★কালোযাদুর মায়া—- HeX

এক-

বাড়ির বড় ছেলে মাহিন। বাবা মারা পর সমস্ত পরিবারের দায়িত্ব তার ঘাড়ে এসে পড়ে। বাসায় তার ছোট বোন,এক ছোট্ট ভাই আর মা আছে।
ছোট বোনটা বড় হয়েছে। তার বিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। ভাল পাত্র যারা দেখতে আসছে সবাই ডিম্যান্ড দাবি করছে। তার বোনের নাম মাইশা।
দেখতে আহামরি সুন্দর না হলেও খুব মায়াবী চেহারা আর পাতলা শরীর। কিন্তু তবুও বরপক্ষ ডিম্যান্ড চাচ্ছে। এইদিকে মা তাকে (মাহিনকে)
বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। মাহিন একটা প্রাইভেট ফার্ম এ মধ্যম কর্মকর্তা। বেতন মাত্র ২৫,০০০ টাকা। এই সামান্যকটা টাকা দিয়ে পুরো সংসারের সমস্ত কিছু
চালাতে হয়। তার উপর ছোট্ট ভাইটার লেখাপড়ার খরচ, বোনটার বিয়ের জন্য টাকা দরকার। সামনে তো ঈদ আসছে ঈদের বোনাস দিয়ে তাদের
সকলের জন্য নতুন জামাকাপড় কেনা, আরো নানা রকম চিন্তা করতে করতে মাহিন সিগারেটে লম্বা টান দিচ্ছিল। নিজের পরিবারের সুখের জন্য সে তার
স্বপ্ন, ভালোবাসা সব বিসর্জন দিয়েছে। এর মধ্যে মায়ের শরীরটা ভাল না। ডাক্তার বলেছে কিডনিতে পাথর হয়েছে তাই অপারেশন করতে
হবে। তার জন্য এবার তাকে টাকাপয়সার হিসাব মিলাতে হিমশীম খেতে হচ্ছে। মাহিনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু সিয়াম। মাহিনের সাথেই চাকরী করত।
তবে কয়েকদিনের পরিশ্রমে আজ ছেলেটা নিজের একটা প্রাইভেট ফার্ম দিয়েছে।

দুই-

মাহিনের এই করুন অবস্থা সিয়াম সহ্য করতে পারছে না। হাজার হলেও তো ছোটবেলা থেকে প্রাণের বন্ধু। মাহিন আজ সিয়ামের সাথে দেখা করতে এসেছে। কিন্তু চিরচেনা সেই সিয়ামকে আজ যেন অন্য কেও মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সিয়াম নিজেই নীরবতা ভাঙল। সিয়াম – দোস্ত তোর দিনকাল কেমন যাচ্ছে? মাহিন
– তা তো দেখছিস। তোর কাছে কি আর লুকানোর কিছু আছে। সিয়াম – দেখ দুই আমার দোস্ত কম ভাই। তোর এই
অবস্থা আমার সহ্য হচ্ছে না। আজ আমি তোকে আমার সফলতার গোপন রহস্য বলছি। তুই কি কালোযাদুতে বিশ্বাস করিস? মাহিন – কি যাতা বলছিস? যাদু
বলে পৃথিবীতে কিছু নেই! সিয়াম – দেখ, তুই আমার জানের বন্ধু। তোর কাছে লুকনোর কিছু নেই। হ্যাঁ, আমি সব সাফল্য পেয়েছি কালো যাদুর মাধ্যমে। আর আমি তোকেও
কালোযাদু করতে বলছি। মাহিন সিয়ামের এসব কথা শুনে একবারে নিঃস্তব্ধ হয়ে আছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভেসে উঠল ছোট্ট ভাইকে প্রমিস দেওয়া অনেক জামা-
উপহারের কথা। বোনের বিয়ের কথা। মায়ের রোগাক্রান্ত চেহারা। মাহিন – কিন্তু কিভাবে কি? আর এসব তো অনৈতিক। সিয়াম – দেখ ভাই অন্তত নিজের
পরিবারের কথা চিন্তা কর। এতদিন তো নৈতিকতা নিয়ে থাকলি। কি লাভ হলো? মাহিন – হুম। বল কি করতে হবে? সিয়াম – কাল রাত
পুর্নিমার রাত। কাল ঠিক ১২টায় আমার সাথে শ্মশানে দেখা করিস। শোন শ্মশানে নানা রকম অদ্ভুত আর ভয়ংকর জিনিস দেখতে ও শুনতে পাবি। এই লকেটটা
গলায় রাখ। এই লকেট থাকতে কেও তোর ক্ষতি করতে পারবে না তবে সাবধান! তারা নানা ভয় দেখিয়ে তোকে এই লকেট খুলাতে চেষ্টা করবে। ভুলেও খুলবি না। শ্মশানের একদম শেষপ্রান্তে আমাকে দেখতে পাবি।

