►ভূতের ছায়া◄

আমার কাজিনরা যখন বাসায় আসত, তখন দিন নেই রাত নেই, যখন-তখন আমরা সবাই মিলে ছাদে চলে যেতাম আড্ডা দিতে। আসলে আমাদের বাসাটা একটু ছোট ছিল, তাই অনেকে একসাথে বসে আড্ডা জমাতে কষ্ট হতো। তো, জুলাই মাসের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমার ৪টা কাজিন বাসায় চলে আসে। ১০ দিন থাকবে। ঘোরাফেরা, আড্ডাবাজি করে সময় কাটাবো।

সেদিন ছিল মঙ্গলবার। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়। বিকেলবেলা বৃষ্টি হয়েছে, তারপরও গরম খুব একটা কমেনি। হঠাৎ সিহাব (আমার মামাতো ভাই) প্রস্তাব দিল ছাদে গিয়ে গল্প করার। কারেন্ট আসলে নেমে পড়বো। আমিও ভেবে দেখলাম প্রস্তাবটা মন্দ না। এখানে বসে গরমে সিদ্ধ হওয়ার চেয়ে উপরে গিয়ে ঘুরে আসা যায়। ৫ ভাই-বোন (আমি আর আমার ৪ কাজিন) মিলে পাটি নিয়ে উঠে গেলাম ছাদে। উদ্দেশ্য, গা এলিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করা।

আমরা ছাদে ওঠার প্রায় মিনিট দশেক পর হঠাৎ ধুপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ হলো। শিপন উঠে গিয়ে ছাদের রেলিং ধরে উঁকি দিল। কিছু পড়ল কি না বোঝার জন্য। বাড়ির পাশেই একটি গলির মতো জায়গা, সেখানে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না ভালো করে। যাই হোক, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ভুলে গিয়ে আবারো আড্ডায় মন দিলাম আমরা।

এইবার আমাদের পাশের বাড়ির ছাদ থেকে কেমন অদ্ভুত একটা শব্দ হলো। সেই শব্দটা বর্ণনা করতে পারবো না আমি। কিন্তু সেই রাতে আমরা সবাই শুনেছিলাম শব্দটি। সিহাব বসা থেকে উঠে বলল, “আমি দেখে আসছি।” আমরা ছাদের একপাশে বসেছিলাম, আর যেই ছাদ থেকে শব্দটি এলো সেই ছাদটা অপর পাশে ছিল। সিহাব যাওয়ার সাথে সাথেই দ্বিগুণ বেগে ফিরে এলো। বলল, “ঐ বাড়ির ছাদে যেন কে আছে!”

আমি বললাম, “হয়তো ঐ বাড়ির কেউ উঠেছে। বাদ দে!”

সিহাব বলল, “বুঝলাম না। আমার কাছে কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো। যেন কোনো মানুষ না, শুধু একটা কালো ছায়া!”

প্রথমে আমি পাত্তা দিলাম না। কিন্তু মৌ কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে গেল। বলল, “এতো রাতে ছাদে না থাকলেই ভালো। চলো নিচে চলে যাই।”

নামার পথে পাশের বাড়ির ছাদটা চোখে পড়ে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, আসলেই কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে! সারা গায়ে যেন একটা কালো চাদর জড়ানো। আমাদের বাড়ির ছাদে একটি মার্কেটিং বোর্ড লাগানো। কারেন্ট না থাকলেও তা সন্ধ্যার পর সবসময় জ্বলে। তা থেকে আলোর প্রতিফলনের ফলে আমাদের ছাদের ঢোকার রাস্তা এবং আশেপাশের জায়গা একটু আলোকিত হয়। তবে তাতে ঠিক আঁধার কাটে না, শুধু কোনো কিছুর অস্তিত্ব বোঝা যায়।

যাই হোক, সেই কালো মূর্তি দেখে আসলেই ভয় পেলাম। একে তো অন্ধকার, তার ওপর কালো চাদরে ঢাকা কেউ একজন! ব্যাপারটা ভূতুড়ে করে ফেলল। আমার দেখাদেখি বাকিরাও এসে পাশে দাঁড়ালো। সবার চোখেই বিস্ময়।

মৌ ফিসফিস করে বলল, “ঐটা কে রে, আপুনি?”

আমি বললাম, “বুঝতে পারছি না। ঐ বাসায় তো শুধু হাকিম চাচ্চুরা থাকেন। উপরের ২ তলা ফাঁকা, ভাড়াটিয়া নেই। আর এতো রাতে হাকিম চাচ্চুর ছাদে আসার কথা নয়।”

তখনো অনেক কিছু ঘটার বাকি ছিল। অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম, সেই মূর্তির পাশে আর একটা মূর্তি এসে দাঁড়ালো! ২টা ছায়া! এবং ২টাই কালো চাদরে ঢাকা! খানিক বাদে দেখলাম ৩টা হয়ে গেল!

ভয়ে তখন যার যার জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে আছি আমরা। হঠাৎ শিপন ফিসফিস করে বলল, “আমার কাছে ব্যাপারটা সুবিধার মনে হচ্ছে না। চলো, নিচে চলে যাই।”

সবাই নিচে নামার জন্য রাজি। সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতে যাবো, এমন সময় কারেন্ট চলে এলো। সাথে সাথে তাকিয়ে দেখলাম পাশের ছাদের দিকে—কেউ নেই! ৩টা ছায়া তো দূরের কথা, কাউকেই দেখতে পেলাম না! অথচ হাকিম চাচ্চুদের ছাদের পুরো অংশ দেখা যায় আমাদের ছাদে ওঠার রাস্তা থেকে!

এবার আর দেরি করলাম না। দ্রুত নেমে পড়লাম। মনের মধ্যে কেমন যেন উসখুস করতে লাগল। কিন্তু তবুও আম্মু-আব্বুকে কিছু জানালাম না সেই রাতে।

পরের দিন, কৌশলে আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম, “হাকিম চাচ্চুদের বাসায় কোনো ভাড়াটিয়া আসছে কি না?”

আম্মুর উত্তর শুনে চমকে উঠলাম।

হাকিম চাচ্চুদের বাসায় ভাড়াটিয়া তো দূরের কথা, এমনকি উনারাও নেই! চাচ্চু কি একটা কারণে দেশের বাইরে গেছেন এবং উনার ওয়াইফও সাথে গেছেন। ৩ তলা বাড়িটা পুরোটাই এখন খালি!

কিছু অস্বাভাবিক তথ্য

গালের মোটা ভাব কীভাবে কমানো যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *