
মদীনায় আবু আমের নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী বাস করতো। তার ছেলে ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী হযরত হানযালা (রাঃ)। শহীদ হওয়ার পর ফেরেশতারা তাকে গোসল দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পিতা খৃষ্টধর্মের ওপর অবিচল ছিল। রাসুল (সাঃ) হিজরত করে মদীনায় যাওয়ার পর আবু আমের তার সাথে সাক্ষাত করে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন আপত্তি ও সন্দেহ উত্থাপন করে। রাসুল (সাঃ) তার সকল আপত্তির জবাব দেন। কিন্তু তবু সে সন্তুষ্ট হতে পারে নি। সে বললোঃ আমাদের দুজনের মধ্যে যে মিথ্যুক সে যেন অভিশপ্ত ও আত্মীয় সজন থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। সে রাসুল (সাঃ) কে একথাও জানিয়ে দিল যে, সে রাসুল (সাঃ) এর শত্রুদেরকে সবসময় সাহায্য করতে থাকবে।
নিজের এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সে বদর থেকে হুনাইন পর্যন্ত সকল যুদ্ধে মুসলমানদের শত্রুদের পক্ষ অবলম্বন করে। হুনায়েনের যুদ্ধে যখন হাওয়াযেনের মত বিশালাকায় গোত্র মুসলমানদের কাছে হেরে গেল, তখন সে ভগ্ন হৃদয়ে তৎকালীন খৃষ্টধর্মের ঘাটি সিরিয়ায় চলে যায় এবং আত্মীয় সবজন থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। এভাবে তার নিজের বদদোয়া ও অভিশাপ দ্বারা সে নিজেই ঘায়েল হয়।
জীবদ্দশায় আবু আমের পাদ্রী আজীবন ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুতা করে। এমনকি সে রোম সম্রাটকে মদীনায় আক্রমণ চালিয়ে মুসলমানদের নাম নিশানা মুছে ফেলার প্ররোচনাও দিয়েছিল। মদীনার মুসলমানদের মধ্যে যারা বর্ণচোরা, ভণ্ড ও মোনাফেক ছিল, সরবকালের ও সরবদেশের মোনাফেকদের মতই তাদেরাও ইহুদী ও খৃষ্টানদের ক্রীড়নক ছিল। বিশেষতঃ আবু আমেরের তারা খুবই ভক্ত ও অনুগত ছিল।
আবু আমের এই মোনাফেকদের কাছে চিঠি লিখলো যে, আমি রোম সম্রাটকে মদীনা আক্রমণ করার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু সম্রাটের বাহিনীকে সহযোগিতা করে এমন একটি দল মদীনাতেও সংঘটিত হওয়া জরুরী। এ জন্য তোমরা মদীনায় মসজীদের নাম দিয়ে একটি গৃহ নির্মাণ কর, যেন মদীনার মুসলমানদের মনে কোন সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। সেই গৃহে নিজেরা সমবেত হও, কিছু আস্ত্রশস্ত্র সাজসরঞ্জাম তাতে সংগ্রহ করে রাখ।
তার এ চিঠির ভিত্তিতে বারোজন মোনাফেক মদীনায় কোবা মহল্লায় একটি মসজীদ নির্মাণ করলো। এই মহল্লায় রাসুল (সাঃ) হিজরত করে এসে প্রথম অবস্থান করেছিলেন এবং একটি মসজীদ তৈরি করেছিলেন। অতঃপর তারা স্থির করলো যে, ঐ মসজীদে রাসুল (সাঃ) এর দারা এক ওয়াক্ত নামাজ পড়াবে। এতে মুসলমানদের মনে আর কোন সন্দেহ থাকবে না। বুঝবে, এটাও অন্যান্য মসজিদের মতই একটা মসজিদ।
তাদের একটি প্রতিনিধি দল রাসুল (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাত করে বুঝল যে, কোবার বর্তমান মসজিদটি অনেক দূরে অবস্থিত। দূর্বল ও অসুস্থ লোকেরা অত দূরে যেতে পারে না। তাছাড়া ওখানে সব লোকের সংকলানও হয় না। তাই আমরা আর একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। আপনি এতে এক ওয়াক্ত নামায পড়ে উদ্বোধন করে দিয়ে যান।
রাসুল (সাঃ) তখন তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাই ওয়াদা করলেন যে, যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তিনি ওখানে নামায পড়বেন। কিন্তু তাবুক থেকে ফিরার পথে সূরা তাওবার সংশ্লিষ্ট আয়াত কয়টি নাযিল করে আল্লাহ তাকে নামায পড়তে নিষেধ করলেন এবং তাকে ‘মসজিদে জেরার’ (ক্ষতিকর মসজিদ) নামে আক্ষায়িত করলেন। রাসুল (সাঃ) এই নির্দেশ অনুসারে নামায তো পড়লেনই না, অধিকন্তু কতিপয় সাহাবীকে পাঠিয়ে দিয়ে মসজিদটি আগুনে ধরিয়ে পুড়িয়ে দিলেন।
সূরা তাওবার সংশ্লিষ্ট আয়াতে এই মসজিদকে তিনটি কারণে মসজিদে যিরার বলা হয়েছেঃ এক, তা দারা ইসলামের ক্ষতিসাধন ও কুফরী প্রতিষ্ঠার সংকল্প করা হয়েছিল। দুই, তা দারা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। তিন, সেখানে ইসলামের শত্রুদেরকে আশ্রয় দেয়ার ফন্দি আটা হয়েছিল।
উল্লিখিত তিনটি উদ্দেশ্যে যখন যেখানেই কোন গৃহ নির্মাণ, কোন দল বা প্রতিষ্ঠান গঠন কিংবা আর কোন ধরনের স্থাপনার কাজ করা হবে, তখন তা মসজিদে যিরারেরই পর্যায়ভুক্ত হবে এবং মুসলমানদের কর্তব্য হবে তা প্রথম সুযোগেই ধ্বংস করা, চাই তা মসজিদ বা অন্য কোন আকারেই গঠিত হোক। এ কারণে হযরত ওমর (রাঃ) এক মসজিদের পাশে আর একটি মসজিদ নির্মাণ করতে নিষেধ করেন। অনুরূপভাবে কোন প্রতিষ্ঠিত ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় নিয়োজিত দল বা সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান গঠন করা বৈধ হবে না।