হাসির গল্প

হাসি নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর। মানুষ ছাড়া আর কেউ হাসে না। এই নিয়ে আজিমভের একটা জটিল গল্প আছে, দ্য জোকস্টার … আছে অসমঞ্জবাবুর কুকুরকে নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের গল্প। আমার গল্প হাসিকে নিয়ে। না, হাসি কোন বালিকার নামও নয়। তাকে নিয়ে আমার গোপন আশনাইয়ের রগরগে গল্পও বলবো না। আমি বলবো সেই হাসির কথা, যা আমরা মুখ খুলে সশব্দে হাসি। তবে শুরুতে একটা হাসির গল্প বলি।
এক লোক মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। পথ চলতে চলতে ক্লান্ত, হঠাৎ খুঁজে পেলো এক চেরাগ। তুলে ঘষা দিতেই বেরিয়ে এলো দৈত্য। যে কোন হুকুম তামিল করবে সে। লোকটা বললো, আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। দৈত্য বললো, তথাস্তু, আমার পিছু পিছু আসুন। এই বলে বালির ওপর হাঁটা ধরলো সে। কিছুদূর হেঁটে চটেমটে লোকটা বললো, আমি আরো জলদি জলদি বাড়ি ফিরতে চাই। দৈত্য বালির ওপর দৌড় শুরু করে বললো, তথাস্তু, আমার পিছু পিছু দৌড়ান। যাঁরা এই গল্প পড়ে হাসলেন, তাদের এবার জিজ্ঞেস করি, কেন হাসলেন? কোন জায়গায় এসে হাসলেন? যাঁরা হাসেননি, তাঁদেরও বলি, কেন হাসলেন না? হাসির রহস্য কিছুটা ভেদ করেছেন ভিলায়ানুর রামাচন্দ্রন। মস্তিষ্কবিশারদ। মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তনের সাথেই হাসির রহস্যজড়িত, এই ধরে নিয়ে এগিয়েছেন তিনি। আর মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তনের ধাপ বহু, বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন ঘটনা বিভিন্ন গতি আর দিকে টেনে নিয়ে গেছে আমাদের মস্তিষ্ককে। কেউ যদি হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়, তারপর ধূলো ঝাড়তে ঝাড়তে ওঠে, আমরা অনেকেই হেসে উঠবো।
কিন্তু সেই লোক যদি পড়ে গিয়ে মাথা ফাটায় বা অজ্ঞান হয়ে যায়, আমরা হাসবো না, বরং ছুটে যাবো সাহায্য করতে। হাসির রহস্যের একটা আবছা সমাধান আছে এখানেই। হাসিকে ফলস অ্যালার্ম সিগনাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন রামাচন্দ্রন। দলবদ্ধ বৃক্ষচারী পূর্বপুরুষের আমল থেকেই সম্ভবত হাসির সূত্রপাত। বিপদ দেখলে সংকেত দেয়া প্রায় সব দলবদ্ধ প্রাণীর আচরণে গাঁথা, কিন্তু যদি সংকেত দেয়ার পর দেখা যায়, বিপদটা আসলে বিপদ নয়? সেক্ষেত্রে আরেকটি সংকেত দিয়ে দলের বাকিদের জানিয়ে দিতে হবে, আগের সংকেত ভুল ছিলো। ফলস অ্যালার্ম ভাইয়োঁ, ভয়ের কিছু নাই, চরে খাও। এই ফলস অ্যালার্মের সংকেত আমাদের ভেতরে সেই থেকে বিদ্ধ হয়ে আসছে।
সময়ের সাথে এর কিসিম পাল্টে গেছে, মৌখিক ভাষার বিকাশের পর হয়তো এর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কিন্তু এরই সাথে আমাদের চেতনায় ফলস অ্যালার্ম ঠাঁই করে নিয়েছে অন্যভাবে। আমরা আবিষ্কার করেছি এক নতুন জিনিস, হাস্যরস। উদ্ভট কোন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রত্যাশিত বিপদ যখন প্রাপ্তিতে নিছক সাদামাটা চেহারা নিয়ে আসে, তখন সেই ফলস অ্যালার্মের সংকেত আমরা দিয়ে উঠি, চেতনার গভীর থেকে। হাসির গল্পটা খুব একটা হাসির বোধহয় হলো না। উৎসাহীরা চাইলে পড়ে দেখতে পারেন রামাচন্দ্রনের দ্য ইমার্জিং মাইন্ড বইটা। হাসুন সবাই প্রাণ খুলে।

দৈত্য ও পিঠা

গ্রীক ট্রাজেডীঃ হারকিউলিসের প্রেম কাহিনী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *