হাবলু গ্রামে থাকে।গ্রামের লোকেরা তাকে বোকা বলে জানে।বিয়ে হয়েছে কয়েক যুগ আগে।মজার ব্যাপার হল,বিয়ের দিনেই শুধু শ্বশুর বাড়ি জাওয়া হয়েছিল।একদিন হঠাৎ বাবলুর ঘাড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবার ভুত চাপলো।সে ভাবল,হঠাৎ যদি মরে যাই তাহলে আর কোন দিন শ্বশুর বাড়ি জাওয়া হবে না।হাবলু শ্বশুর বাড়ির পথও চিনে না।তাই মায়ের কাছ থেকে পথ ঘাটের কথা শুনে বের হয়ে গেল।মা হাত ইশারায় বললেন,এভাবে সোজা যাও।মায়ের দেখানো সোজা পথেই হাবলু জাত্রা শুরু করল, সে চলছে একদম সোজা।সামান্য এদিক ওদিক ঘুরছে না।
যদি শ্বশুর বাড়ির পথ হারিয়ে যাই।অনেক দূর যাবার পর পথ অন্য দিক ঘুরে গেল।তবে হাবলুর তো ঘুরলে চলবে না।
যদি শ্বশুর বাড়ি হারিয়ে যাই।তাই সোজা নিশানা বজায় রেখে পথ চলল,কিছুদুর গিয়ে সামনে পড়ল,এক বিশাল দিঘী।দিঘী ঘুরে ওপাশ দিয়ে গেলে তো শ্বশুর বাড়ি হারিয়ে যাবে।
না সোজাই যাবে হাবলু।কাপড় চোপড় নিয়ে নেমে পড়ল।দিঘীতে সাতরিয়ে সোজা উঠল দিঘীর ওপারে!একটু জিরিয়ে গায়ের ঘাম শুকিয়ে নিল।এবার সোজা পথ চলতে শুরু করল,এবার হাবলুর সামনে পড়ল এক গরুর পাল।একটু ঘুরে গেলেই হয়।কিন্তু ওকে তো ঘুরলে চলবে না।কিন্তু মা তো বলেছে সোজা যেতে।হাবলু গরুর পালের মধ্যে প্রবেশ করে যথা সম্ভব গরুদের সরিয়ে সোজা যেতে লাগল।কিন্তু এক বদ মেজাজী গরু হাবলুর এই বাদশাহী চলন পছন্দ হল না।গরু তেড়ে আসে হাবলুকে আচ্ছা করে গুতিয়ে দিল।হাবলুও দম বার মানুষ নয়।সে ভাবল সোজা জাওয়া তো খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার।তবে এত দূরে যেহেতু চলে এসেছি যে করেই হোক শ্বশুর বাড়ি যাবো।নিরাশ না হয়ে হাবলু আবার পথ চলতে লাগল।মাঠ ছারিয়ে সে একটি তাল খেজুর বনে এসে পড়ল,দুভার্গ্য।হাবলুর সোজা নিশানার পথে একটা বিশাল তাল গাছ,এখন তো মহা বিপদ।তালগাছ ডিঙিয়ে কীভাবে যাবে হাবলু। আবার গাছ ঘুরে গেলে তো সে পথ হারিয়ে ফেলবে।তা হলে কি শ্বশুর বাড়ি জাওয়া হবে না।হাবলুর সোজা পথ চলা এত বাঁধা।না,শ্বশুর বাড়ি যেতে হবেই,যত বাঁধা আসুক না কেন।
হাবলু দেখে শুনে সোজা গাছ বেয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগল।অপর পাশ দিয়ে নামলে সোজা নিশানা ঘুরে যাবে না।সোজা পথ বজায় থাকবে হাবলুর।কিন্তু গাছের মাথায় উঠে হাবলু এক গ্যাঁড়াকলে পড়ল।অপর পাশ দিয়ে পাতা ধরে নামতে গিয়ে হবলুর দু পা গাছ থকে ফঁসকে গেল।হাতে ধরা থাকল গাছের পাতা।পাতার ডগা খুব লম্বা হওয়ায় হাবলুর পা দিয়ে গাছের নাগাল পেল না।এখন কি উপায়।এমন উঁচু থেকে পড়লে সে নির্ঘাত শ্বশুর বাড়ি ও বৌ সহ হারাতে হবে।তাছাড়া এভাবে কতক্ষণ ঝুলে থাকা যায়।হাবলু পড়ল মহা বিপদে।তবে কি হাবলুর শেষ পর্যন্ত শ্বশুর বাড়ি জাওয়া হবে না।হাবলু পাতা ধরে এদিক সেদিক চোখ ঘোরাচ্ছে। হঠাৎ সে কিছু দূরে দেখে একটা গায়ক গজল গেয়ে হাতির পিটে চড়ে যাচ্ছে।বাবলু তার উদ্দেশ্য সজোরে চিৎকার শুরু করল।অবাক কাণ্ড দেখে যুবক গাছের কাছে এল।সে হাবলুর ঝুলে থাকা বরাবর নিচে হাতি দাড় করিয়ে হাতির পিঠে দাঁড়াল তাকে নামানোর জন্য।যেই সে আঙ্গুলে ভর দিয়ে উঁচু হয়ে হাবলুর পা দুটো ধরল।ঠিক সেই মুহুর্তে আজব ঘটনা ঘটে গেল।আঙ্গুলের চাপে পিঠে ব্যাথা হাতি দিল দৌড়।আর গায়ক অগ্যতা হাবলুর পা ধরে ঝুলে রইল।হাবলুর বিপদ বেড়ে গেল।হাবলু ভাবছে,ছিলাম একা একে ডেকে এনে বিপদ আরও ডবল হল।গায়ক ভাবছে একা যাচ্ছিলাম।ওকে বাঁচাতে এসে কেন মরতে গেলাম?যা হোক দু,জনের ভার আর হাবলু আর কতক্ষণ রাখতে পারবে।দারুণ দৃশ্য,গায়ক ঝুলে আছে হাবলুর পা ধরে আর হাবলু ঝুলে আছে তালপাতা ধরে।ছেড়ে দিলেই দু,জনের শ্বশুর বাড়ি ও বউসহ হারাতে হবে।হঠাৎ হাবলু বলল,গায়ক ভাই গজল শুরু কর।দেখ কেউ আসে কি না।বুদ্ধিটা মন্ধ না।গায়ক সুরেলা গলায় গজল ধরে টান দিল।সুরের মূছনায় পরিবেশ বিমোহিত হয়ে গেল।গজল শুনে হাবলুর কষ্ট লাঘব হতে শুরু করে।ক্রমে গজলের সুর হাবলু এমন আত্নহারা হয়ে গেল যে,সে ভুলেই গেল যে সে তালপাতা ধরে ঝুলে আছে এবং হাবলুর পায়ে ঝুলে আছে আরেক হাবলু,মন্ত্রমুগ্ধের মত বলে উঠল,তোমার গলায় এত সুন্দর সুর।সেই সাথে আবেগের আতিসহয্যে বাহ,বেশ,স্বজোরে হাতে তালি দিল হাবলু।এর পর কি হলো,এক জোড়া তাল পড়ল।মানে গাছ থেকে দুই হাবলু ধপাশ।
গায়কের সুরেলা গজল থেমে গেল।হাবলুর সোজা পথ চলা ঘুরে গেল।আর জাওয়া হল না হাবলুর শ্বশুর বাড়ি।