হুমায়ূন আহমেদের চশমা

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে কিছু লিখিনি। পরের বছরও কিছু লিখতে পারিনি। এবার বেশ কিছুদিন আগে থেকে চিন্তা করেছিলাম মৃত্যু দিবসে কিছু লিখবো । সেই কারনেই এই লেখার অবতারনা। লেখাটা কোন ধরনের উচ্চমার্গের বিশ্লেষন না , কিংবা তার প্রশংসাগাথা বা নির্মম সমালোচনাও না ।
নেহাত একজন প্রাক্তন ভক্তের সাদাসিধে স্মৃতিচারন। ইচ্ছা ছিলো হুমায়ূনের বই গুলো আবার রিভাইজ দিয়ে তার এই লেখাটা লিখবো, কিন্তু ব্যস্ততা আর আলস্যের কারনে কাজটা করা হয়নি, ২০ বছর পুরানো স্মৃতির উপর ভর করে লিখছি , তাই ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

জার্নিটা শুরু হয় , একজন জাদুকরী লেখকের বই পাঠ দিয়ে। বাবার লাইব্রেরীটা দেড় মানুষ উচু তাকের উপর। আলমারীর উপর বসে সেখানে ধুলোবালি ঢাকা পুরনো বই গন্ধ নেয়া যায় । এ্যাডাল্টহুড প্রাপ্ত হয়নি বলে বইয়ের পোকার সেখানে হাত দেয়া মানা । আরব্যরজনী থেকে শুরু করে রিচার্ড হ্যাডলি চেজের
থ্রিলার সেখানে আছে । সমরেশের প্রজাপতি থেকে শুরু করে সাদাত হাসান মান্টোর বই। অবশ্য দুরন্ত কৌতুহলী হলেও সেসব পড়ে হজম করার বয়স হয়নি আমার তখনো। তিন গোয়েন্দা আর সেবা প্রকাশনীর কিশোর ক্লাসিক পড়ে দাত পাকিয়েছি। রহস্য পত্রিকাও পড়া হয় টুকটাক।
তবে সব বইয়ের পোকার মতো আমিও চুরি করে পাঠ করার বিদ্যায় অভ্যস্ত । বইয়ের দোকানে দাড়িয়ে অর্ধেকটা বই পড়ে ফেলার বিদ্যা রপ্ত করেছি।
বাবার লাইব্রেরী মতো নিজেরও ছোটখাটো একটা লাইব্রেরী গড়ে তুলেছি । তক্কে তক্কে আছি বাবার লাইব্রেরীতা হানা দেবার জন্য ।
একদিন সুযোগ বুঝে আলমারী উপরে উঠে পড়েি। এতো এতো বই এর প্রচ্ছদ গুলো উল্টে দেছি ।
শেষ মেষ থিতু হই দেবী নামের একটা বইয়ের কাছে ।

হুমায়ূন আহমেদ নামে এক লেখকের বই । বইটার প্রথম পাতা পড়তে শুরু করার পর , নামিয়ে রাখতে পারি না । মিসির আলী নামের এক মধ্য বয়স্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির শিক্ষক , দেবী নারীমূর্তির আদিভৌতিক রহস্য ব্যাখা করেন । দেবী কোন ভূতের বই না । কিন্তু যখন বইটা শেষ হয় , আলমারীর উপর থেকে নেমে আসতে ভয় করে । আমি আবার কিন্চিত ভীতু ছিলাম ।

এরপর পড়ি আগুনের পরশমনি। আমার চাচা আমার হাতে বইটা দেখে বলেছিলেন আরে এসব বই বোঝার মতো বয়স হয়েছে তোর ? আমি অবশ্য সেসব কথা কানে না তুলে পড়ে ফেলি। তারপর পড়া হয় , হোটেল গ্রেভার ইন , মে ফ্লাওয়ার । সামান্য ঘটনাকে সম্পূর্ন অন্যভাবে দেখার আর উপস্থাপন করার গুন ছিলো হুমায়ূন আহমেদের । আর ছিলো আবেগের জায়গাটা স্পর্শ করার ক্ষমতা। একমাত্র এই গুণেই তিনি খ্যাতির চূড়ান্ত সীমায় উঠতে পেরেছেন ।
হোটেল গ্রেভারইনে তিনি যখন দিনের পর দিন একইখাবার খান আর ওয়েট্রেস এসে তাকে সারপ্রাইজ দেয় তখন আমার মনে হয় আরে এরকম বুঝি সবার জীবনেই ঘটে।