তিন-

মাহিন ভয়ে ভয়ে শ্মশানে ঢুকল। কিছুক্ষ্ণ পর সে শুনতে পেল কেও একজন বলছে লকেটটা খুলে ফেল নইলে আজ তোকে মেরে তোর রক্তে আমার তৃষ্ণা মেটাব। সে তবুও মনে
সাহস নিয়ে এগিয়ে চলল। কিছুক্ষন পর সে যা দেখল তার জিন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তার ভাই-বোন ও মা চেঁচাচ্ছে আর বলছে লকেটটা খুলে ফেল। ওই লকেটই নাকি তাদের
মৃত্যুর কারণ হবে। বন্ধুর সতর্কবাণীর কথা মনে পড়ে গেল তার। অবশেষে সে শ্মশানের শেষপ্রান্তে গিয়ে দেখলে সিয়াম অদ্ভুত
ভঙ্গিতে বসে আছে। তার কাছে যেতেই সে বলল, “বসে পড়। আর চোখ বন্ধ করে থাক। যা কিছুই হোক না কেন চোখ খুলবি না।” মাহিন চোখ
বন্ধ করে ভয়ংকর ও অদ্ভুত নানা জিনিস দেখতে পেল। তবুও বন্ধুর উপর পুরো বিশ্বাসের জন্য সে চোখ বুজেই রইল । হঠাত সিয়াম তাকে চোখ
খুলতে বলল। সিয়াম বলল যাক, তুই প্রথম পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিস। তারপির সিয়াম অদ্ভুতভাবে কিছু ত্রিভূজ আর গোল বৃত্ত দিয়ে নকশা তৈরি করল ।
তারপর কি যেন উচ্চারণ করতেই তার মাঝে আগুন লেগে গেল। এরপর দেখল যে তার সামনে এক বিরাট দানব উপস্থিত। সে এবার তাকে একটি মরা
মানুষের খুলিতে রক্ত পান করতে দিল। সিয়ামের চোখের দিকে তাকাতেই সিয়াম তা পান করতে ঈশারা করল। বহু কষ্টে তা পান করে সিয়াম কি যেন অদ্ভুত
কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে কিছু একটা করতে শুরু করল। তারপর আমার হাতে এক পুতুল দিয়ে বলল কাল যেভাবেই হোক তোর ফার্মের বসের চুল কিংবা
শরীরের কোনো কিছু এই পুতুলে রাখবি আর একটা একটা করে এই পাঁচটা পিন ঢুকাবি আর এই মন্ত্র উচ্চারণ করবি।

চার-
.
সিয়ামের নির্দেশ অনযায়ী সে সব করল এবং পরেরদিন ফার্মে গিয়ে জানতে পারল তার বস মারা গেছেন এবং তাকে নতুন বস করার উইল করে
গেছেন। এই খবর শুনে সে খুশিতে আত্মহারা! যাক, এইবার সে নির্দ্বিধায় বোনটার বিয়ে দিতে পারবে। মায়ের চিকিৎসা করাতে পারবে আর ছোট
ভাইটির সব আবদার রাখতে পারবে। তার কয়েকদিন পর ঈদ আসল। মা এখন সম্পুর্ন সুস্থ। ছোট ভাই অনেক নতুন জামা আর উপহার পেয়ে খুশি।
বোনের বিয়ে হয়েছে এক প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তাও আবার কোনো প্রকার ডিম্যান্ড ছাড়াই! মা ছেলেকে নিয়ে অনেক গর্ব করছে আর
বলছে, “বাবা, তোর মতো ছেলে যেন সব মায়েরাই পায়!” মাহিন তার পুর্বের কর্মের কথা চিন্তা করল আর উদাস হয়ে গেল তবে মাকে কিছু বুঝতে দিল না। পাঁচ-
কিছুদিন পর হঠাত জানতে পারল সিয়ামের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে! ডাক্তার পুলিশ কেও সেই রহস্যের সমাধান করতে পারে নি। কিন্তু মাহিন ঠিকই বুঝতে পারে এই অভিশপ্ত কালোযাদুর কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। বন্ধুর জন্য তার বুকটা হাহাকার করে উঠে। যেই বন্ধুর জন্য আজ তার পরিবারে এত সুখ সেই বন্ধুই হারিয়ে গেল চিরতরে
অজানার দেশে বাসায় সিয়ামের এই খবর জানতে পেরে সবাই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল। মাইশা এই খবর শুনে অনেক ভেঙ্গে পড়লো
কারণ সিয়াম কখনই তাকে নিজের ছোট বোনের চাইতে কম আদর করে নি। সিয়ামের নিজের ভাই- বোন ছিল না তাই মাহিনের পরিবার তাকেও(সিয়ামকে)
পরিবারের সদস্য হিসেবে দেখত। তার মৃত্যু আজও কারণ আজও রহস্যই রয়ে গেল। ছয়- কিছুদিন পর সিয়ামের ন্যায় মাহিনও রহস্যজনকভাবে মারা
গেল। তার হাসিখুশি পরিবারে নেমে এল শোকের ছায়া। ছোট ভাইটা ট্যালেন্টফুল এ বৃত্তি পেয়েছে। ভেবেছিল ভাইয়াকে এসে জড়িয়ে ধরে এই খবর দিবে। কিন্তু নির্মম বাস্তবতা ছোট্ট
শিশুটির এই আকাঙ্খা পূরণ হতে দেয় নি। সিয়াম আর
মাহিন কিভাবে মারা গেল তা রহস্যই রয়ে গেল কারণটা অজানা নয়। এক কুখ্যাত জাদুকর বলেছিল, “জাদুর মায়ায় যা পাবে, সবঈ হারাবে। সাথে হারিয়ে যাবে নিজেও। ”

— গল্পটি পাঠিয়েছেন-

-HeX–রংপুর থেকে

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!