►বাজী◄

আজ আমি যে ঘটনা শেয়ার করতে যাচ্ছি , তা বেশ কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া । এর আগে কারো সাথে এই ঘটনা শেয়ার করি নি । আজই প্রথম………

ঘটনাটি আমার নানুবাড়িতে ঘটা । জায়গাটি মুন্সীগঞ্জে । আমি তখন ক্লাস নাইনে উঠব । এইটের বার্ষিক পরীক্ষা শেষের ছুটিতে বেড়াতে নানুবাড়িতে গিয়েছি ।

আমার নানুবাড়ি সম্বন্ধে আগেও বেশ কিছু ঘটনা শুনেছিলাম । ওই পুরো ভিটে জুড়েই নাকি বেশ রহস্যময় ঘটনা ঘটতে দেখেছে মানুষজন । তবে এখন নাকি আগের মত আর দেখা যায় না ।

যাই হোক , সেবার ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে বেশ ভালই শীত পড়েছিল । আমরা সব খালাতো ভাই বোন খালা মামারা একত্রিত , শীতের ছুটিতে । সীমাহীন আনন্দ । তাদের মধ্যে আমাদের দুজন খালার নতুন বিয়ে হয়েছে । সুতরাং , নতুন কম বয়সী খালুরাও আমদের মজা মাস্তিতে শামিল । সবাই দারূণ সময় কাটাচ্ছি । কিন্তু , আমাদের কিছু কম বয়সীদের তাতেও যেন মন ভরছিল না । বুঝতেই পারছেন , উঠতি বয়স । রক্তে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা ! সাত-আট দিন না যেতেই আমাদের আর সময় কাটে না । করার মত সব কাজ শেষ ।

এরপরই এল সেই দিন । আজও বারবার পস্তাই । কেন যে সবার মাথায় সেই দুঃসাহসের ভূত চাপিয়েছিলাম । যদি আমাকে আজ কেউ সুযোগ দিত , তবে অবশ্যই ওই দিনের ঘটনা বদলে দিতাম…………

গ্রামে সবাই একটু আগেই ঘুমুতে যায় । তাই আমরা কাজিনদেরও আগে ভাগে বিছানায় যেতে হত । তাই বলে অবশ্য ঘুমিইয়ে পড়ার মত সুবোধ বালক আমরা কেউ ছিলাম না । রাত ভর গল্প-গুজব, তাস খেলা, কিছু বড় ভাইদের (এতও বড় নয় অবশ্য ) সিগারেট খাওয়া চলত অনেকক্ষণ । তবে সেদিন রাতে কিছুই ভাল লাগছিল না । রাত তখন ১০ টার মত বাজে । কথায় কথায় সেদিন আলোচনাতে ভূত প্রসঙ্গ এল । সেখান থেকে এসে পড়ল আমাদের নানুবাড়ির প্রসঙ্গ । সবার ভিন্ন মতামত থাকলেও আমি একেবারেই গাঁজাখুঁড়ি গল্প বলে সব উড়িয়ে দিতাম । সেদিনও তার ব্যতিক্রম হল না । এক পর্যায়ে তর্ক-বিতর্ক থেকে সাহসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেললাম । অস্বীকার করব না , আমি ওখানে সবার ছোট হওয়ার পরও একটু বেশিই বেপরোয়া প্রকৃতির ছিলাম । তাই , সবাইকে এক কথায় ‘ভীতুর ডিম’ বলতে লাগলাম । তখন দুজন ভাইয়া কিছু না মনে করলেও, বাকি দুজনের আঁতে কিছুটা ঘাঁ লাগল । তারা আমাকে বলতে লাগল আমিই বা কী এমন করেছি !

আমার তখন গরম অবস্থা । সাথে সাথে বলে বসলাম, ” ঠিক আছে ! হয়ে যাক বাজি । প্রমাণ হয়ে যাবে, কার বুকের পাঁটা কত বড় ?” তারা তৎক্ষনাৎ রাজি । বাকি দুই ভাই একটু আপত্তি জানালেও, তাদের আপত্তি ধোপে টিকল না ।

আমি নিজেই ঠিক করলাম বাজির বিষয় । আমাদের নানুবাড়ির পারিবারিক গোরস্থান ছিল বাড়ির বেশ কাছেই । গোরস্থানটি ছিল রাস্তার ধার ঘেষে । গোরস্থানের পাশ দিয়ে রাস্তা গিয়ে সেই রাস্তাতে পড়েছে । সবাই চলাচলের জন্য সেই রাস্তা ব্যবহার করে । আমি বাজি ঠিক করলাম , ওই গোরস্তানের মধ্যে দিয়ে কোন আলো ছাড়া পার হয়ে উলটো দিকের রাস্তায় উঠতে হবে । বাজির বিষয় শুনে সবাই একটু থতমত খেয়ে গেল । তারা আশা করেনি , আমি এই ব্যাপারে এতটা সিরিয়াস । আসলে , সত্যি হল আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল , এরকম কিছু একটা করে দেখার, দেখানোর । সেদিন আর এমন মোক্ষম সুযোগ ছাড়লাম না ।

“যেমন কথা তেমন কাজ । রাত তখন প্রায় ১০ টার মত বাজে । আমরা ৫ জন দুটো টর্চ নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লাম । বাড়ির কেউ জানলে আর কষ্ট করে ভূতের খপ্পরে পড়তে হবে না । আমার আম্মাজানই আমাদের জ্যান্ত কবর দিবেন । যাই হোক, হাঁটা চলতে লাগল । চাঁদের বেশ আলো ছিল সেদিন । হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গেলাম গোরস্থানের উলটো ধারের ফটকের কাছে । সেখান থেকে আমাদের দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়ার কথা ।

বাজিটা মূলত ছিল আমার, মাসুম ভাই আর রুম্মান ভাইয়ের মাঝে । সাথে ছিল আমার আপন বড় ভাই নিশাত আর আমার আরেক খালাতো ভাই সনেট ( যিনি আমাদের মাঝে সবার বড় ) ।

ঠিক করা হয়েছিল – সেখান থেকে নিশাত আর রুম্মান ভাইয়া চলে যাবে উলটা পাশে , রাস্তার পাশের মূল ফটকের কাছে । প্রথমে , আমি এপাশ থেকে ওপাশে যাব । আমি পৌছলে সেখান থেকে রুম্মান ভাইয়া আসবে এপাশে । তারপর সবার শেষে মাসুম ভাই চলে যাবে অন্য পাশে । শুধু তো ভূত নয় , এত রাতে রাস্তার ধারে চোর-ডাকাতেরও ভয় ছিল । তাই , কোনো পাশেই যেন কাউকে একা পড়তে না হয় , তাই আমার মস্তিষ্কপ্রসূত এই বুদ্ধি . . . . . .

কথা মত রুম্মান আর নিশাত ভাইয়া চলে গেলেন রাস্তা ধরে অন্য পাশের গেটে । তাদের যাওয়ার ১০ মিনিট পরে আমি রওয়ানা হব । সময় হল । ভাইয়াদের মুখের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে আমি ঢুকে পড়লাম গোরস্থানের ভিতরে ।

চারিদিকে সুনসান নীরবতা । শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক । কবরখানাটি ছিল লম্বাটে আকৃতির । মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা চলে গেছে । দুপাশ ঘেঁষে সারি দিয়ে কবর । ভয়ের বিষয় গাছ আর বাঁশঝাঁড়ের জন্য আলো আসছিল না সেখানে । তার উপর বাজির শর্ত অনুযায়ী আমাকে আলো ছাড়াই পুরোটা পাড় হতে হবে । অস্বীকার করব না , শুরুতে আমার একটু ভয় লাগছিল না এমন নয় । তবে একটু বাদেই সব আজেবাজে ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম ।

