
প্রচণ্ড শীত। আমি, আমার জামাই এবং আমার জামাইয়ের এক বন্ধু, উনার মিসেস নিয়ে বেড়াতে এসেছি ময়মনসিংহে। আমাদের এক আত্মীয়ের বাসা ফাঁকা পড়ে আছে। সেখানেই উঠলাম আমরা। বাসাটা ছিল খুবই নিরিবিলি। পাশে একটা পুকুর আর চারিদিকে অনেক গাছপালা। বাসার পিছনে অনেক দূর পর্যন্ত ফাঁকা মাঠ। আশেপাশে কোনো বাড়িঘর নেই।
সেদিন রাতে, আমার জামাইয়ের আরেক বন্ধু রাজীব আসলো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। সে ময়মনসিংহেই থাকতো, বিজনেস করে। আমরা আড্ডা দিতে দিতে রাত প্রায় ১০টা বেজে গেলো। তখন রাজীব বলল, আমাদেরকে তার একটা প্রোজেক্টে নিয়ে যাবে। বের হলাম। মেইন রোড দিয়ে রাস্তা নেই, তাই মাটির রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছিল। চারপাশে শুধু ফসলের ক্ষেত আর পুকুর। মানুষজনের অস্তিত্ব চোখে পড়লো না।
যাই হোক, অবশেষে আমরা তার প্রোজেক্টে পৌঁছলাম। সেখানে একজন দারোয়ান আর একজন কাজের লোক নিয়ে সে থাকতো। তার রুমে বসে আবার আড্ডা জমে উঠলো। কথায় কথায়, জীন-ভূতের প্রসঙ্গ আসলো। একজন একজন তাদের জানা ভুতের ঘটনা বলছিল। পরিবেশটা এমন ছিল যে, সামান্য কথাতেই অনেক বেশি ভয় লাগছিল। আর রাজীব কারো কথাই বিশ্বাস করছিল না। আমরা যেই গল্পই বলছিলাম, উনি হেসে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন।
এভাবে তর্কে-বিতর্কে রাত কখন ২টা বেজে গেছে, আমরা কেউ খেয়াল করিনি। বাসায় ফেরার কথা মাথায় আসলো। রাজীব আমাদেরকে পৌঁছে দেয়ার জন্য গাড়ি বের করলো। রাজীব গাড়ি চালাচ্ছে। প্রচণ্ড কুয়াশায় ২ হাত দূরের জিনিসও ভালো করে দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে গাড়ি থেমে গেল। স্পষ্ট দেখতে পেলাম, রাজীবের পাশের গ্লাসে একটা রক্তমাখা হাত আঁচড়িয়ে আঁচড়িয়ে গ্লাসটা খোলার চেষ্টা করছে।
অসম্ভব ভয়ে আমার হৃদপিণ্ড যেন থেমে গেছে। চিৎকার দিতে ভুলে গেছি। সেই রক্তমাখা হাতটার নখের আঁচড়ে যেন গ্লাসটা ফেটে যাবে। রাজীব একনাগাড়ে গাড়ি স্টার্ট করার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ গাড়ি স্টার্ট নেয় এবং রাজীব একটানে গাড়িটি বের করে ঝড়ের বেগে ছোটাতে লাগলো।
কোনোরকমে সে রাতে বাসায় পৌঁছেছিলাম। রাজীবকে সেই রাতে আর বাসায় ফিরতে দেইনি আমরা। পরদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যাই সবাই।