হাদিসে মিসকিন ও ফকিরদের আলোচনা

অনুবাদঃ হযরত সহল ইবনে সাদ হতে বর্ণিত। একদা এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। নবী কারীম (সাঃ) এর সামনে বসা একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? উত্তরে সে বলল, লোকটি ভাল বংশের। তিনি কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা সাথে সাথে কবুল হবে, কারো সম্পর্কে সুপারিশ করলে নিশ্চয়ই এটা রক্ষা করে হবে। এটা শুনে রাসূল (সাঃ) চুপ রইলেন। কিছুক্ষণ পর অন্য এক ব্যক্তি যাচ্ছিলেন। নবী কারীম (সাঃ) তার বিষয়েও জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরে সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে একজন দরিদ্র মুসলমান। সে কোথাও বিয়ের প্রস্তাব করলে কোন কাজ হবে না। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এবার বললেন, প্রথমোক্ত ব্যক্তির মত মানুষ দ্বারা দুনিয়া পুর্ণ হয়ে গেলেও এই শেষোক্ত ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারবে না। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

অন্য এক হাদিসে আছে- হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) বর্ণনা করেন, একবার একদল বিত্তহীন ফকীর নবী কারীম (সাঃ) এর দরবারে এক দূত পাঠাল। সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করল, আমি ফকীরদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত হয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তুমি যাদের প্রতিনিধি হয়ে এসেছ আমি তাদেরকে ভালবাসি। দূত তার আগমনের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে বলল, ফকীররা আমাকে আপনার নিকট এটা জানতে পাঠিয়েছে যে, বিত্তবানরাই যাবতীয় কল্যাণ ও ভাল কাজ করছে। আর আমরা শুধু বঞ্চিত হচ্ছি। অপর এক বর্ণনা মতে দূত বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! বিত্তবানরা জান্নাত অধিকার করে নিয়েছে। তারা হজ্জ আদায় করে, দান সাদকাহ করে এবং গোলামদেরকে আজাদ করে দেয়, অথচ এ সকল বিষয়ে আমাদের কোন সামর্থ্য নেই। দূতের বক্তব্য শুনে আল্লাহর হাবীব (সাঃ) বললেন, ফকীরদেরকে তুমি বলে দেবে যে, তাদের মধ্য যারা ধৈর্যধারণ করবে এবং ছাওয়াবের নিয়ত করবে তাদেরকে এমন তিনটি বিশেষ মর্তবা দান করা হবে যা বিত্তবানদেরকে দেয়া হবে না। প্রথমতঃ জান্নাতে বেশ কিছু সুদৃশ্য জানালা থাকবে। মূল্যবান লাল ইয়াকুত দ্বারা নির্মিত ঐ জানালাগুলো এমন উচ্চস্বরে স্থাপিত হবে যে, জান্নাতবাসীরা ওতে এমনভাবে দেখবে যেমন দুনিয়ার মানুষ আকাশের তারা দেখে। ঐ জানালাগুলো শুধু নবী, ফকীর, বিত্তহীন, শহীদ এবং ইমানদার ফকীররা লাভ করবেন। দ্বিতীয়তঃ ফকীররা বিত্তবানদের তুলনায় পাঁচশ বছর পূর্বে জান্নাত লাভ করবে। তৃতীয়তঃ একজন গরীব ব্যক্তি এখলাসের সাথে-

سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر

দোয়াটি পাঠ করলে তার বিনিময়ে যে ছাওয়াব লাভ করবে, একজন ধনী ব্যক্তি যদি একই নিয়মে ঐ দোয়া পাঠ করে এবং সেই সাথে দশ হাজার দিনারও দান করে তথাপি সে ঐ গরীব ব্যক্তির সমান ছাওয়াব লাভ করেব না। অপরাপর নেক আমলের ক্ষেত্রেও এ অনুপাতেই গরীব ও ধনীদের ছাওয়াব হিসাব করা হবে। দূত যখন গরীবদের নিকট ফিরে গিয়ে এ সংবাদ শোনাল তখন তারা চিৎকার করে বলে উঠল, ইয়া আল্লাহ! আমরা সন্তুষ্ট আছি!

হযরত হাসান বসরী (রহঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, গরীব-মিসকীনদের সঙ্গে বেশী বেশী যোগাযোগ রাখবে এবং তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করবে। কেননা, তাদের নিকট মূল্যবান সম্পদ রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে সম্পদ কি? তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন বলা হবে যে, দুনিয়াতে তোমাকে যে ব্যক্তি এক টুকরো রুটি দিয়েছে বা এক ঢোক পানি পান করিয়েছে কিংবা একটি বস্ত্র দান করেছে আজ তাকে তালাশ করে তার হাত ধরে জান্নাতে নিয়ে যাও।

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, সব বস্তুরই একটি চাবি আছে। আর জান্নাতের চাবি হল, ফকির-মিসকীন এবং সত্যবাদী ও ধৈর্যশীলদের প্রতি ভালোবাসা। যারা এ শ্রেনীর লোকদেরকে ভালবাসবে হাশরের দিন তারা আল্লাহর সাথে অবস্থান করবে।

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যদি এতটুকু বলতেন যে, আমার সাথে মিসকিনদের হাশর করও, তবে তাই মিসকিনদের ফজিলতের জন্য যথেষ্ট ছিল। উপরন্তু তিনি বলেছেন, মিসকিনদের সাথে আমার হাশর করও। এর চেয়ে বেশী ফজিলত আর কি হতে পারে?

রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেন, মানুষের অন্তরে যখন নূর পয়দা হয় তখন তার অন্তর প্রশস্ত হয়ে যায়। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, তার আলামত কি? বললেন, দুনিয়ার প্রতি নিরুৎসাহ এবং আখেরাতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।