
হেলেন। হেলেন অব ট্রয় । দেবতাধিরাজ জিউসের কন্যা হেলেন। গ্রীক ও রোমান পুরাণের সর্বাধিক আলোচিত নারীচরিত্র। ভালোবাসা এবং জিঘাংসা, সৃষ্টি ও ধ্বংস, রাজকীয় বিশ্বাস আর শঠতা যে চরিত্রকে ঘিরে আবর্তিত হয়ে চলেছে সহস্র বছর ধরে। অনন্য সাধারণ অনুপম সৌন্দর্য যাঁকে বারবার পরিণত করেছে প্রেক্ষাগৃহের কুশীলবে। সেই হেলেন! গ্রীক-রোমান মিথোলজি আর বর্তমান প্রচলিত ইতিহাস যাঁকে দিয়েছে কামাসক্ত, পাপিষ্ঠার তবকা। কে এই হেলেন? খ্রিস্টপূর্ব ১২১৪ অব্দ। স্পার্টার রাজা টিনডারেউস এবং তার স্ত্রী লেডার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। রাজকীয় জ্যোতিষ সেই শিশুটার নাম রাখেন হেলেন।
মহাকবি হোমারের ‘ইলিয়ড ও অডেসি’ এবং ইউরিপিডিসের ‘হেলেন’-এর বর্ণনা অনুযায়ী টিনডারেউস বাহ্যত হেলেনের জনক হলেও প্রকৃত জনক দেবতাধিরাজ জিউস।কোন একদিন, জিউস তখন রাজহাঁসের বেশে ছিলেন। একটি ঈগল তাকে তাড়া করে। জিউস তখন লেডার আশ্রয় প্রার্থনা করেন। রাজহাঁস লেডার উষ্ণ সান্নিধ্যে আসে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ফলশ্রুতিতে লেডা প্রসব করেন একটি ডিম। সেখান থেকে খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসে হেলেন। ভ্যাটিকানের পুরাণ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজহাঁস ও লেডার সঙ্গমে দুটো ডিম প্রসূত হয়। একটি জন্ম দেয় দুই বোন_ ক্লাইটেমেনেস্ত্রা এবং হেলেন; অন্যটি দুই ভাই; ক্যাস্টর এবং পুলক্স। অনেকে মনে করেন, এক ডিম থেকে বের হয়েছে তিনজন: দুই ভাই এবং বোন হেলেন। কালের পরিক্রমা ক্রমাগত এগিয়ে চলে অনন্ত এক মহাপরিক্রমার অনিঃশেষ পথে..। ধীরে ধীরে স্বর্গীয় রূপ-লাবন্য আর অসাধারণ মোহনীয় নারীত্বের পূর্ণতা নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকেন ট্রয় অব হেলেন। এই সময় আরেক চরিত্রের আবির্ভাব ঘটে ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে।
তার নাম প্যারিস। মিথোলজির সুবিখ্যাত এজিয়ান সাগরের ওপারের এক নগরী ছিলো ট্রয়। ইতিহাসবিখ্যাত ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরীগুলোর মধ্যে অন্যতম। গ্রিক ভাষায় ট্রয়কে বলা হয় ‘ত্রোইয়া’ বা ‘ইলিয়ন’। লাতিন ভাষাই ‘ত্রুইয়া’ বা ‘ইলিউম’। হিত্তিয় ভাষাই ‘ওয়িলুসা’। ট্রয়ের তুর্কী নাম ত্রুভা। হোমারের ইলিয়াডে যে ট্রয়ের উল্লেখ রয়েছে সেটিকেই এখন ট্রয় নামে আখ্যায়িত করা হয়। এর অবস্থান আনাতোলিয়া অঞ্চলের হিসারলিক নামক স্থানে। ট্রয়ের তুর্কী নাম ত্রুভা। অর্থাৎ, আধুনিক হিসারলিক-ই সেই প্রাচীন ট্রয় নগরী। এর ভৌগলিক অবস্থান তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কানাক্কাল প্রদেশের সমুদ্র সৈকতের নিকটে এবং আইডা পর্বতের নিচে দার্দানেলিসের দক্ষিণ পশ্চিমে। রোমান সম্রাট অগাস্টাসের রাজত্বকালে প্রাচীন ট্রয় নগরীর ধ্বংসস্তুপের উপর