হোমওয়ার্ক

শেষ পিরিয়ডে ঢালি স্যারকে ক্লাসে ঢুকতে দেখে রতনের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল। তার একদম মনে ছিল না হোমওয়ার্কের কথা। ঢালি স্যারের হোমওয়ার্ক আনা হয়নি। হায় আল্লাহ, এখন কী হবে? কাল রাতে হঠাৎ করে টাঙ্গাইল থেকে ছোট মামা এসেছিলেন টাঙ্গাইলের বিখ্যাত মিষ্টি চমচম নিয়ে। সেগুলো সব ভাইবোন মিলে খেয়ে দেয়ে…তারপর গভীর রাতে ছোট মামার ভয়ংকর সব ভূতের গল্প শুনতে শুনতেই রাত কাবার। হোমওয়ার্কের কথা মনেই ছিল না! উফ! এখন কী হবে! ঢালি স্যারের দিকে তাকিয়ে রতনের ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল। কিছু একটা মিথ্যা বলে কি পার পাওয়া যাবে? রতন দ্রুত চিন্তা করতে থাকে কী বলা যায়।

বাবার অসুখের কথা বলা যেতে পারে। বাবার অবশ্য সত্যিই জ্বর হয়েছে। রতন দুবার ডিসপেনসারিতে গিয়ে প্যারাসিটামল কিনে এনেছে বাবার জন্য। কাজেই বলা যেতে পারে—স্যার, বাবার খুব অসুখ…এই কারণে হোমওয়ার্ক করতে পারিনি। ওদিকে ঢালি স্যার রোল নম্বর ধরে ধরে ডাকছেন। একজন একজন করে প্রত্যেকের খাতা স্যার তাঁর সামনেই দেখেন। এটাই স্যারের সিস্টেম। এখন চলছে ১৩ নম্বর সিরিয়াল। রতনের রোল নম্বর ২৪। দেখতে দেখতে চলে এল ২০ সিরিয়াল। তারপর ২১, তারপর ২২, তারপর ২৩, …তারপর, রতন আর ভাবতে পারে না। ঢালি স্যার চেঁচালেন ‘রোল নম্বর ২৪…রতন?’ রতন উঠে দাঁড়াল — কী হলো, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? খাতা কই? — ইয়ে স্যা-স্যার…রতন তোতলাতে থাকে। — কী হলো, হোমওয়ার্ক আনিসনি? — ইয়ে স্যা-স্যার, কাল বাবার অনেক অসুখ…তাই মানে… — বাবার অসুখ? — জি জি স্যা-স্যার। — তোর হোমওয়ার্ক কি তোর বাবা করে দেন? ক্লাসসুদ্ধ সবাই হেসে উঠল হো হো করে।

স্যার হুংকার দিয়ে উঠলেন, ‘সাইলেন্স। পিন ড্রপ সাইলেন্স…’। রতন ঢোক গেলে। সত্যি সত্যি সারা ক্লাসে মুহূর্তে পিন ড্রপ সাইলেন্স। এই সময় টুন করে একটা শব্দ হলো। যেন পিন ড্রপ সাইলেন্সে একটা পিন ড্রপ করল। স্যার তখন বেত হাতে উঠে আসছিলেন রতনের দিকে (স্কুলে মারপিট বন্ধ, এ রকম একটা ঘোষণা সরকার দিলেও ঢালি স্যারের বেত এখন পর্যন্ত এই ঘোষণার বাইরে)। কিন্তু তিনি থেমে গেলেন। পকেটে হাত দিয়ে তাঁর মোবাইল ফোনটা বের করলেন, তার মানে ওই টুন শব্দটা স্যারের মোবাইলের…হয়তো স্যারের কোনো মেসেজ এসেছে। স্যার মেসেজটা পড়ে তড়িঘড়ি করে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন। রতনের ইচ্ছে হলো আনন্দে একটা লাফ দেয়। এ যাত্রা মনে হয় বেঁচেই গেল রতন।

নিশ্চয়ই স্যারের কোনো জরুরি মেসেজ এসেছে। স্যার আর ক্লাসে আসবেন না। ঝপ করে বসে পড়ল রতন। আর তখনই স্যার আবার ঢুকলেন। ঢুকে চেয়ারে বসে হুংকার দিলেন— — রোল নম্বর ২৫? কী আশ্চর্য ! স্যার কি রতনের ব্যাপারটা ভুলে গেলেন? আনন্দে রতনের ভেতরটা গুড় গুড় করে উঠল। সত্যি সত্যিই স্যার মনে হয় ভুলেই গেলেন। একে একে স্যার সবার খাতা দেখলেন। শেষ খাতাটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে ছুটির ঘণ্টা পড়ল। স্যার উঠে বেরিয়ে গেলেন। আর তখনই সবাই রতনের ভাগ্য নিয়ে হই হই করে উঠল। রতনের কাছের বন্ধুরা সবাই এসে রতনের পিঠে থাবা মারতে লাগল। আনন্দ প্রকাশের থাবাই বটে, তবে গুনে গুনে সতেরোটা সেই রকম থাবা খেল রতন। আর তখন মনে হলো, এর চেয়ে স্যারের দু ঘা বেত খাওয়াই মনে হয় ভালো ছিল! সত্যি হোমওয়ার্ক না করার কত বিড়ম্বনা।

আরো পড়তে পারেন...

পিচ্চি দ্য গ্রেট

আপু, আপুরে… এই উঠত! ইংরেজিতে অপিরা মিনি বানান করে কিভাবে একটু বল…।’ গভীর রাতে পিচ্চি…

টোঙঘরে শুনু পন্ডিত–গাজী হানিফ

কাঙ্খিত সেই বাসর রাত এলো। দুরু দুরু বুকে ঝট করে তোমার ঘোমটা খুলতেই বুকটা ছ্যাঁক…

গরুর রচনা।

চা খাচ্ছেন। আর ভাবছেন। কত কিছু ভাবনা আসে না, চা খাওয়ার সময়। ভাবতে ভাবতে একটু…