হয়তো এটা আমার একটা বিভ্রান্তি।। তবুও আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।।
তখন আমি অনেক ছোট।। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি।। মুক্তাগাছা রাজবাড়ির পাশেই একটা বাসায় আমরা থাকতাম।। আমাদের বাসায় যিনি কাজ করতেন তার একটা ছোট মেয়ে ছিল।। সেই মেয়েটাই ছিল আমার প্রতিদিনের খেলার সঙ্গি।।
মূল ঘটনায় আসি।।
একদিন স্কুল থেকে বাসায় আসার পর বরাবরের মতই আমি হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেরিয়েছি খেলা করতে।। সাথে আমার সঙ্গিনী।। বাসার সামনেই বড়সড় একটা মাথা যেখানে এলাকার আর অন্য সব বাচ্চারাও খেলা করতো।। মাঝে মাঝে তাদের সাথে মিলেমিশে খেলতাম আমরা।।
সেদিন হটাত ২২-২৩ বছর বয়সী একটা মেয়ে আমাকে ডাকল সেই রাজবাড়ির গেটের সামনে থেকে।। আমি এলাকায় পরিচিত ছিলাম আমার বাবার জন্য।। সেখানে সবাই আমার সাথে স্নেহের সহিত কথা বলত।। তাই, উনার ডাকে সাড়া দেয়াটা খুব বেশি অস্বাভাবিক ছিল না আমার জন্য।। উনার কাছে যেতেই, উনি একটু এগিয়ে এসে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন।। নাম বলার পর জিজ্ঞেস করলেন কই থাকি, বাড়িতে কে কে আছে ইত্যাদি।। সব মোটামুটি উত্তর দেয়ার পর উনি বললেন, উনি এখানে নতুন এসেছেন আর রাজবাড়িটা একটু ঘুরে ফিরে দেখতে চান।। সম্পূর্ণ কথোপকথন আমার মনে নেই, তবে উনার ব্যাবহার আমার খুব ভালো লাগে তাই আমি রাজি হয়ে যাই উনাকে রাজবাড়িটা ঘুরে দেখানোর জন্য।।
রাজবাড়িটা অনেক পুরনো।। বেশ কয়েকটি সতন্ত্র ভবন নিয়ে এখন টিকে আছে।। প্রধান ফটকটাই আকর্ষণীয় বেশি।। তার দুপাশে রাজবাড়ির কেয়ারটেকার উনার ফ্যামিলি সহ থাকতেন।।
সেই ফ্যামিলির সবাই আমাকে খুব ভালো করে চিনতেন।। ঢুকবার মুখেই উনার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছি?? আমার আম্মি ভালো আছে কিনা ইত্যাদি।। আমি অল্প কোথায় উত্তর দিয়ে ভেতরে ঢুকে যাই।। কেয়ারটেকারের স্ত্রী আমাদের বেশি ভেতরে যেতে মানা করেন।। এমন মানা পূর্বেও অনেকবার শুনেছি।। তাই গ্রাহ্য করলাম নাহ।।
সেই মহিলাকে পুরো রাজবাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখাই।। পুরনো সিন্ধুক, কুয়া, মন্দির, ফাঁসিঘর (শোনা কথা, ঘটনার সত্যতা জানি না), নর্তকীর ঘর, বল রুম ইত্যাদি।। অনেক সুন্দর জায়গা ছিল ওগুলো।। কিন্তু, ঐ মেয়েটির উচ্ছ্বাস ছিল না তেমন।। কেমন যেনও নির্লিপ্ত একটা ভাব।। আমাদের সাথে চলছে কিন্তু আমাদের কথা শুনছে বলে মনে হচ্চিল নাহ।। অবশ্য, ঐসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মতন বয়স তখন ছিল নাহ।। উল্টো নিজের বিদ্যা জাহির করার কাজে বাস্ত ছিলাম।। হটাত তিনি বলে উঠলেন, উপরের দিকে উঠবেন।।
ঐটা একদম সীমানার শেষ দিকের বিল্ডিং ছিল এবং ঐ বিল্ডিঙের ভেতরের দিকের অংশ ধসে গিয়ে বিল্ডিঙটা মারাত্মক নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলো।। কিন্তু, একজন মেহমান যেতে চাচ্ছেন।। তাই আপত্তি করলাম নাহ।। বরঞ্চ আর উৎসাহের সহিত দেখাতে নিয়ে চললাম।।
