►বামন ভূত◄

একরাশ অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙল রুদ্রের।

প্রথমে কিছুক্ষণ কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারল না।

তারপর চোখ গেল হাতঘড়ির দিকে। সকাল

ছয়টা বেজে পনেরো মিনিট। ব্যাপার কি, এত

সকালে তো তার ঘুম ভাঙে না! এতক্ষণে ঘরের

কোনার গাছটি লক্ষ করল সে। গাছ! তার শোবার

ঘরের ভেতর গাছ আসল কোত্থেকে?

সাথে সাথে তড়াক করে বিছানায় উঠে বসল রুদ্র।

ঘরের মধ্যে একটি খুদে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।

মেরেকেটে দেড় ফুট লম্বা হবে কি না সন্দেহ।

পরনে কটকটে হলুদ রঙের জ্যাকেট আর নীল

প্যান্ট।

– আহ্! ঘুম ভাঙল তাহলে।

রুদ্র কী বলবে ভেবে পেল না।

তাকিয়ে আছে হাঁ করে।

– অবাক হচ্ছ? অবশ্য অবাক হবারই কথা।

আমি একজন পাতালবাসী বামন ভুত। তুমি এর

আগে কখনও ভুত দেখনি মনে হচ্ছে? কী উদ্ভট

ব্যাপার!

রুদ্র এখনও বিছানায় বসে আছে। কথার উত্তর

দেবে কি, ভয়ে তার ব্রহ্মতালু পর্যন্ত

শুকিয়ে গেছে।

– আরে ভেবো না, আগেও আমি এ ধরনের

ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমার নাম

আভান্তিকা রাপ্টাপুলাস। এসো পরিচিত হই।

বামন ভুতটি এখন তার বিছানার

দিকে এগিয়ে আসছে!

রুদ্র খিঁচে বাথরুমের দিকে দৌড় দিল। হৃদপিণ্ড

ধুকপুক করছে, তবু এর মধ্যেই তাকিয়ে দেখল পেছন

দিকে। না, ভুতটা তাকে তাড়া করছে না।

বাথরুমে ঢুকে দড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল ভেতর

থেকে।

রাপ্টাপুলাস একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। খুবই

অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে তাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই

অবশ্য মনোযোগ দেয়ার মতো একটা জিনিস

খুঁজে পেল সে। ঘরের চতুর্দিকের দেয়ালে দুর্দান্ত

সব তৈলচিত্র ঝোলানো।

খুটিয়ে খুটিয়ে ছবিগুলো দেখতে শুরু করল সে, যেন

কতই না জরুরি কাজ এটা!

***

শেষ বিকেলে রুদ্র আবার পা টিপে টিপে শোবার

ঘরে ঢুকল।

“যাক, ফিরে এলে তাহলে!” ভুতটার কণ্ঠ

খুশি খুশি শোনাল, “আমি ভেবেছিলাম আর তোমার

দেখা পাব না।”

“এসব আমার কল্পনা। তুই মোটেও সত্যি না।”

রুদ্র ভয়ে ভয়ে বলল।

রাপ্টাপুলাসকে বেশ হতাশ দেখাল।

“শুনে খুশি হতে পারলাম না। তোমার

ব্যাপারে আমাকে এমন কিছু কি বলতে শুনেছ?”

“ভাগ!” রুদ্র এবার চিৎকার করল।

রাপ্টাপুলাস তার লম্বা নাকখানি চুলকাল। “এই যে,

বর্দ্দা। আমরা এ ব্যাপারে কথা বলতে পারি না?”

জবাবে রুদ্র তার পায়ের জুতো খুলে ছুড়ে মারল

রাপ্টাপুলাসের দিকে।

বামন ভুতটি কুঁই কুঁই করে উঠল কুকুরছানার মতো।

তবে রুদ্র বুঝতে পারল আসলে এটা তার আতঙ্কিত

চিৎকার। কারণ ভুতটি ঝাঁপ দিয়ে গাছের

আড়ালে চলে গেছে।

***

রাতটা বাথটাবেই ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল রুদ্র।

বাথরুমের দরজা লক করা আছে ভেতর থেকে। বামন

ভুতটা ভেতরে আসতে পারবে না।

ভন্ ভন্ ভনন্। একটা নীল রঙের বড়

ডুমো মাছি অনেকক্ষণ ধরে ঘুরছে। একটু পরপরই

বসতে চাইছে রুদ্রের নাকের ওপর। এক

থাবড়া দিয়ে মাছিটাকে মেরে ফেলল সে। ধুত্তরি!

ঘুমটাই চটকে গেল।

বাথটাব থেকে উঠতে যাবে, চারদিকের দৃশ্য

দেখে চমকে গেল রুদ্র। বাথরুমটা ঘন

ঝোপঝাড়ে ভর্তি হয়ে গেছে। অটুট

নিস্তব্ধতা চারদিকে। রুদ্র তার পায়ের

দিকে তাকাল। সাদা বাথটাবটা ধীরে ধীরে গাঢ়

রং ধারণ করছে!

দেখতে দেখতে ওটা ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেল। রুদ্র

নড়ার চেষ্টা করল, কিন্তু কী এক অদ্ভুত জড়তায়

যেন পেয়ে বসেছে তাকে। কয়েক মিনিটের ব্যর্থ

লড়াই শেষে রুদ্র আর

বলতে পারবে না কী হলো তার…

***

“তো,” ডাক্তার মশাই তার

লম্বা নাকখানি চুলকালেন। “তোমার সর্বশেষ

মতিভ্রম সহিংসতায় রূপ নিয়েছিল?”

রাপ্টাপুলাস মাথা নেড়ে সায় দিল। সে বিছানায়

মাথা এলিয়ে পড়ে আছে। পরনে কটকটে হলুদ রঙের

জ্যাকেট আর নীল প্যান্ট।

সাইকিয়াট্রিস্ট চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন।

“কিন্তু তুমি ঔষধ খাওয়ার পরেই আবার সব গায়েব

হয়ে গেল?”

– হ্যাঁ, কিন্তু মনে হচ্ছিল যেন নিজ হাতে খুন

করলাম।

– ও, এজন্যই তুমি ঔষধ খাওয়া বন্ধ রেখেছ?

“হ্যাঁ,” রাপ্টাপুলাসের কণ্ঠে স্পষ্ট অস্বস্তি।

“আমার কেন যেন মনে হয় এটা ঠিক না। সবকিছু

এত বাস্তব মনে হয়! ঔষধ খেলেই আবার সব

কোথায় গায়েব হয়ে যায়! কোথায় যায় তারা?”

ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, “দেখো আভান্তিকা,

মতিভ্রমে আসক্ত হওয়ায় লজ্জার কিছু নেই।

কিন্তু এই কল্পনার রাজ্যে ভেসে ভেসে আনন্দ

খোঁজা কতটুকু যুক্তিযুক্ত

তা ভেবে দেখবে আশা করি।”

ভুতের ডাক্তার হাসলেন, “আমি বলতে চাইছি,

আমরা সকলেই জানি যে মানুষ

বলতে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই।

এটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক।”

দিয়েছেনঃ Midnite PrinceLast edited by Naim376 at 08/01/2013 21:55:37

top

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!