মনে মনে এটা নিশ্চিত করলাম – ভূত-ফূত কিছু যদি আসেও , আমি মরার আগে ওকে দু-চার ঘাঁ না দিয়ে মরব না । দোয়া দূরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দিয়ে এগুনো শুরু করলাম । অন্ধকারে কোথায় পা ফেলছি দেখতে পাচ্ছি না । তাতে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেতে পারি – ভেবে বাধ্য হয়ে কবরগুলোর পাকা ধার গুলো ধরে হাতড়ে হাতড়ে এগুতে থাকলাম । তেমন কোন সমস্যা হচ্ছিল না ।

হঠাৎ কিছু একটা ব্যাপার অদ্ভুত ঠেকতে লাগল । বুঝতে পারলাম না ব্যাপারটা কি ? সাবধানে ঘাড় ঘুড়িয়ে চারপাশে খেয়াল করলাম । নাহ ! আশ্চর্যজনক কিছুই চোখে পড়ল না । কিন্তু , আমি নিশ্চিত ছিলাম – কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে । কোন কিছু দেখতে না পেয়ে , ভাবলাম – নিজের মনের ভুলই হবে হয়তো । পরে বুঝতে পেরেছিলাম কোন ভুল হয় নি আমার । তখন একটি ঘটনা ঘটেছিল । যা তখন বুঝতে না পারলেও, পরে ধরতে পেরেছিলাম । যা মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে । যাই হোক , তখন কি হয়েছিল , পরেই বলব ।

ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে একসময় উলটো ধারের গেটের কাছেও পৌছে গেলাম । কোন বিপদ আপদ ঘটল না । কিন্তু খুব আশ্চর্যজনক কারণে আমি পুরো গুম মেরে গিয়েছিলাম । কিছু একটা অস্বাভাবিক কিছু আমার স্নায়ুর উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল । কেন যেন মনে হতে লাগল – খুব খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে । আমি উলটো পাশে পৌছে যাওয়াতে , নিশাত – আমার আপন ভাই , যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । তবে রুম্মান ভাইয়ের তো আরো মাথায় জেদ চেপে গেল । আমি যখন সবার ছোট হয়ে বাজিমাত করেছি , উনার এখন পার হওয়াটা যেন কর্তব্য । একবার ভাবলাম , ভাইকে মানা করি । কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম , এখন মানা করে কোন লাভ হবে না। উনারা কেউই হার মানার ছেলে না । তো রুম্মান ভাইও চলে গেলেন গোরস্থানের ভেতর দিয়ে । এপাশে রয়ে গেলাম আমি আর নিশাত । নিশাত খেয়াল করল , বাজি জেতার উচ্ছলতা নেই আমার মাঝে , বরং কেমন যেন বেমানান রকমের চুপচাপ ছিলাম আমি । ও আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে ? অস্বীকার করলাম না । ভেতর দিয়ে আসার সময়কার সেই অনুভূতির কথা । ও বলল , এটা তেমন কিছু না । অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকে হয়ে থাকবে হয়তো । ও বরং এই বাজির বিষয় ভালয় ভালয় শেষ হলে খুশি । সময় যেতে লাগল । কে জানে রুম্মান ভাইয়া পৌছতে পেরেছে কিনা ? রুম্মান ভাইয়া তখন কিভাবে কি করল – পরে তা উনার মুখে শুনেছি ।

ভেতরে ঢোকার পর আমার মত উনারও একই আলোর সমস্যা হয়েছিল । তবে কিছুদূর যাওয়াড় পর আমার মত উনারও আশ্চর্য কোন অনূভুতি হয়েছিল । কি তা উনিও বুঝতে পারে নি । কোন কারণে উনিও ভয় পেয়েছিল । ঠিক কি তা জানে না, জানার প্রয়োজনও বোধ করেন নি । সোজা দোয়া দূরুদ জপতে জপতে হেঁটে গেছেন এবং অবশেষে অন্যপ্রান্তে পৌছেও গেছেন । তবে একটা গুমোট চাপা আতংক ভর করেছিল উনার মাঝে । উনি পরে স্বীকার করেছিলেন । পরবর্তীতে ওপাশ থেকে মাসুম ভাইয়াও রওয়ানা দেন ।