যাহোক ১৫-১৬ বয়সীদের মনে আবেগ ছাড়া অন্য কিছু থাকে না । হুমায়ূন আহমেদে বুদ হয়ে যাই । সংগ্রহ করে ফেলি তার ১০০ এর উপর বই ।
বিশেষ করে ময়ূরাক্ষী বইটার কথা মনে পড়ে । হিমুর প্রথম বই । যার একটা নিজস্ব নদী ছিলো। হিমু চরিত্রের কিন্চিত ভাগ আমাদের সবার মধ্যে আছে ।
আমার সবাই বৃষ্টি আর জোৎস্না নিয়ে আবেগ তারিত হই । ধারনা করি কোন সুন্দরী মেয়ে আমাদের প্রেমে পাগল হয়ে থাকবে ।
হিমুর জন্য ভালোবাসা জন্ম হয় আমার মনে । মিসির আলীকে ভালোবাসী । খ্যাপাটে চরিত্রের মানুষগুলোকে যার আবার তীক্ষ্ণধার বুদ্ধি, তাদের ভালো না বেসে কোন উপায় আছে ?

মনে পড়ে একটা সংকলন ছিলো তার বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল। ভালোবাসার গল্প গুলো সেখানে ছিলো । ফেরা নামে হাওরবাসী গ্রামের গল্প ছিলো । বার বার পড়া হতো সংকলনটা । মন খারাপ হলেই ডুব দেয়া যেতো ।

সাজঘর নামে একটা বই ছিলো। নিন্ম মধ্যবিত্ত অভিনেতা – অভিনেত্রী দম্পতির আটপৌঢ়ে জীবনের গল্প । অথচ কি তীব্র বিষাদ ।

বাসর নামের একটা গল্প মনে পড়ে । সুখী সুখী আরেকটা দুখী দুখী গল্প।

জলপদ্ম নামের আরেকটা প্রিয় বই ছিলো।

নি নামের একটা আদিভৌতিক বই ছিলো। বইটা পড়েছি এক সন্ধ্যাবেলা। পড়ার পর খাট থেকে নামার সাহস সঞ্চয় করতে পারিনি। একটা গ্রামে খুব বুদ্ধিমান প্রানীরা
একটা খামখেয়ালী মানুষকে যত্ন করে ঘিরে রাখে ।

শূন্য জগতের অধিবাসীরা শূন্য সমীরকনের মীমাংসা রোখার জন্য যেভাবে গ্রামের স্কুলের মাষ্টারকে মেরে ফেলে বহুবহু দিন সেই বইয়ের কথা ভেবেছি। বইটার নাম ছিলো শূন্য সম্ভবত ।

মনে পড়ে অমানুষ নামের অনুবাদের কথা । ধনী পরিবারের বাবা অর্থভাবে পরায় , নিজের মেয়েকে কিডন্যাপ করার নাটক সাজায়। পরে কিডন্যাপাররা মেয়েটাকে মেরে ফেলে। কঠোর,কোমল বডিগার্ড তখন প্রতিশোধ নেয় । হুমায়ূন আহমেদ , কাজী আনোয়ার হোসেন দুই দিকপালই ইটালিয়ান বইটার অনুবাদ করেছেন ।
কিন্তু হুমায়ূনের টা পড়লেই জাদুকরী আবেগের , আর হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা তীব্রতা ছোয়া খুব সহজে অনুভব করা যায়। বই পড়ে কান্না আসার অনুভূতিটা নতুন না , কিন্তু কান্না আনা বই এর বেলায় এই বইটা প্রথম সারিতে থাকবে।

হিউমার ! হুমায়ূন আহমেদের নিন্দুক আর প্রেমিকদের উভয়েই এই একটা বিষয়ে একমত । হিউমারের বেলায় তিনি একমেবা দ্বিতীয়ম। তার এলেবেলে পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হেসেছি । এক সময় উন্মাদে তার লেখা বের হতো । উন্মাদ গুলো এমনিতেই যথেষ্ঠ হাসির ছিলো, তার উপর হুমায়ূন আহমেদের ছোয়া থাকলে সেগুলো না পড়া ইরিসিষ্টেবল হয়ে যেতো।

হিউমার ! অনেকের কাছে তার আবেগী বই গুলো সেরা মনে হতে পারে , কিন্তু হুমায়ূন আহমেদকে ডিফাইন করার জন্য পাচটা বই-ই যথেষ্ঠ _ নন্দিত নরকে,
শংখনীল কারাগার , দেবী, ময়ূরাক্ষী , বহুব্রীহি। সিরিয়াস বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত পরিবার যে এতো হাস্যরসের জন্ম দিতে পারে তা বহুব্রীহি না পড়লে বোঝা যাবে না ।
প্রতিটা পরিবার বাবা, মিলি, মামা, সৈয়দ বংশের পোলা, ডাক্তারের মতো ক্যারেক্টার থাকে । আমাদের সেই দেখার চোখটা নেই । হুমায়ূন আহমেদের সেই চোখটা ছিলো , কিংবা সেই চশমাটা তিনি চোখে দিতেন ।
বহুব্রীহি পড়ে হেসে কুটি কুটি হয়েছি । আর নাটকটা দেখা আমাদের কৈশোরের অন্যতম পারিবারিক আনন্দের ঘটনা । যা সম্ভব জেনারেশন ওয়াই এর ছেলেপেলে কখনো উপলব্ধি করতে পারবে না ।

হুমায়ূন আহমেদের ছোট গল্প গুলোর কথা না বল্লেই না । সাদা গাড়ী , নান্দাইলের ইউনুস, খাদক আর অনেক মেসমেরাইজিং ছোট গল্প আছে তার । ছোট গল্পের যেই রেশ গুলো শেষ হয় না, মনে হয় শেষ হৈইয়াও হইলো না শেষ সেই সিগনেচার তার ছোট গল্পতে বিদ্যমান। বিশেষ করে নান্দাইলের ইউনুসের মতো কন্ট্রাক্ট কিলার / সিরিয়াল কিলার বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি একটা দেখা যায় না । নান্দাইলের ইউনুস নিয়ে একটা নাটকও তৈরি হয়েছিলো। আসাদুজ্জামান নূর তার স্বভাবসুলভ অভিনয় দিয়ে সেই চরিত্রটা স্মরনীয় করে রেখেছেন ।

খাদক গল্পটিতে সম্পূর্ন অজানা চরিত্রকে উপস্থাপন করা হয় । গ্রাম বাংলায় এমন অদ্ভুত চরিত্র পাওয়া যায় । খাদক চরিত্রটি আস্ত গরু খেয়ে ফেলে। এইরকম অস্বাভাবিক চরিত্র আমাদের মানবিকতাকে ছুয়ে যায় । অল্প পরিসরে এমন দুর্দান্ত গল্প লেখা গল্পকার হিসাবে পরিপূর্নতা পাওয়ার উদাহরন ।

সাদা গাড়ীতে আরেকটি অস্বাভাবিক চরিত্রের খোজ পাওয়া যায় । বড়লোক বাবার সন্তানের সাথে অনাকাংখিত বন্ধুত্ব হয় । কিছুটা অসামাজিক আর ভয়্যার চরিত্রের থাকে ছেলেটি । তার সাথে মধ্যবিত্ত গড়পড়তা গল্পের সেন্ট্রাল ক্যারেক্টারের বন্ধুত্ব হয় । ছেলেটি তাকে প্রায়ই উৎপাত করতে থাকে , এবং তাকে এ্যাভয়েড করলেও সে সেটা বুঝে না , আবার ফিরে আসে । শেষমেষ দেখা যায় , যখন সে স্ত্রীর সাথে একান্তে তখনো কল্পনা করে একটা সাদাগাড়ী বৃষ্টিতে ভিজছে ধারকাছে কোথাও।
এই অস্বাভাবিক চিন্তার কোন ব্যাখা না ।

আরেকটি গল্প , গল্পের নামটা মনে নেই । একটা রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী মেয়ে প্রেগনেন্ট হয় । এবং সে কল্পনা করে তার অনাগত শিশুটাকে মেরে ফেলা হবে ।
শেষমেষ ঠিকই দেখা যায় , তার পেট থেকে একটা অক্টোপাসের মতো বাচ্চা বের হয় । এবং শিশুটাকে মেরে ফেলা হয়।

জ্বীনকফিল নামের মিসির আলী একটি গল্পে একটি মেয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা করে কিন্তু সেটা নিজেই ভুলে যায়।

ওইজা বোর্ড – নামের একটা গল্পে প্লানচেট করে ভুত ডাকার ব্যবস্থা করা হয় । এই গল্পটা নিষ্ঠুর একটা গল্প।

ছায়াসংঙ্গী – নামের একটা গল্প খুব সহজ ভঙ্গীতে হরর বলার ব্যাপার আছে । একটা বাচ্চাকে মৃত ভেবে কবর দেয়া হয় , এরপর সে কবর থেকে জ্যান্ত উঠে আসে । তার বোন অন্য গ্রাম থেকে এসে কবর খুড়ে বের করে তাকে । কবরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা দেয়ার সময় সে একটা ছায়াসঙ্গীর কথা বর্ণনা করে যে কবর তার সাথে থেকেছিলো।

হুমায়ূন আহমেদের অসংখ্য উপন্যাসের মধ্যে কিছু কিছুর কথা ঘুরেফিরে মনে পড়ে । আয়নাঘর গল্পটা এমন একটা গল্প। প্রবাসী একটা ফ্যামেলীকে গ্রামের চাচা মেরে ফেলার চক্রান্ত করে । আয়নাঘরের বাস করা আত্মা তাদের বাচায়।

চাদের আলোয় কয়েকজন যুবকের মতো নিহলিষ্টিক উপন্যাস খুব কমই আছে। একটি সাধারন চাদের রাতে , কিছু যুবকের ভাগ্য আচমকা পরিবর্তিত হয়ে যায়।

বৃহন্নলা লেখাটা আমার এতো বছর পরও তীব্রভাবে মনে আছে । শুধু মাত্র মানুষের মুখের কথা শুনে ডিডাকশন । আর চমকের উপর চমক ।
এমন জমজমাট গল্প বলিয়ে আর কোথায় পাওয়া যাবে ।

কানাবাবা শুভ্র আর তার ক্ষমতাশালী বাবা আর দারুচিনির দ্বীপে অভিযানের কথা কে ভুলতে পারবে । খুব সিম্পল থিম অথচ কতো চিত্তাকর্ষক ।

একজন যুক্তিজ্ঞান , বৈজ্ঞানিক জ্ঞান সম্পন্ন, বুদ্ধিমান মানুষ তার আশেপাশের অতিপ্রাকৃত , অব্যাখেয়, আধিভৌতিক , এখনো ব্যাখা করা যায়নি এমন সব ঘটনায়
আলোরিত হবেন । প্রশ্ন করবেন , উত্তর খুজবেন এটাই স্বাভাবিক। হুমায়ূন আহমেদ ঠিক তাই করেছেন তার লেখালেখিতে । তার বিস্ময়কর কল্পনার জগতের একটু ভাগ দিয়েছেন তার পাঠকদের। এইকারনে তার গল্পে আধিভৌতিক, ভৌতিক, সায়েন্স ফিকশনের উপস্থিতি মাত্রাধিক হারে লক্ষ্য করা যায় ।

তার নাটক, ঈদের নাটক আর সিনেমার কথা উল্লেখ করা দরকার । নাট্যকার হিসাবে হুমায়ূন আহমেদ চরম সফল । বিশেষ করে সে সময়ের বাংলাদেশের নাট্যজগতের সব অসাধারন অভিনেতা অভিনেত্রীরা তার নাটকগুলো অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেছেন । এইসব দিন রাত্রী, অয়োময়, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই __ তাকে আকাশচুম্বী খ্যাতি দিয়েছে । বাংলা মধ্যবিত্তের ইনোসেন্সের সময়কালটা সেই আশির দশকের শেষ দিকে এবং নব্বইদশকের প্রথমার্ধে হুমায়ূন আহমেদের হাতেই বিনোদিত হয়েছে। সিনেমা নির্মাতা হিসাবে হুমায়ূন আহমেদকে আমার খুব উচুশ্রেনীর মনে হয়নি । একজনের পক্ষে সব বিষয়ে সর্বোচ্চ শিখর ছোয়া সম্ভব এটা আমি মনে করি না । তবে সিনেমা বানানো তার প্যাশন ছিলো। প্যাশনকে ফলো করতে ভুল করেননি তিনি সত্যিকারের মানুষের মতো ।

শেষমেষ ফিরে যাই নন্দিত নরকে আর শংখনীল কারাগারে । নন্দিত নরকে একটা নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প। যেখানে মানসিক ভাবে অপরিপক্ক একটা বোনের ধর্ষনের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ভাই ফাসিকাষ্ঠে প্রান দেয় । দেখার ব্যাপার হলো , সাহিত্য বোদ্ধারা হুমায়ূনের এই বইটিকে তার সর্বোত্তম সাহিত্য বলে স্বীকৃতি দেয় ।
এবং এই বইটা লেখার সময় তার বয়স ছিলো মাত্র ২২ বছর ! প্রথম বইটাতে হুমায়ূনের সব আবেগ তার চিন্তা-চেতনাকে ধরে ফেলেছিলো। আমার মনে হয় তার আবেগ , লেখনীকে তার আইডিয়াকে বাইরের কোন কিছু প্রভাবিত করেনি এই বইটাতে । সেই কারনেই কোন কিছু প্রভাবমুক্ত হয়ে চিরস্মরনীয় একটা লেখা লিখতে পেরেছেন ।

শংখনীল কারাগার, নন্দিত নরকেরই আরেকটা গল্প। একই রকম চরিত্র । কিন্তু গল্পটা ভিন্ন আর হৃদয়ছোয়া । শংখনীলকারাগারে শেষ পৃষ্ঠাটুকু পড়লে যে কেউ আবেগী হবেন এবং মিল খুজে পাবেন নিজের সাথে । এখন কার দিনে এইরকম গল্প বা ব্লগ লেখক ভুরিভুরি পাওয়া যায় । কিন্তু হুমায়ূন লিখেছেন ৭০ এর দশকে তিনি ছিলেন পাইওনিওর ।

