►জীনের উৎপাত (নতুন গল্প)◄

ঢাকার এক জনবহুল ও পরিচিত জায়গায় আমাদের বাড়ি। ১৯৬৫ সাল থেকে একই জায়গায় আমার দাদা তার স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাস শুরু করেন। প্রথমে টিনের ঘর, তারপর একতলা পাকা দালান। এরপর ৩-৪ তলা পর্যন্ত হয়েছে।

বিয়ের পর থেকে প্রতি তলায় বাপ-চাচারা তাদের ঘর-সংসার নিয়ে থাকেন। এই বাড়ির সামনেই একটা উঠান ছিল, যেখানে আম ও লটকন—এই দুটি বৃহৎ গাছ দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি। পরে বহুতল করার সময় গাছ দুটি কেটে ফেলা হয়। সে যাই হোক, আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি যে, “লটকন গাছে জ্বিন থাকে”। যদিও আমি কখনও গাছে জ্বিন দেখিনি, তবে তার উপস্থিতি যে অন্য কোথাও টের পাইনি, সেটা বলতে পারব না।

তাই ছোটখাটো কিছু ঘটনা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি।

আমার এক চাচা, অত্যন্ত সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান। আশির দশকে, যখন তার বয়স ২৪-২৫, তখনই তাকে জ্বিনে ধরে। আমার দাদা একজন বিশাল মাওলানা ছিলেন, যিনি ১৯৮৮ সালে মারা যান। তার জীবদ্দশায় তিনি শত চেষ্টা করেও সেই জ্বিন তাড়াতে পারেননি। আজও দেখা যায়, সেই জ্বিন বহাল তবিয়তে রয়েছে।

কিছু মুরুব্বি সেটাকে জ্বিন না বলে পরী (জ্বিনের স্ত্রী লিঙ্গ) বলে থাকেন। তো, আমার ওই চাচাকে দেখা যায়, উনি ধীরে ধীরে অপ্রকৃতস্থ ও অসামাজিক হতে শুরু করেন। মাঝে মাঝে তাকে অত্যন্ত বোকা ও নিরীহ মনে হয়, আবার কখনও অস্বাভাবিক রাগে ফুঁসে ওঠেন। দেখা গেল, তিনি ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছেন।

জ্বিনে ধরা অবস্থায় তিনি যে কাজেই হাত দিয়েছেন না কেন, কোথাও টিকে থাকতে পারেননি। অথবা তাকে টিকে থাকতে দেওয়া হয়নি। আমাদের পারিবারিক এক প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের ভাতা পেয়ে এখন তার সংসার চলে।

কিছু ব্যাপার আমার খুব ভয় লাগতো, যেমন—আমি দেখতাম, তিনি অদৃশ্য কারও সঙ্গে কথা বলছেন। হয়তো নিজের ঘরে, নয়তো ছাদে, ঠিক সন্ধ্যার সময়। দেখা যেত, তিনি ছাদের ট্যাঙ্কির কিনারায় দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে অদৃশ্য কাউকে উদ্দেশ্য করে তালি বাজানোর ভঙ্গিতে জুতা দিয়ে পেটাচ্ছেন।

কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে (আমাদের বিশাল গোষ্ঠীর মিলনমেলা হয় ২-৩ মাস অন্তর) দেখা যেত, তিনি সবার সামনেই উপরের দিকে তাকিয়ে কারও সঙ্গে বিড়বিড় করে কথা বলছেন। আচমকা হেসে উঠছেন, হাত দিয়ে ইশারা করছেন।

একবার দেখেছিলাম, তিনি নামাজ পড়তে গিয়ে অদৃশ্য কাউকে পাশে দাঁড়াতে বলে জায়গা ছেড়ে দিলেন!

এ ধরনের ছোটখাটো নানা ঘটনা এখন দেখলে আর ভয় পাই না, তবে কিশোর বয়সে ভয়ে হতভম্ব হয়ে যেতাম!

আমার এক চাচাতো বোনকেও একবার জ্বিনে ধরেছিল। একদিন সন্ধ্যাবেলা, সেই ট্যাঙ্কির কিনারায় চুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তখনই তাকে জ্বিনে ধরে।

তার বড় বোনকেও শুনেছি, একই অবস্থায়, একই সময়ে আরও আগে জ্বিনে ধরেছিল। আর চাচাকে ধরেছিল রাতের বেলা।

একবার সামনের দালানে এক লোক ছাদে ওঠার পর চাচাকে দেখে। তিনি দেখেন, চাচা বৃষ্টির মধ্যে একইভাবে একদৃষ্টিতে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর তিনি বাসার সবাইকে ঘটনাটি জানান এবং দাদা গিয়ে চাচাকে নিয়ে আসেন।

ওই বোন দুটিকে পরে জ্বিন ছেড়ে দেয়, কিন্তু আমার চাচাকে আজও ছাড়েনি।

অন্যান্য জ্বিনে ধরা মানুষদের যেমন দেখা যায়—তারা নিজেদের শরীর কেটে ফেলে, নিজেকে নিজে আঘাত করে। কিন্তু আমার চাচার তেমন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি, তবে তিনি মানসিকভাবে অনেক অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়েন এবং শারীরিক শক্তিও প্রায় হারিয়ে ফেলেন।

এছাড়াও, আমাদের বাসায় এক বুয়া থাকতো। তাকে ঘিরেও কিছু ঘটনা ছিল—আমার নিজের কানে শোনা জ্বিনের অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর, এবং ওই বাড়িতে বিভিন্ন অদ্ভুত ধরনের কিছু শব্দ শোনার ছোটখাটো ঘটনা।

সেগুলো পরে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।

►আরেকটি কবরস্থানের রহস্য◄

►ডরমিটরিতে ভূত◄

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *