
কোনো এক নীরব গ্রামের মেঠো পথ ধরে এক রিকশা চালক রিকশা চালিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে। সূর্য পশ্চিমে লাল হয়ে গেছে, একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। আগে ভাগেই বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম নেয়ার কথা ভাবতে ভাবতে চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ সামনে দুজন লোক দাঁড়িয়ে তাকে থামানোর জন্য হাত দেখাচ্ছে। চালক ভাবলো, দিনের শেষের খ্যাপটা মেরেই একবারে বাড়ি চলে যাই। তাদের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কোথায় যাবেন বাহে?’ জিজ্ঞেস করেই দেখলো, তাদের সঙ্গে পাটিতে বাধা একটা লাশ। তারা বলল, গোরস্তানে যাব, দাফন করতে হবে। সবাই ওখানেই আছে, শুধু লাশটা নিয়ে যেতে হবে।
রিকশা চালক বলল, ‘গোরস্তান তো ১০ থেকে ১২ মাইল দূরে, তাও আবার লাশ, পারবোনা বাহে’। তারা বলল, ‘তোমাকে ৫০০ টাকা দেবো’। চালক ভাবলো, সারাদিন রিকশা চালিয়ে পেলাম ১৫০ টাকা, আর এক খ্যাপে ৫০০ টাকা! ‘ঠিক আছে, লাশ উঠান’। তারা বলল, ‘লাশ কি আর পায়ের তলে নিয়ে যাব? তুমি বরং লাশ নিয়ে যাও, আমরা অন্য রিকশা নিয়ে পেছন পেছন আসছি’।
‘ঠিক আছে, একটু সুন্দর করে ধরে উঠাই দেন’। লাশ নিয়ে রিকশা চালক ছুটলো গোরস্তানের দিকে। মাইল দু’এক দূরে গিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে তাদের কোনো খবর নেই। সে ভাবলো, মনে হয় রিকশা পায়নি, তাই দেরি হচ্ছে, সে আবার রিকশা চালাতে লাগল। মাটির পথের দু’ধারে কড়ই, মেহেগুনী আর কৃষ্ণচূড়া গাছের সারি, এরই মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ঘুট ঘুট অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে ভাবলো, হারিকেনটা জ্বালিয়ে নেই। হারিকেন জ্বালিয়ে কিছু দূর যেতেই ধপাস করে একটা ছোট গর্তে ধাক্কা খেল। ওমনিতেই কে যেন বলে উঠল, ‘অই, আসতে চালা’।
রিকশা চালক ডানে-বামে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই, শুধু অন্ধকার আর ঝিঁঝিঁ পোকার চিঁচিঁ করে শব্দ করছে, যেন কানের পর্দা ফেটে যাবে। সে ভাবল, ‘দূর, মনে হয় বুল শুনছি, লাশ কি আর কথা কয়?’ এই বলে সে আবার চালাতে লাগলো। কিছু দূর যেতেই আবার এক গর্তে ঝাকি লাগলো, ওমনিতেই আবার কে যেন বলে উঠলো, ‘অই, কইছি না আসতে চালা, ব্যথা পাই’।
এবার তো ভয় পেয়ে গেল সে এবং জোরে জোরে চালাতে লাগলো। আবার কিছু দূর যেতেই এক গর্তে ধপাস, লাশ পড়ে গেল মাটিতে, ওমনিতেই ‘মাগো, বাবাগো, ঘাড়টা ভেঙে ফেলেছে, ব্যাটা তোরে না কইছি, আসতে চালাতে! খাড়া আইসক্যা তোরে খাইছি, তোর ঘাড় মটকাইয়া খামু’।
রিকশা চালক দেখে, লাশ নড়ে চড়ে আবার গালাগালিও করে। ‘খাইছে লাশ, দেহি অন্ধার পাইয়া জ্যাতা আইয়া গ্যাছে, ওরে বাবারে, আল্লারে বাঁচাও… ভূত… ভূত…!’ এই বলে রিকশা চালক এলোপাথারি ধান খেতের উপর দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর, ঐ দুইটা লোক অন্য একটা রিকশা নিয়ে এসে, মুঠো বাধাঁ লাশটা খুলে রিকশা নিয়ে পালিয়ে গেল। দেখা গেল, এতো লাশও না, ভূতও না, এ যে জীবিত মানুষ! এতো অভিনব পন্থায় রিকশা চুরির কৌশল।