________________
আমি অনেক গুলো হুমায়ূনের বই সংগ্রহ করেছিলাম । আমার আবার আত্মধ্বংসকারী স্বভাব আছে । বিভিন্ন সময়ে নিজের সংগ্রহ বিলিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
হুমায়ূন আহমেদ যখন মেয়ের বয়সী শাওনকে বিয়ে করলেন তখন রাগ করে তার সব বই বিলিয়ে দিয়েছি কাজিন, বন্ধুবান্ধবের মাঝে ।
আমি তখন ২০ বছর বয়সী । হুমায়ূন আহমেদ নিজের স্মৃতিচারন মূলক বা ভ্রমনমূলক যেসব লেখা লিখেছেন সেখানে তিনি নিজের স্ত্রীর সাথে প্রেম , নিজের পরিবারের গল্প ফলাও করে বলেছেন । এখন ২০ বছর বয়সীর কৃত্রিম ধারনাপ্রসূত কাচের ঘর ভাঙ্গার জন্য হুমায়ূন আহমেদের সমাজের চোখে নিন্দনীয় কাজই যথেষ্ঠ।
এরপর দীর্ঘদিন হুমায়ূন আহমেদ পড়িনি। সম্ভবত সে সময়েই হুমায়ূন আহমেদের লেখায় রিপিটেশন এসে পরে । বিত্ত এসে তার বিদ্যার সরস্বতীতে ভাগ বসায়।

এরপর আমি নিজের বিয়ে করেছি, আমার সন্তান হয়েছে । দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে একঘেয়েমি সম্পর্কে সচেতন হয়েছি আমি । সম্পর্ক গুলো কতো ভঙ্গুর হয় প্রবাসে এসে দেখেছি। নারী-পুরুষের সম্পর্কে জটিলতা তরুন বয়সীদের জানা সম্ভব না ।
সেসবের আলোকে মনে হয়ছে , হুমায়ূন আহমেদের উপর হার্শ আচরন করেছি আমি নিজে , বাংলাদেশের সমাজ । এসব ব্যাপারে হুমায়ূন আহমেদ প্রচন্ড সাহসী ছিলেন বলা যায় ।
তিনি সমাজের চোখ রাঙ্গানী কেয়ার করেনি । নিজের জন্য , নিজের পরিবারের জন্য যা ভালো হবে সেটাই করেছেন । টক্সিক একটা সম্পর্ককে বয়ে বেড়ানোর মতো যন্ত্রনা মাথায় নেননি।

তার সমালোচনাকারীরা প্রায়শ হয় মুক্তমনা , প্রগতীশীল , নারীবাদী । কিন্তু এসব মানুষ নিজেদের ভন্ডামি প্রকাশ করে দেন যখন বলেন হুমায়ূন আহমেদ মেয়ের বয়সীকে বিয়ে করেছেন । হুমায়ূন আহমেদে যদি পতিতা গমন করতেন , কিংবা বিবাহিত থেকেই পরকীয়া করতেন তাহলে সমাজ কিছু মনে করতো না । কিন্তু তিনি যখনি নিজের অধিকার চর্চা করেছেন তখনই প্রগতিশীলরা তাদের ভন্ডামির ক্ষুর দিয়ে তাকে চিরে রক্তাক্ত করেছে ।

____________________
হুমায়ূন আহমেদ সম্পর্কে দ্বিতীয় সমালোচনা হলো , তিনি বাজারী লেখক । ফরমায়েশ অনুযায়ী বই লিখেছেন । এই ব্যাপার সবচে ভালো জবাব দিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ । তিনি দ্বের্থহীন কন্ঠে বলেছেন , আমার নাটক লেখালেখি , খ্যাতি পাওয়া ইত্যাদির কারন আর কিছু না টাকা কামানোর জন্য । আমি লিখেছি টাকা ইনকাম করার জন্য । যেহেতু আমার বই বাজারে পাওয়া যায় , সেহেতু আমি বাজারী লেখক । এইরকম ভাবে বলার পর কারো মনে বাজারী লেখক কথাটা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না । সমালোচকদের মুখ সেখানেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা লজ্জায়।

