►ভৌতিক এবং সত্য◄

আমার নানুর মুখ থেকে শোনা একটি বাস্তব ঘটনা আজ আমি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। আমার নানুর বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলায়। আজ থেকে ৯ বছর আগে কোনো এক রমজান মাসের রাতের ঘটনা। বাড়িতে আমার নানু, নানা এবং আমার খালামনি থাকতেন। সব সময় নানু ঘুম থেকে আগে উঠতেন, কারণ সেহরির জন্য খাবার আয়োজন করতে হতো।

যাই হোক, নানু হিটারে ভাত চাপিয়ে মূল বাড়ি থেকে একটু দূরে কলপাড়ে (স্থানীয় ভাষায়) ওজু করতে গিয়েছিলেন। তখনও চারদিকে নিশ্চুপ অন্ধকার, মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো কিছু বাড়িতে কুপির কিংবা হারিকেনের আলো দেখা যায়। নানু তার নিজের মতো করে ওজু করতে লাগলেন। বলে রাখা ভালো, কলপাড়ের পাশে বিচ্ছিন্ন কিছু বাঁশঝাড় ছিল।

তা যাই হোক, নানু যখন কল চাপলেন, তখন মাঝবয়সী একটি মেয়ের গুঙ্গানো কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলেন। প্রথমে নানু ভেবেছিলেন, পাশের বাড়ির হান্নানের বউ হয়তো কান্না করছে। কারণ হিসেবে তিনি ধরে নিলেন, হয়তো হান্নান তার বউকে প্রহার করেছে। কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করলেন— হান্নান আর তার বউ তো কাল রাতেই হান্নানের বড় ভাইয়ের বাড়ি শ্রীনগরে চলে গেছে!

নানু তখনও বিচলিত হননি। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলেন— তিনি যখনই কল চাপা থামাচ্ছেন, তখনই কান্নার শব্দটা থেমে যাচ্ছে! আবার কল চাপলেন, আবার সেই কান্নার আওয়াজ!

যাই হোক, পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নয়, তা তিনি ইতিমধ্যে বুঝে গেছেন। তিনি মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলেন। তার হাত-পা প্রায় ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল— তার বর্ণনায় তিনি তা উল্লেখ করেছিলেন।

অবশেষে সাহস করে তিনি পাশের দিকে তাকালেন। দেখলেন, সাদা শাড়ি পরা একটা মেয়ে বিশাল বড় একটা ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে বাঁশঝাড়ের গোড়ায় বসে কান্না করছে! এই দৃশ্য দেখার পর তিনি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলেন না। চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে কলপাড়ে পড়ে রইলেন।

তার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে আমার নানা আর খালামনি দৌড়ে কলপাড়ে গেলেন।

সকাল হলে নানুর জ্ঞান ফিরল। খালামনি মাথায় পানি ঢালছিলেন। তিন পর্বে পুরো ঘটনা জানা গেল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে একটা মরা কাক পড়ে আছে! কাকটি বাঁশঝাড়ের মধ্যে ছিল। পরে সেটাকে পুড়িয়ে ফেলা হলো।

নানু কিন্তু ভূতে বিশ্বাস করতেন না। তিনি এক হুজুরের কাছে ব্যাপারটা খুলে বললে, তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন— “বদ কোনো জিন এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”

কাক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে হুজুর মৃদু হেসে বললেন—
“সেইটা তোমার না জানলেও চলবে!”

►রহস্যময়◄

►রাজসাক্ষী◄

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *