
আমাদের বাড়ির সামনে একটা বড় তাল গাছ। রাস্তার উত্তর পাশে খাল, আর খালের পশ্চিমে হিন্দু বাড়ি।
প্রথমে কথাটা বিশ্বাস করতে পারিনি, কিন্তু একদিন শুনলাম এক গুজব—রইদা বাবু নাকি তার স্ত্রীকে চার দিনের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে! এখন তার আত্মা ভূত হয়ে মানুষকে হয়রানি করছে। কেউ বলছে, সে কাউকে খালে ফেলে দিয়েছে, আবার কেউ বলছে, নুপুরের তালে তালে নেচে নেচে আমাদের তাল গাছ পর্যন্ত এসে আবার নিজের কবরের কাছে ফিরে গেছে!
এই ঘটনা শুনে কৌতূহলী হলাম। অনেকবার ঐ রাস্তা দিয়ে হেঁটেছি, কিন্তু কখনো কিছু দেখিনি।
সেই রাতে আব্বু বাজার থেকে কয়েল আনতে ভুলে গেলেন, তাই আমাকে পাঠালেন। বর্ষাকাল ছিল, রাস্তায় কাদা জমে ছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, পথচারীরা রাস্তার একপাশ এড়িয়ে ঐ হিন্দু মহিলার কবরের ওপর দিয়েই হাঁটছে!
যাই হোক, বাজার থেকে ফেরার সময় রাত আনুমানিক ৯-১০টা। কবরটা অনেক পেছনে রেখে এসেছি, বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। কিন্তু ঠিক তখনই, বাড়ির দিকে ঢোকার মুখে আমি হাতের টর্চলাইট সামনে তাক করলাম…
হঠাৎই আমার পুরো শরীর এক তীব্র ঝাঁকুনি খেল! হাত-পা কাঁপতে লাগলো, লাইটটা ধরে রাখার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেললাম। চোখের সামনে আঁধার নেমে এলো। মুহূর্তের জন্য আমি একেবারে স্থির হয়ে গেলাম, শব্দ বের করার শক্তিও ছিল না!
কিছুক্ষণ পর শরীরে সামান্য শক্তি ফিরে পেলাম, তখন আর কিছু ভাবিনি—পাগলের মতো দৌড়ে বাড়ি ঢুকলাম! উঠোনে মা কিছু একটা করছিলেন, আমি ছুটে তার কাছে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। এরপর আর কিছু মনে নেই।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতের ঘটনাগুলো মনে পড়ল। স্পষ্ট মনে পড়ল—আমি যখন টর্চলাইট জ্বালিয়েছিলাম, তখন তাল গাছের নিচে সাদা কাপড় পরা এক মহিলা দাঁড়িয়ে ছিল…!
সেদিনের পর থেকে রাতে একা হাঁটার সাহসটাই হারিয়ে ফেলেছি…