ইলিয়াম নামে নতুন একটি শহর নির্মিত হয়। কনস্টান্টিনোপল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ইলিয়াম বিকশিত হয়েছে, কিন্তু বাইজান্টাইন রাজত্বের সময় ধীরে ধীরে এর পতন হতে থাকে। ১৮৭০ সালে জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ হাইনরিশ শ্লিমান এই এলাকায় খনন কাজ শুরু করেন। এই খনন চলতে থাকায় এক সময় প্রমাণিত হয় যে, এখানে একের পর এক বেশ কয়েকটি শহর নির্মিত হয়েছিল। সম্ভবত এই শহরগুলোরই একটি হোমারের ট্রয় (ট্রয় ৭)।
অবশ্য এ নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, হিত্তীয় রচনায় উল্লেখিত উইলুসা শহরটি এখানেই অবস্থিত ছিল। অনেকে মনে করেন ইলিয়ন এই উইলুসা নামেরই গ্রিক সংস্করণ। ট্রয়ের রাজা প্রায়াম এবং রানী হেকুবার দ্বিতীয় সন্তান এই প্যারিস। দ্বিতীয় পুত্রের জন্মের অল্পক্ষণে হেকুবা স্বপ্নে দেখে, সে পৃথিবীতে একটি জ্বলন্ত অগি্নশিখা আনতে যাচ্ছে, যে শিখা জ্বালিয়ে দেবে ট্রয় নগরী। সম্ভাব্য দুর্ভাগ্য তাদের পীড়িত করে, কিন্তু শিশুটিকে হত্যা করতে কুণ্ঠিত হয়। রাজা প্রায়াম শিশুটিকে আইডা পর্বতে রেখে আসে। এক রাখাল তাকে কুড়িয়ে নেয়, নিজ সন্তানের মতো লালন করে; আকর্ষণীয় ও সুদর্শন এই বালকের নাম রাখে প্যারিস। পুরাণে আছে, প্যারিস যখন টগবগে যুবক, মার্মিডনসের রাজা পেলেউস ও সমুদ্রদেবী থেটিসের বিয়েতে যুদ্ধদেবী এরিস ছাড়া সবাই আমন্ত্রিত হয়। দেবতাদের পিতা জিউস, তার স্ত্রী হেরা, জ্ঞানদেবী অ্যাথিনা প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতি বিয়েতে উপস্থিত। মূলত একটি সংকট সৃষ্টি করার জন্যই যুদ্ধদেবী এরিস একটি সোনালি আপেল ভোজের টেবিলে নিক্ষেপ করল; আপেলের গায়ে উৎকলিত ‘সুন্দরতম রমণীর জন্য’। আপেলের দাবি তিনজনেরই_ হেরা, অ্যাথিনা ও আফ্রোদিতি সৌন্দর্যে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব কেউ ছাড়তে সম্মত নয়। তাদের কলহ মেটাতে পিতা জিউস বার্তাদূত আইরিসকে বললেন, আপেলটি আইডা পর্বতের রাখাল প্যারিসকে দিতে। তার বিবেচনায় যে সুন্দরী শ্রেষ্ঠা, তাকেই যেন আপেলটি হস্তান্তর করে। প্যারিস তখন মেষ চড়াচ্ছিলো। তিন দেবী আবির্ভূত হলেন। হেরা বলল, ‘আমি তোমাকে সবচেয়ে ধনী এবং সবচেয়ে ক্ষমতাশালী রাজা বানিয়ে দেব।’ অ্যাথিনা বলল, ‘আমি তোমাকে সবচেয়ে জ্ঞানী ও সবচেয়ে খ্যাতিমান মানুষে পরিণত করব।’ মিষ্টি হেসে আফ্রোদিতি বলল, ‘আমি তোমাকে দেব পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী, যে তোমার স্ত্রী হবে।’ সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করেনি প্যারিস; তার চাই সুন্দরী রমণী। আপেল পেল আফ্রোদিতি। সন্তুষ্ট দেবী আফ্রোদিতি তার জন্য বরাদ্দ করল হেলেনকে আর ক্ষুব্ধ দেবী হেরা দিল সংকট। দেবী হেরার কাছে নিজ পরিচয় পেয়ে প্যারিস পিতা প্রায়াম ও মাতা হেকুবার কাছে ফিরে গেল এবং রাজপুত্র হিসেবেই আবির্ভূত হলো। আফ্রোদিতি-প্রতিশ্রুত সুন্দরীর সন্ধানে প্যারিস সাগর পাড়ি দেবে। বোন ক্যাসান্ড্রা তাকে সতর্ক করল এবং অনুনয় করে বলল, এ যাত্রা ট্রোজানদের জন্য দুঃখ বয়ে আনবে। ১২৩০ সালের দিকে ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস ও হেক্টর আসেন স্পার্টায় ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য। স্পার্টার রাজা মেনেলাউস প্যারিস ও হেক্টরকে সাদরে সম্ভাষন জানান। তাদের আগমনে রাজ্যকে লাল-নীল বাতিতে চমৎকারভাবে সাজানো হয়। নৈশভোজের বিপুল সমারোহের পর প্যারিস ও হেক্টরকে সবার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেন রাজা মেনেলাউস। প্রাসাদেই রাজপুত্র প্যারিসের দেখা হয় হেলেনের সঙ্গে। তার শরীরী রসায়নই তখন বলে দিল, এই সেই রমণী, মর্ত্যের সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি, তাকে দেওয়া আফ্রোদিতির সেই প্রতিশ্রুত উপহার। প্যারিস ও হেলেনের প্রণয় ঘটে। গোপনে গ্রীস ছেড়ে ট্রোজান জাহাজে করে এজিয়ানের নীল সমুদ্র পাড়ি দেন হেলেন আর প্যারিস। চলে আসেন নগর সভ্যতার অনন্য উদাহরন, সাজানো সুন্দর ট্রয়ে। স্পার্টার রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্যারিস হেলেনকে অপহরণ করে ট্রয়ে নিয়ে গেছে। হেলেনকে উদ্ধার এবং গ্রীসের সম্মান রক্ষার্থে প্রায় ১ হাজার জাহাজ নিয়ে ট্রয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় গ্রিস-যোদ্ধারা। জাহাজ থেকে সর্বপ্রথম নেমে আসেন প্রসিদ্ধ গ্রিকবীর একলিস। নেমেই যুদ্ধ শুরু করেন একলিস ও তার সঙ্গীরা। প্রথম যুদ্ধেই ট্রয়নগরীর বন্দর দখল করেন নেয় গ্রিকরা। এভাবে টানা প্রায় ১০ বছর বন্দর ও রাজ্য অবরোধ করে রাখে গ্রিকরা।
বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে নিহত হয় একলিসের ভাই উইরোরাস, প্যারিসের বড় ভাই ট্রয়বীর হেক্টর ও নাম না জানা উভয়পক্ষের হাজারও যোদ্ধা। যুদ্ধে সহজে জয়লাভ না করতে পেরে গ্রিকরা আশ্রয় নেয় প্রতারণার । জন্ম নেয় ইতিহাসের এক জঘন্যতম প্রতারণার প্রতীক ট্রোজান হর্স। এপিয়াস নামে একজন দক্ষ ছুতার বা মুষ্টিযোদ্ধা সুবিশাল এই ঘোড়াটি তৈরি করেন। পলায়নের ভান করে গ্রিকরা জাহাজে করে নিকটবর্তী টেনিডোস দ্বীপে চলে গেলেন। যাবার সময় তারা সাইননকে সেখানে রেখে গেলেন। সাইনন ট্রয়বাসীকে বোঝাল যে, এই ঘোড়াটি এথিনাকে উপহার দেওয়া হয়েছে ট্রয় নগরকে অপরাজেয় করে তোলার জন্য। ট্রয়বাসী আনন্দ-উল্লাস করতে করতে ঘোড়াটিকে নগর-দেয়ালের অভ্যন্তরে নিয়ে এলো। তার ভেতরে আত্মগোপন করে থাকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রিক যোদ্ধা। বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে গ্রিক বাহিনী। কিন্তু, এ’সকল কূটচালের কিছুই আঁচ করতে পারেনি ট্রয় অধিবাসী কিংবা ট্রয়ের কর্তাব্যাক্তিরা। তাদের এই অদূরদর্শিতাই মূলত ধ্বংস ডেকে এনেছিলো ট্রয় নগরীর। মহা-আনন্দে আর উৎসাহে সেই ঘোড়াটিকে রাজ্যের ভেতরে নিয়ে আসে ট্রয়বাসী। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, রাতের গভীরে ঘোড়া থেকে বের হয়ে ট্রয়বাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় গ্রিকরা। খুলে দেয় নগরতোরণ। ট্রোজান যুদ্ধ ডেকে আনে অশেষ দুর্গতি। গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় । মুহূর্তের মধ্যে লকলকে আগুন গ্রাস করে নেয় ট্রয়নগরী। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় এককালের সাজানো সুন্দর ট্রয়নগরী। ইতিহাস আর মিথোলজি, উভয় মাধ্যমই ট্রয় নগরী ধ্বংসের জন্যে হেলেনকেই দায়ী করে থাকে। ইউরিপিডিসের ‘ডটার্স অব ট্রয়’তে হেলেনকে দেখানো হয়েছে ‘তেড়ে আসা অভিশাপের সন্তান, ঈর্ষা ও খুনের সন্তান, পৃথিবীর লালিত প্লেগ মৃত্যুবিভীষিকা’ হিসেবে। কেনো? হেলেন আসলে নিয়তির ক্রীড়নক তিনি কি সর্বোপরি একজন নারী নন? হেলেন আসলে নিয়তির ক্রীড়নক। হেলেন অব ট্রয়কে আমার, ভালোবাসা বঞ্চিত, অস্থির এক নারীর প্রতিকৃতি বলেই মনে হয়। হোমারের ‘ইলিয়ড ও অডেসি’ কিংবা ইউরিপিডিসের ‘হেলেন’ এ যখন আমি মগ্ন হই, তখন আমি যেনো শুনতে পাই হেলেনের বুকের গভীরে শতবছর ধরে লুকিয়ে থাকা জমাট কান্নার নীরব গর্জন।
অক্ষরের কালো আঁখরে, সীমাহীন নৈঃশব্দের মাঝে ভেসে বেড়ানো অশ্রনিনাদ। যুদ্ধ আর ধ্বংসের ঘন মেঘের দায় বারবার গিয়ে পড়েছে হেলেনের ওপর। হেলেন অব ট্রয়। যুদ্ধ মানে ট্রয়ের যুদ্ধ। ট্রোজান ওয়ার। কেনো? হেলেন অস্বভাবিক রকমের সুন্দর ছিলেন। ভালোবেসেছিলেন এক সুঠামদেহী সুদর্শন যুবককে। পালিয়েছিলেন প্রেমিকের হাত ধরে। এই কি তার অপরাধ ছিলো? তার প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের পূনরাবৃত্তি ঘটেছিলো। এটাই কি তার অপরাধ? ট্রয় ধ্বংসের দায় কি শুধু নারীর ? গ্রীক নৃপতিরা কি নীল সাগরে তরী ভাসিয়েছিল শুধুমাত্র এক হেলেনের জন্য ? রাজ্য জয়ের লোভ কি তাদের ছিলনা ? দৃষ্টির অন্তরালে হেলেনের নারী মানসের অব্যক্ত অন্তর্বেদনার কথা কেনো উঠে আসে নি ইতিহাসের পাতায়? ইতিহাস কি এখানে একচোখা আচরণ করেনি? পাদটিকা: প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ট্রয় নগরীকে এর সময়কাল ও পুনর্গঠনের উপর ভিত্তি করে, নগরীর উত্থান এবং পতনকাল, ৯টি ভাগে বিভক্ত করেছেন। 1. ট্রয় ১: ৩০০০-২৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (সময়কাল) 2. ট্রয় ২: ২৬০০-২২৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 3. ট্রয় ৩: ২২৫০-২১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 4. ট্রয় ৪: ২১০০-১৯৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 5. ট্রয় ৫: বিংশ-অষ্টাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 