ইতোমধ্যে আমি আর নিশাত এদিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম , কখন মাসুম ভাইয়া আসবে ; কখন এইসব শেষ হবে ! হঠাৎ করেই পিছনে শব্দ ! পুরোপুরি জমে গেলাম আমরা দুজন । শব্দটা আমাদের কাছে আসতে লাগল । তাকিয়ে দেখলাম আলো । আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে । কাছে আসতেই হাঁফ ছেড়ে বাচলাম । আমাদের ইনু নানা । উনি তখন মসজিদের দায়িত্বে ছিলেন । রাতে অনেকক্ষণ ওখানে থেকে উনি বাড়িতে ফিরতেন । পরহেযগার মানুষ । আমাদের এমন সময়ে এমন জায়গায় দেখে উনার তো চক্ষুচড়কগাছ । জিজ্ঞেস করলেন কি করছি ওখানে । আমরা সত্য-মিথ্যা দুই-ই বললাম । কারণ , জানতাম উনি আমাদের বাড়িতে না নিয়ে ফিরবেন না ; আর আমরাও মাসুম ভাইকে ফেলে যেতে পারি না । তাই বললাম, মাসুম একটু সাহস দেখিয়ে কবরস্থানের ভিতরে গিয়েছে, এখনি চলে আসবে । উনি তখনই আমাদের বকাঝকা শুরু করলেন । ঠিক তখনই গগন বিদারি চিৎকার ভেসে আসল ভিতর থেকে । মাসুম ভাইয়ের গলা চিনতে ভুল করলাম না কেউই । সাথে সাথে নানু আমাদের বাইরে থাকতে বলে ভিতরে ঢুকে গেলেন । আমরা যেতে চাচ্ছিলাম । কিন্তু উনার চাউনি দেখে আর সাহস করলাম না ….

নানা ভিতরে ঢুকে গেলেন । একটু পরেই ভিতর থেকে এক ধরনের হুটোপুঁটির শব্দ ভেসে এল । কিছুক্ষণ পরে নানুজান টলতে টলতে বের হয়ে আসছেন , সাথে মাসুম ভাই । থরথর করে কাঁপছেন । কি হয়েছে – জিজ্ঞেস করার মত পরিস্থিতি কারো ছিল না । নানুকে দেখলাম কেমন যেন উদভ্রান্ত দেখাচ্ছিল । উনাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, “নানু, কি হয়েছে ? ” উনি বলল ,তেমন কিছু না । মাসুম ভাই মনে হয় এমনিই ভয় পেয়েছে । আমার স্পষ্ট মনে হল উনি কিছু এড়িয়ে গেলেন । মাসুম ভাইকে আমরা শক্ত করে ধরলাম । তবে সামনে হাঁটতে গিয়েই উনি মূর্ছা গেলেন ।

দিন দুয়েক বাদে , সব শান্ত হয়েছিল । আমরা মাসুম ভাইকে ধরাধরি করে অন্যপাশে নিয়ে এসেছিলাম । ওখানে রুম্মান আর সনেট ভাইকে দেখে নানু বুঝতে পেরেছিলেন আমরা মিথ্যা বলেছি । লজ্জায় আমরা উনার দিকে তাকাই নি আর । ইতোমধ্যে মাসুম ভাইয়ের চেতন ফিরেছিল । বাকি পথটুকু উনি টলতে টলতে আমাদের সাথে হেঁটে ফেরেন । তখন কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করার মত অবস্থা ছিল না । আমরা শুধু নানুকে অনুরোধ করি বাড়ির কাউকে না জানানোর জন্য । উনি কোনো জবাবই দেননি । তবে উনি কাউকে বলেন নি । আর সেদিন থেকে উনার কি যেন হয়েছিল । একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছিলেন । আর মাসুম ভাই প্রচণ্ড জ্বরে পড়েন । প্রায় ৩ দিন উনি জ্বরে ভোগেন । একটু ধাতস্থ হলে উনার কাছে আমরা শুনি আসল ঘটনা ।