___________________
হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে ডেপথ নেই , তিনি আবেগী লেখা লিখেন , তার বই জ্ঞান পাওয়া যায় না ।
তাদের উদ্দেশ্য বলা যায় বই পড়াটা বিদ্যা অর্জনের জন্য নয় । বই পড়াটা বিনোদনের অংশ বটে । কারো কারো জন্য হবি। একজন কিশোরের কাছে তার বই যথেষ্ঠ ডেপথ সম্পন্ন বলে ধরে নেয়া যায়। কেউ যখন ৪০ বছরের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে পেসিমিষ্টিক মন নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়েন তাহলে তিনি তার বইয়ে হাজারো সমস্যা খুজে পাবেন । সংগত কারনে তাদের জন্যই শুধু মাত্র কারো লেখালেখি করা হয় না । লেখালেখি একেকজনের কাছে একেক কারনে ।
হুমায়ূন আহমেদের ভাষায় আমার লেখালেখি করার উদ্দেশ্য হলো আনন্দ পাওয়া । এর আনন্দের ভাগটা যদি পাঠকরা পায় তাহলেই আমি স্বার্থক । হুমায়ূন আহমেদ
ভন্ড ছিলেন না , মিথ্যুক ছিলেন না । তাই তার কথা সত্য বলে ধরে নেয়া যায়।
____________________

হুমায়ূন আহমেদের বই রিপিটেশনে পূর্ন । তিনি একই চরিত্রকে বার বার নির্মান করেছেন , তার শেষের ১০-১৫ বছরের বই গুলোতে তার প্রমান পাওয়া যায় ।
এটা অবশ্য আমার নিজের অভিযোগ । তবে খুব জোরালো অভিযোগ না । বিশ্বসাহিত্যে যারা প্রচুর লেখালেখি করেছেন তাদের অনেক লেখাই আগের লেখার রিপিটেশন । রিপিটেশন একটা ক্রিয়েটিভ প্রসেস । অনেক সময়ে দেখে গেছে শিল্পী সাহিত্যিকরা রিপিটেশন দিয়ে তাদের পরবর্তী জীবনে সফলতা পেয়েছেন । হুমায়ূন আহমেদের বেলায় হয়েছে উল্টো। রিপিটেশন আমাদের বোর করেছে । যারা আমরা পুরানো পাঠক তারা ।

___________________
হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে রাজাকার চরিত্রদের হালকা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এরকম একটা অভিযোগ আওয়ামী ধার্মিকরা উপস্থাপন করেন ।
হুমায়ূন আহমেদের নানা ছিলেন শান্তি কমেটির চেয়ারম্যান । হুমায়ূন আহমেদের ভাষায় তারচে ভালো মানুষ তিনি জীবনে দেখেনি। বস্তুত হুমায়ূন আহমেদের পরিবারটি গোটা বাংলাদেশের তিক্ততাকে রেপ্রেজেন্ট করে । তার বাবাকে পাক-বাহিনী হত্যা করে । আর তার নানাকে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধারা । যিনি কোন যুদ্ধাপরাধ করেন নি , পরিস্থিতির চাপে , যে দেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন তারা সেই দেশ ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা হতবুদ্ধি ছিলেন । এই পরস্পরবিরোধী বাস্তবতা হুমায়ূন আহমেদের লেখায় সব সময় উঠে এসেছে। কারন এর কোন সহজ সমাধান নেই । কোন ঠিক বেঠিক নেই । শুধু ঐতিহাসিক বাস্তবতা আছে । তীব্র বাস্তবতা মুখে মনুষত্বের জয়-পরাজয় আছে ।
তবে আওয়ামী ধর্মের হাইপ্রীষ্ট মুহাম্মদ জাফর ইকবালের শাহবাগের দেয়া বক্তব্যের কথা সবাইকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই । যখন সবাই নিশ্চুপ ছিলেন । তখন
হুমায়ূন আহমেদ টিভি নাটকে তীব্র রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন তুই রাজাকার বলে ।
যারা আবেগের জোয়ারের দ্বিধাজর্জরিত মনকে মনের মাধুরী মিশিয়ে ট্যাগ দিয়ে বেড়ান , তাদের মুখ বন্ধ হবে না জানি । কিন্তু যারা বুদ্ধিমান তারা যেনো এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে না ভোলে। জলিল সাহেবের পিটিশনের গল্প যেনো তাদের মনে থাকে।
________________________
হুমায়ূন আহমেদ কেন কালজয়ী মহৎ উপন্যাস লিখলেন না এটা নিয়ে অনেক আক্ষেপ দেখি অনেক খানে । তার জীবনটাই তো একটা মহৎ উপন্যাস ! শুধু কষ্ট করে
তার জীবন ফলো করতে হবে এই যা !
_________________________
আমার অবশ্য কিছু নিজস্ব অভিযোগ আছে হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে । সেটা হলো তিনি প্রচন্ড ভাবে নার্সিসিষ্টিক ছিলেন । একজন বুদ্ধিমান মানুষের এই দোষটা কাটিয়ে না উঠে দৃষ্টি কটু। তবে প্রত্যেকেরই সীমাবদ্ধতা থাকে ।
আরেকটা ব্যাপার হলো , শেষের দিকে কয়েকটা বেশ ভালো বই লিখেছিলেন তিনি । বাদশা নামদার তার একটা । বছরে ১ টা বই লিখলে অনেক ভালো কিছু লিখতে পারতেন ।
আবারো লেখকের আর্থিক বাস্তবতার স্বাধিনতা লেখকের নিজস্ব । আমি শুধু আশা করতে পারি , কিন্তু জীবনটা তার তিনিই ঠিক করেছেন কোনটা ভালো তার জন্য ।
তার উপন্যাসের চরিত্রদের যৌনতা বোধ নেই বলতে গেলেই চলে । এটা সুশীল বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত শ্রেনির লক্ষন । হয়তো তার সচেতন চেষ্টা , কোনটা ঠিক জানা যায় না পরিস্কার ভাবে।
_______