6. ট্রয় ৬: সপ্তাদশ-পঞ্চদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 7. ট্রয় ৬h: তাম্র সভ্যতার শেষ দিকে চতুর্দশশতাব্দী খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 8. ট্রয় ৭a: মহা দুর্ঘটনাটি এই সমইএ ঘটে ১৩০০-১১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ধারনা করা হয়, হোমারের কাব্যগ্রন্থে ট্রয়নগরীর এই রুপের বর্ণনাই দেওয়া হয়েছে। 9. ট্রয় ৭b¬1: দ্বাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 10. ¬¬ট্রয় ৭b¬¬2 : একাদশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 11. ট্রয় ৭b¬¬3: মহা দুর্ঘটনা ঘটার আগে পর্যন্ত ৯৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ 12. ট্রয় ৮: ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এর দিকে 13. ট্রয় ৯ : ১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এদের মধ্যে ট্রয় ৬,৭ ও ৯ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ট্রয় ৬ : ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দএর দিকে ধ্বংস হয়ে যায়। যার মূল কারণ ছিল ভূমিকম্প। ট্রয় ৭: ট্রয় নগরী একাধিকবার ধ্বংস হয়েছিল এবং পুনরায় তা গঠিত হয়েছিল। প্রত্নতত্তবিদ্গন ট্রয়-এর ৯টি ভিন্ন স্তর খুঁজে পেয়েছিল। ট্রয়-৬ এবং ট্রয়-৭কে ট্রোজান যুদ্ধের নিকটতম সাক্ষী মনে করা হয়। ট্রয়-৭ এর সময়েই ট্রয় ধ্বংস হয়েছিল । যার মূল কারণ বিখ্যাত ট্রোজান যুদ্ধ। ট্রয়-৭ ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-এ পূর্ণ রুপ লাভ করে এবং ১১৯০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ধ্বংস হয়। নগরীটি প্রায় ১০০ বছর স্থায়ী হয়। এবং ৭০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দএ পুরোপুরি পরিত্যক্ত হয়। মনে করা হয়, নগরীটি যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল। কিন্ত, এই বক্তব্যের স্বপক্ষে জোরালো এবং স্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। খননের ফলে সেখানে শুধু একটি মানুষের মাথার খুলি, একটি বুকের হার আর একটি পূর্ণ কঙ্কাল পাওয়া যায়। আরও খননকার্য সেই উত্তর না পাওয়া প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারে। বেশীরভাগ প্রত্নতত্তবিদ্গন একমত যে, ট্রয় ৭ এর ধ্বংসেরর মূল কারণ ট্রোজান ওয়ার। ট্রয় ৯: ট্রয় নগরির শেষ শহর।
রোমান সম্রাট অগাস্টাসের সময় ট্রয় ৯ আবিষ্কৃত হয় এবং রোমান সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিনত হয়। কনস্টান্টিনোপল স্থাপিত হওয়ার পর এই নগরী বাণিজ্যিক ক্ষেত্রটি অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরে এবং সম্রাট বাইজান্টাইন এর সময়ই এটি ক্রমে ক্ষয় প্রাপ্তির মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। (সমাপ্ত)