রুম্মান ভাইয়া ফেরার পর উনি স্বাভাবিকভাবেই ভিতরে ঢোকেন । আমাদের মধ্যে উনিই ছিলেন গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা । তাই উনার এত ভয়ও ছিল না । তবে উনিও ভয় পেয়েছিলেন । ঠিক যেখানে আমাদের সেই আজব অনুভূতি হয়েছিল । তবে উনি সেখানে দাঁড়িয়ে পরে বোঝার চেষ্টা করেন কি হয়েছে । সাহস করে উনি হেঁটে কবরগুলোর ধারে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন । ঠিক তখনই উনি চমকে গিয়ে লক্ষ্য করেন একটা অংশ স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশিই অন্ধকার এবং কেমন যেন জমাট বাঁধা । উনি ওটার কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করতেই চমকে গিয়ে উনি লক্ষ্য করেন ওটা যেন ধীরে ধীরে মানুষের অবয়ব নেয়া শুরু করে । সাথে সাথে উনাকে অমানুষিক আতংকে পেয়ে বসে । চিৎকার করে উঠেন উনি । উলটো দিকে ঘুরেই উনি দৌড়ানো শুরু করেন । কিন্তু উনার মানে হয় উনি যতই আগানোর চেষ্টা করছেন , পারছেন না । ঠিক তখনই উনি সামনে কিছুর সাথে ধাক্কা খান । সে তাকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরে । কানের সামনে উনি আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত শুনতে পান । পরে বুঝতে পেরেছিলান ওটা নানা ছিল । নানা তাকে সামনে ঠেলে দিয়ে কিছু একটা থেকে আড়াল করেন । যাই করে থাকেন না কেন সেদিন ,নানা আসার পরেই উনি যে বেঁচে ফিরেছেন তা আমরা সবাই হারে হারে টের পেয়েছিলাম ।

কিন্তু এর ফল আমাদের অন্য ভাবে দিতে হয়েছিল । এর কিছুদিন পরেই নানা অসুস্থ হয়ে পড়েন । অনেক চেষ্টা করা হয় । ঢাকায় আমাদের এখানে এনে চিকিৎসা করানো হয় । কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না । আমি উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম । আমাকে দেখে উনি শুধু এক চিলতে হাসি দিয়েছিলেন । ওই হাসিতে কিছু একটা ছিল । আমার আজো ওইদিন যদি আমরা এমন কিছু না করতাম , তবে নানা আজো আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন । বড্ড তাড়াতাড়ি উনি আমদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন । আমদেরকে , মাসুম ভাইকে বাঁচিয়ে দিয়ে উনি মৃত্যুটাকে বুকে আগলে নিয়েছিলেন ।

এটাই ছিল আমার গল্প । আমার জীবনের নির্মম এক গল্প । কিছু প্রশ্ন থেকে যেতে পারে . . . .

মাসুম ভাইয়া আসলে কি দেখেছিলেন ? উত্তরঃ জানি না । কখনো জানতে চাইও না ।

আর আমাদের ওই অনুভূতির কি ব্যাখ্যা ছিল ?

এটা আমি পরে বুঝতে পেরেছিলাম । কারণ , বহুবার আমার দুঃস্বপ্নে ওই কালরাত ফিরে এসেছিল ।

উত্তরঃ ঝিঁ ঝিঁ পোকা । ওই বিশেষ জায়গায় যেতেই পুরো গোরস্থানে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে । এমনকি ঝিঁ ঝিঁ ডাকাও বন্ধ হয়ে যায় । পরে আমি অনেক জায়গায় পড়েছি এরকম অশরীরী, ভূত-প্রেত – যে যাই বলে . . . . . তারা যেখনে আসে, সেখান থেকে সকল প্রাণ পালিয়ে যায় । আমার আর রুম্মান ভাইয়ের অনেক সৌভাগ্য , আমরা সেদিন তার পাল্লায় পড়ি নি । পড়েছিল দুর্ভাগা মাসুম ভাই , আর জীবন গিয়েছিল আমদের সবার প্রিয় ইনু নানার ! ! !

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!