আমার জন্ম চট্রগ্রামের কদমতলিতে। ওই বাড়িতে কত যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটত তা বলে শেষ করা যাবে না। তার মধ্যে আজকে দুটো বলছি। ঘটনাটা আমার বড় দুবোনের সাথে ঘটেছে। ওরা তখন ছোট। আমি সদ্য হয়েছি। মা আর বাবা এক খাটে ঘুমায় আর আমার বড় দু বোন পাশের রুমে আমার দাদির আমলের বিশাল উচু খাটে ঘুমায়। একরাতে আমরা সবাই ঘুমাচ্ছি। হটাত পাশের রুম থেকে আমার দুবোনের আর্তচিত্কার শোনা যায়। আমার বাবা ঘুম থেকে উঠে “লা ইলাহা ইল্লান্তা…” বলতে বলতে কিছু না বুঝেই আপুদের রুমে দৌড়ে গেলেন আর সাথে সাথে লাইট জ্বালালেন। দেখলেন আপুরা খাটে বসে রান্না ঘরের দরজার দিকে তাকিয়া আছে আর ভয়ে থর থর করে কাপছে। ওদের পুরা মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিলো। অনেক দুরুদ পরে ওদেরকে ফূ দিয়ে শান্ত করা হয়। তারপর আমার দুই আপুই যা বলল তা হচ্ছে, ওরা শুয়ে ছিল। হটাত ওরা দেখল, বিছানার সামনে একটা শাড়ি পরা মহিলা কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে ওদের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। আপুরা যখন ভয়ে চিত্কার করে উঠলো, তখন মহিলাটা আস্তে আস্তে ওদের দিকে তাকিয়ে হাটতে হাটতে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। সেই রাত ঘরের সবার কিভাবে কেটেছিল তা আমার জানা নেই। আমি ঘটনাটি পরে আমার আব্বু আম্মু এবং আপুদের কাছ থেকে শুনি।
পরের ঘটনাটা আরো আগের। আমার বাবা মার তখন নতুন বিয়ে। আমার মায়ের বয়স তখন খুব কম। সংসারে মাত্র তারা দুজন। একরাত বাবার আসতে অনেক রাত হচ্ছে। আমার মা বারান্দার গ্রিল ধরে দেখতে দেখতে কাঁদছে আর অপেক্ষা করছে বাবার জন্য(উল্লেখ্য, এতো রাতে একা ঘরে ভয় লাগাতাই স্বাভাবিক) রাত তখন ১২টার মত হবে। হটাত আমার মা এর মনে হলো, ঘরের সামনে যে জায়গা টুকু, ঐখান হটাত করে এক ধুতি পরা লোক আসল। ঠিক আমাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আমার মায়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে দু হাত জোর করে মন্ত্র পড়া শুরু করলো। তারপর হটাত এক সময় মাটির ভিতর সোজা ঢুকে যেতে আরম্ভ করলো। আমার মা এইসব এক নিঃশ্বাসেই দেখলেন। ঠিক ওই সময় দূর থেকে আমার বাবাকে আসতে দেখে মা শান্ত হলো। পরের দিন পাশের বাড়ির এক মহিলার কাছে মা গল্প করতে গেল, যা কে মা চাচি বলে ডাকত। ওনাকে আমার মা সব ঘটনা বলল, সাথে এটাও বলল, আমি আসলে বুঝতে পারছি না এটা চোখের ভুল কিনা। কারণ তখন আমি এত কাঁদছিলাম যে হয়তো ঝাপসা চোখে কি দেখতে কি দেখেছি! তখন ওই মহিলা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললেন, বউ তুমি তো নতুন বিয়ে করে এসেছ, একা থাক, বললে ভয় পাবে তাই তোমাকে বলিনি। এই পুরো জায়গাটা এক হিন্দু জমিদারের। ওর অনেক সম্পত্তি ছিল। যেগুলো ও মাটিতে পুতে রাখত। শত্রুরা ওকে আগুনে পুড়িয়ে মারে। তারপর থেকে এই এলাকাটা অনেক ভূতুড়ে অশিরীরীরা ঘুরে বেড়ায়। কাল তুমি যা দেখেছ ঠিকই দেখেছ! আর যদি এখানে থাক তাহলে আরো অনেক কিছু দেখবে। শুধু ওদের থেকে সাবধান থেকো!
এরপর আরো অনেক অনেক ঘটনা ঘটেছে আমাদের ঘরের সবার সাথে। যেই সব আত্তীয় আমাদের বাসায় থাকতে আসত, তারাও দেখছে। আমরা এখন ঢাকায় আছি ২৩ বছর। জানি না ওই জায়গাটা এখনো এরকমই আছে কিনা।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।