হুমায়ূন আহমেদ নিজস্ব পাঠক তৈরী করেছেন । এসব পাঠকের পাঠরুচি হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে । বিশ্ব সাহিত্য সম্পর্কে তাদের জ্ঞান হয় না ।
অভিযোগটা জেনারাইজেশনের দোষে দুষ্ট সুতরাং আর্গুমেন্ট ছাড়াই বাতিল করে দেয়া যায় । আমি একজন নিবিষ্ট হুমায়ূন পাঠক ছিলাম । পাঠ রুচি পরিবর্তন করতে কোন সমস্যা হয়নি। হুমায়ূন পড়ার আগেও পড়েছি , যখন হুমায়ূন পড়েছি তখনো পড়েছি, যখন পড়া বাদ দিয়েছি তখনো পড়েছি ।
পাঠ রুচির পরিবর্তনের দায় কিভাবে লেখকের উপরে যায় । যেখানে তার লেখা তিনি ষ্টেইনব্যাকের বই এড় কথা বার বার বলেছেন । ষ্টিফেন কিং এর বই এর কথা বলেছেন। মানিকের কথা বলেছেন । সত্যজিৎ । বিভূতিভূষনের কথা বলেছেন । তলস্তয়, দস্তয়ভস্কির কথা বলেছেন । রবীন্দ্রনাথের কথা তো তার প্রায় বইয়েই আছে । তার বইয়ের নাম পর্যন্ত রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে করা ।
এতো এতো লেখকের রেফারেন্স দেয়ার পর হুমায়ূন হেটাররা কিভাবে এইরকম মিথ্যা অভোযোগ করেন , তখন তাদের শিক্ষা,দীক্ষা , পাঠরুচি নিয়ে প্রশ্ন উঠে ।

_______
হুমায়ূন আহমেদ এবং তার সমালোচকদের নিবিষ্টভাবে পর্যবেক্ষন করার কারনে আমি নিজের কিছু অভজার্ভেশন তুলে ধরছি এখানে । স্বাভাবিক ভাবে যারা কৈশোরে হুমায়ূন আহমেদ পড়ে অজানা জগতের সন্ধান পেয়েছেন আবেগী হয়েছেন , তারা যখন সাহিত্যিক , সাহিত্যিবোদ্ধা, সাহিত্যসমালোচক হন কিংবা আরো বড়ো হয়ে বিশ্বসাহিত্যের ছোয়া পান তারা হুমায়ূন আহমেদকে তাচ্ছিল্য করেন । যেমন করে আমরা তাচ্ছিল্য করি আমাদের কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষককে ।
আমার তারচে বেশি জানি বেশী বুঝি এটা আমাদের প্রিকনসিভড ধারনা হয়ে যায় ।
এই তাচ্ছিল্য থেকে হুমায়ূন আহমেদের মুক্তি নেই । কিন্তু যাদের তিনি আবেগের অ আ ক খ শিখিয়েছেন তারা যে জ্ঞানের হাত পায়ে বড়ো হয়েছে সেটার শোধ তোলে হুমায়ূন আহমেদের উপর বক্রোক্তি করে। আমি নিজেও অল্প পরিমান এই দোষে দুষ্ট ছিলাম ৫-৬ বছর আগে ।

পরের কারনটা নেহাত ঈর্ষা প্রসূত । হুমায়ূন আহমেদের সমসাময়িকরা প্রচন্ড ঈর্ষায় ভোগেন । এমনিতেই যারা লেখালেখি করেন তারা সাধারনত আরেকজনের লেখা খুব একটা পছন্দ করেন না । কারন ভাবেন আমার আইডিয়া আমার লেখার হাত অন্যদের চেয়ে ভালো।
হুমায়ূন আহমেদের খ্যাতি , বিত্ত ইত্যাদিই অনেকেরেই চোখশূল । তাদের ধারনা , লেখা হাত আর জ্ঞান বেশী থাকলেই খ্যাতি পাওয়া সম্ভব ।
শুধু লেখার হাত আর জ্ঞান দিয়ে হুমায়ূন আহমেদ হওয়া যায় না । উইট লাগে, প্রখর বুদ্ধিমান হতে হয়, ঈশ্বরপ্রদত্ত হিউমার লাগে, সাধারন আটপৌঢ়ে জীবনকে দেখার হুমায়ুনী চশমা থাকা লাগে । সবচে বড়ো কথা টাইমিং থাকা লাগে। এখনকারদিনে হুমায়ূনের মতো লেখা লিখলে ম্যাস লেভেলে জনপ্রিয়তা পাওয়া সম্ভব না । সে সময়ে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তা প্রাসংগিক ছিলো। এমনকি স্বয়ং হুমায়ূন আহমেদ এই সময়ে তার লেখা লিখলে এইধরনের জনপ্রিয়তা পেতেন না বলেই ধারনা করি ।

এছাড়া বাংলাদেশে যেকোন সাধারনের চেয়ে বড়ো ব্যক্তির সমালোচনা করার আর খাটো করার স্বাভাবিক বাঙ্গালিত্বের দোষ তো আছেই।
________

হুমায়ুন আহমেদ আস্তিক না নাস্তিক ছিলেন এটা নিয়ে আমি প্রায়শই চিন্তা করি । বাংলাদেশে এইধরনের সেন্সিটিভ ব্যাপার নিয়ে কথা বলা গর্হিত অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। তবে আমার কেন জানি মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন , যদিও তার রুট ছিলো বাঙ্গালী মুসলিম কালচার । এখন বিজ্ঞানমনস্ক বুদ্ধিমান মানুষের পক্ষে পদে পদে সন্দেহ আসাটা স্বাভাবিক । সন্দেহ শুধু ঈশ্বরের প্রতি না সন্দেহ ছিলো বিজ্ঞানের প্রতিও ।
তাকে দেখেই আমার মনে হয় , মানুষ কখনো সম্পূর্ন ভাবে যুক্তিবাদী হতে পারে না , কিংবা সম্পূর্ন আবেগী হতে পারে না ।
তবে এটা নেহাত আমার ধারনা । সম্ভব হুমায়ূন আহমেদ নিজেও আমার লেখা পড়লে চমকে যেতেন !!

__________

বাংলাদেশী মধ্যবিত্তের উপর হুমায়ুনের প্রভাব বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না । বাঙ্গালীর জোৎস্নাপ্রেম, বৃষ্টি প্রেম , সমুদ্রবিলাস ইত্যাদির জন্য সরাসরি তাকে দায়ী করা যায় ।
আমার উপর তার অস্বাভাবিক রকমের প্রভাব ছিলো যখন তার অন্ধভক্ত ছিলাম । তাকে দেখেই চিন্তা করতাম কোন একসময় লেখালেখি করবো।
কৃতজ্ঞতা জানাই তাকে , লেখালেখিতে আমার মতো আরো অসংখ্যজনকে ইন্সপায়ার করার জন্য ।

আমি অবশ্য কখনো হিমু, শুভ্র হতে চাইনি । কিন্তু তীব্র ভালোবাসা অনুভব করেছি সেই চরিত্র গুলোর প্রতি। তীব্রভালোবাসা অনুভব করেছি হুমায়ূনের প্রতিও , তার পরিবারের প্রতি। এমনকি যখন তাকে ঘৃণা করেছি তখনো তাকে ভালোবেসেছি।

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে অনেক আলোচনা চলবে সামনের বছর গুলোতে বাংলা সাহিত্য সমাজে , আমার মনে হয় তার সমালোচনা আলোচনা করার আগে আমাদের মাথায় রাখতে হবে মানুষ নিজের ভিতর যুক্তি আর আবেগ একই সাথে তীব্রভাবে রাখতে পারে । শুধু একপেশে চিন্তাভাবনা করলে তাতে নিজের অন্ধত্বই ধরা পড়বে ।

হুমায়ূন আহমেদের চোখে ছিলো এক জাদুর চশমা । সেই চশমা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যেকে , বাংলাদেশের মানুষ নতুন কিছু দেখাতে শিখিয়েছেন , নতুন ভাবে উপলব্ধি , উপভোগ করতে শিখিয়েছেন ।

আবেগ আর যুক্তিকে একই সাথে ধারন করে, মেঘের কাছাকাছি জীবন থেকে তিনি আমাদের নন্দিত নরকের বৃষ্টিমুখর শঙ্খনীল কারাগার দেখেছেন তার জাদুর চশমা দিয়ে , লিখেছেন তার হৃদয় আর মস্তিষ্ক দিয়ে । তার জন্য রইলো অনন্ত নক্ষত্র বিথীর সজ্জিত জোৎস্না পরিমান ভালোবাসা।

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, ধন্যবাদ আপনার চশমাটা আমাদের ধার দেবার জন্য ।

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!