হটাত দেখি, কেয়ারটেকার চাচ্চু আমাদের নিচ থেকে ডাকছেন।। “আরেহ মা রা!! তোমরা এইখানে কেন?? নাম, জলদি নাম।।”
এই বলে তিনি নিজেই উপরে উঠে এলেন এবং আমাকে কোলে করে এবং আমার সঙ্গিকে হাত ধরে ধরে নামিয়ে নিয়ে আসলেন।। আমরা দুজনই খুব ভয় পাচ্ছিলাম।। তিনি যদি এই কথা আব্বুকে বলে দেন তাহলে কপালে পিটটি আছে।। ওহ, ঐ মেয়েটার দিকে তখন আর আমাদের দৃষ্টি ছিল নাহ।। নিজের ব্যাপার নিয়েই বেশি ভাবছিলাম।।
গেটের সামনে এসে কেয়ারটেকার চাচ্চু উনার স্ত্রীকে ধমক দিতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, “ এরা ভেতরে গেলো কিভাবে?? গিয়ে একবারে ভাঙ্গা ছাদে উঠছে।। যদি সেখান থেকে পড়ে যেত তাহলে কি হতো??”
এইবার আমার দিকে ফিরে বললেন, “তুমি যদি পড়ে যেতে তাহুলে কি হতো?? বল?? আমি কিভাবে তোমার আব্বাকে বলতাম?? আর কখনো এতো ভেতরে যেয়ো না কেমন?? জায়গাটা ভালো না।।”
এরপর তিনি আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলেন।। আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে একছুটে মাঠে চলে গেলাম যেনও আম্মি কিছু বুঝতে না পারে।।
ছোট ছিলাম, তাই ব্যাপারগুলো ভুলে গেলাম খুব দ্রুত।।
কিন্তু এখন, এই বয়সে এসে কিছু ব্যাপার ভীষণ গোলমেলে লাগে।। কিছু ব্যাপার শেয়ার করতে চাচ্ছি।।
১।
মেয়েটাকে আমি আগে কখনো দেখিনি।।
২।
তার হাতে কিছু ছিল নাহ।। মানে, কোন ব্যাগ বা এই জাতীয় কিছু ছিল নাহ।। কিন্তু সে নিজেকে একজন ট্যুরিস্ট বলে পরিচয় দেয়।।
৩।
ঢোকার পথে কেয়ারটেকার চাচ্চুর স্ত্রী শুধু আমার আর আমার সঙ্গির সাথে কথা বলছিলেন।। ঐ মেয়েটিকে তিনি কিছু জিজ্ঞেস করেননি।। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই এই অবস্থায় একজন বড় মানুষকে পাশে দেখলে তার সাথে কথা বলাটাই যৌক্তিক।।
৪।
ভেতরে যাবার পর মেয়েটা আমাদের কথার খুব একটা জবাব দিচ্ছিল নাহ।। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার যে, আমি তার মতিগতি খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করিনি।।
৫।
যখন কেয়ারটেকার চাচ্চু আমাদের বোকা দিচ্ছিলেন, তিনি ঐ মেয়েটার দিকে ভ্রুক্ষেপও করেননি।। কিন্তু এমন অবস্থায় অবশ্যই একটা পূর্ণবয়স্ক মানুষকেই প্রথমে বোকা দেয়া হয়।। তার মানে কি, চাচ্চু উনাকে দেখতে পাচ্ছিলেন নাহ??
৬।
আমি উনাকে এরপর আর দেখিনি।।
আমি জানিনা, সত্য ঘটনা বা এর পিছনে কি লুকিয়ে আছে।। তবে, আমার সেই সঙ্গীটি এই ঘটনার কিছুদিন পর ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং ১১দিনের মাথায় মারা যায়।। মারা যাওয়ার আগে সে কিছু একটা দেখতে পেত।। এবং সে বলেছিল, সে ভয় পেয়েছে।। মারাত্মক ভয়, সেই রাজবাড়িতেই।।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।