করে ও পারলো না । তিথি রন্জুর শরীর থেকে রক্ত শুসে নিতে লাগলো । অদ্ভুত এক ভাল লাগায় পেয়ে বসলো রন্জুকে মনে হলো এর চেয়ে তৃপ্তির পৃথিবীতে কিছু নেই । মনে মনে ও বলতে লাগলো শুষে নাও; শুষে নাও; আমার সব টুকু রক্ত শুষে নাও । একটু ঘুরে তাকাতেই রন্জু দেখতে পেলো তিথির পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ওর দু বোন । হিংস্র হয়ে আছে দু’জনার মুখ । ঠোটের দু’পাশ দিয়ে দু’টো করে চোখা ধাড়ালো দাঁত বেড় হয়ে আছে । দু’জনই রন্জুকে তিথির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করছে ; রীতিমতো টানাটানি শুরু হয়ে গেলো তিনজনের মধ্যে । সবার চেহারা পাল্টে গেছে ; চোখ দু’টো হায়নার চোখের মতো হয়ে গেছে । ঠোঁটের দু’পাশ দিয়ে বেড় হাওয়া হলুধ রঙের দাঁতগুলো দিয়ে একে অন্যেকে কামড়াতে চেষ্টা করছে । দু’হাত দিয়ে বেড় হয়েছে বিশ্রি রকমের চোখা চোখা নখ , সেগুলো দিয়ে একে অন্যকে খামচে শরীরের চামরা তুলে নিচ্ছে ।
হঠাৎ করেই রন্জুর মনে হলো ওকে পালাতে হবে ।
রন্জু ট্রেনের কেবিন এর দিকে দৌড় দিল । সাথে সাথে তিনজন নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি বন্ধ করে রন্জুর পেছন পেছন ছুটতে শুরু করলো । রন্জু প্রচন্ড রকমের ভয় পেয়ে গেছে – বুকের ভেতর হৃদপিন্ডটা ধক ধক করে লাফাচ্ছে । ছুটতে ছুটতে ও পেছন ফিরে দেখলো মেয়ে তিনটি বাতাসে ভেসে ভেসে ওর দিকে আসছে । রন্জু কেন্টিনে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেবার জন্য চেষ্টা করলো । লোহার ভারী দরজা টানতে ওর বেশ কষ্ট হচ্ছে । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে টেনেও দরজাটার একটুও নাড়াতে পারলো না রন্জু। তানিয়া ,তিথি , তমালিকা ঝড়ের বেগে ছুটে আসছে । রন্জু চিৎকার করতে কারতে দরজা ধরে ঝাকাতে লাগলো । হঠাৎ ওর চোখ পড়লো দরজার কাছে গোল চাকার মতো কিছু একটা রন্জু দ্রুত সেটা ডান দিকে ঘুড়াতেই দরজাটা বন্ধ হতে শুরু করলো । শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে রন্জু চাকাটাকে ঘুরাতে লাগলো । দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে এমন সময় তিথি একটা হাত দিয়ে খামচে ধরলো দরজাটাকে । রন্জুর মনে হলো ও আর পারবে না । দরজাটা আবার একটু একটু করে খুলে যেতে লাগলো ।
তিথির মাথার উপড় দিয়ে তানিয়া, তমালিকার হিংস্র মুখ দেখা যাচ্ছে । মনে হচ্ছে রন্জুকে পেলে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে । রন্জু ইয়া আল্লাহ বলে শরীরের সকল শক্তি দিয়ে চাকাটা ঘুড়াতেই দরজাটা ধম করে বন্ধ হয়ে গেল । রন্জু কেন্টিনের দিক ঘুরে দরজায় হেলান দিতেই দেখতে পেল উর্দি পড়া সেই লোকটি ওর দিকে এগিয়ে আসছে । মুখটা বিশ্রী রকমের বিকৃত হয়ে আছে । চোখ দুটো কোটা থেকে বেড় হয়ে ঝুলে আছে গালের উপর ।
হাত দুটো ঝুলে আছে শরীরের দু’পাশে । লোকটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে লাগলো রন্জুর দিকে । ও কি করবে বুঝতে পারছে না । একবার মনে হলো জানালা দিয়ে ট্রেন থেকে ঝাপিয়ে পরবে কিনা ? পেছন থেকে দরজাটা কেউ প্রচন্ড ভাবে ঝাকাচ্ছে । হঠাৎ বাম পাশের জানালায় দেখা গেল তিথিকে । তিথি প্রায় ঢুকে পরেছে কামরার ভেতরে । রন্জু আর দাঁড়ালো না । সামনের দিক থেকে এগিয়ে আসা লোকটাকে প্রচন্ড একটা ধাক্কা দিয়ে ও ছুটে গেল সামনের দিকে । লোকটা ছিটকে পড়ে গেল একপাশে ।
রন্জু দৌড়ে বগিটার শেষ মাথায় এসে পেছন ফিরে তাকালো তানিয়া ,তমালিকা ও ঢুকে পরেছে কামরায় । পরে যাওয়া লোকটি আবার উঠে দাঁড়িয়েছে । তিথি লোকটার দিকে তাকাতেই লোকটা ভয়ে একপাশে সরে গেল । তারপর তিনজন আবার বাতাসে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে আসতে লাগলো রন্জুর দিকে । রন্জু বাম পাশের দরজাটা খুলে ফেলেছে । মনে মনে ঠিক করে ফেলেছে লাফিয়ে পরবে ট্রেন থেকে । মরে যাবে তারপরও এদের হাতে ধরা দেবেনা । বুকটা দুরুম দুরুম করে লাফাচ্ছে ওর । গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে । ঢোক গলার চেষ্টা করে পারলো না । তিথিরা হাত দু’ই দুরে থাকতেই প্রচন্ড এক ঝাকিতে আর শব্দে কেঁপে উঠলো পুরো ট্রেন । রন্জু ছিটকে পড়লো অন্ধকারে । কয়েক মুহুতের মধ্যে পুরো ট্রেনটি ধুমরে মুচরে আগুন লেগে গেল । কিন্তু ছোটা বন্ধ হলো না । জ্বলন্ত অবস্থায় ছুটে চললো সামনের দিকে ।
(সমাপ্ত)
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।