হাতি ও খরগোশ

হাতি ও খরগোশ
বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা? আশা করি ভালো ও সুস্থ আছো। আমরা এবার হাতির সঙ্গে এক খরগোশের চালাকির গল্প প্রচার করেছি। আর । প্রথমেই গল্পটি শোনা যাক। অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক বনের ভেতর একটা কূপ ছিল। ঝর্না থেকে সৃষ্ট ওই কূপের পানি ছিল একেবারে স্বচ্ছ কাঁচের মতো। যেমন পরিষ্কার তেমনি সুপেয়, ঠাণ্ডা এবং নির্মল। ওই কূপের পাশে বাস করতো একদল খরগোশ। যখনই তাদের পানির তৃষ্ণা পেত তখনই তারা চলে যেত ওই কূপের কাছে। ইচ্ছেমতো পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাত। সব মিলিয়ে খরগোশের দল মোটামুটি আরাম-আয়েশের মধ্য দিয়েই কাটাচ্ছিল তাদের জীবন। কোনোরকম ঝুটঝামেলা ছিল না তাদের জীবনে। কিন্তু এই প্রশান্ত জীবনের মাঝে হঠাৎ ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। একদিন ওই কূপের কাছে একপাল হাতি দেখা গেল। ওরা কোত্থেকে যেন এখানে এসে পানি খেয়ে চলে গেল। কিন্তু না, একেবারে চলে গেল না। প্রায়ই দেখা গেল ওরা দল বেঁধে আসে, পানি খায় আবার চলে যায়। হাতির পালের এই আসা যাওয়াটা খরগোশদের ভালো লাগল না। তারা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।
কারণ তাদের জীবন যাপনের নিশ্চিন্ত স্বাধীনতাটা আর থাকল না। কারণ বিশালদেহী হাতিগুলোর পায়ের নীচে পড়ে কে কখন মারা যায়, তার কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এই নিরাপত্তাহীনতাই খরগোশদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াল। হাতিগুলো এখন এই কূপের আশপাশে ঘুরাফেরা করে। হাতিকে ওই এলাকায় দেখলে স্বাভাবিকভাবেই খরগোশেরা কূপে পানি খেতে যেতে ভয় পায়। তাছাড়া হাতির পাল পানি খেতে গিয়ে কূপের পানি নষ্ট করত, ময়লা করে ফেলত।
এটা খরগোশদের ভাল লাগছিল না। তারা তাই একটা পরামর্শ বৈঠক ডাকল। কী ভাবে এই উটকো ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে ভাববার, উপায় খুঁজে বের করবার চেষ্টা করল তারা। খরগোশদের মাঝে একটা বয়স্ক খরগোশ ছিল বুদ্ধির রাজা। সবাই এক নামে তাকে চিনত। যে-কোনো সমস্যার চমৎকার সমাধান বেরিয়ে আসত তার মাথা থেকে। এ জন্যই সে এতটা পরিচিত ছিল সবার মাঝে। সে বলল: ‘আমি এই সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছি। চিন্তার কিছু নেই। ঠিক হয়ে যাবে। শীঘ্রই এমন এক কাজ করব আমি যাতে হাতিরা আর কূপের ধারে কাছেও না ঘেঁষে।’ খরগোশের দল আশ্চর্য হয়ে গেল এ কথা শুনে। সবাই সমস্বরে জানতে চাইল: ‘কিন্তু কী করবে, কীভাবে করবে? তুমি একটা ক্ষুদ্র এবং দুর্বল প্রাণী হয়ে অত বড় হাতির সাথে কী করে লড়বে? আদৌ কি সম্ভব হাতির পালকে এখান থেকে সরানো?’ বৃদ্ধ খরগোশ বলল: আমার একটা প্লান আছে। শীঘ্রই জানতে পারবে। আজ রাতে আমি পর্বতচূড়ায় গিয়ে হাতিদের সাথে কথা বলব। আশা করি ওরা আমার কথা বিশ্বাস করবে এবং এখান থেকে চলে যাবে। খরগোশের দল জানত যে, বৃদ্ধ খরগোশ বেশ অভিজ্ঞ এবং সচেতন। যা কিছুই করে বুঝে শুনেই করে। ফালতু কথা বলে না। সুতরাং বৃদ্ধ খরগোশ কোনো দূরদর্শী চিন্তাই করে থাকবে এবং পরিণতিতে দ্রুতই নিজেদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি পাবে। রাত ঘনিয়ে এল। চতুর্দশীর পূর্ণ চাঁদ ছিল আকাশে। চারদিকে ছিল তাই জোছনার নির্মল বিস্তার।
খরগোশ ওই জোছনার ভেতর পাহাড়ের ওপর গেল এবং চিৎকার করে উঠল। হাতির পাল খরগোশের চিৎকার শুনতে পেল এবং কী বলতে চায় শুনতে চাইল। বৃদ্ধ খরগোশ বলল: হে হাতির দল! শোন! আমি চাঁদের দূত। চাঁদের পক্ষ থেকে আমি তোমাদের বলছি। চাঁদ আদেশ দিয়েছে কোনো হাতি ওই কূপের কাছে যেতে পারবে না। ওই কূপটা খরগোশদের জন্য। কূপ চাঁদ আর খরগোশদের সম্পত্তি। এটা চাঁদ তোমাদের বলার জন্য আমাকে আদেশ দিয়েছে। সুতরাং আজকের পর তোমরা ওই কূপের আশপাশ থেকে চলে যাবে। সাবধান! কূপের কাছে আবারও যদি যাও তাহলে চাঁদ তোমাদের অন্ধ করে দেবে। আমার কথা যদি তোমাদের বিশ্বাস না হয় তবে আজ রাতেই তোমরা কূপের পানি খেতে গিয়ে দেখ। কূপের ভেতর ভালো করে তাকালে চাঁদের রাগটা টের পাবে। একটু থেমে বৃদ্ধ খরগোশ আবার বলল: হে হাতির দল! আমি যা বলছি তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি। তোমরা সবাইকে জড় করে এখান থেকে চলে যাও, সেটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আর যদি না যাও তাহলে নিজেদের চোখের সামনেই নিজেদের পরিণতি দেখতে পাবে।
তখন বলতে পারবে না যে কেন তোমাদেরকে আগে বলিনি। এই বলে বৃদ্ধ এবং চালাক খরগোশ পর্বত থেকে নীচে নেমে সোজা চলে গেল তার বন্ধুদের কাছে। অপেক্ষমান কৌতূহলী বন্ধুদের বলল: এখন দেখ কী ঘটে। শুধু দোয়া কর হাতির পাল যেন আমার কথা বিশ্বাস করে। হাতিরা সবসময় ওই কূপে পানি খেতে দিনের বেলায় যেত। কখনোই তারা রাতে যায়নি। খরগোশের দলও না। হাতির পাল খরগোশের কথাগুলো নিয়ে খানিকটা ভাবল। একটা হাতি বলে উঠল: ওই বুড়া খরগোশ কী সব আজগুবি কথাবার্তা বলে গেল। আরেক হাতি বলল: কী করে বুঝব যে, সে উদ্ভট বলেনি, সত্যিই বলেছে? হাতিদের সর্দার এবার মুখ খুলল। সে বলল: হতেও তো পারে যে চাঁদ আসলেই ওই কথাগুলো বলেছে। তাই পরীক্ষা করে দেখাটা মন্দ হবে না। চলো আমরা সবাই এই রাতে কূপের কাছে যাই। দেখি খরগোশের কথাগুলো আসলে সত্য নাকি মিথ্যা! হাতির দল কূপের উদ্দেশে রওনা হলো এবং পৌঁছে গেল। হাতির রাজা বলল: পরীক্ষা করে দেখতে আমি নিজেই যাচ্ছি কূপে। পাড়ে যেতেই হাতি কূপের ভেতর তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল। সে দেখলো চাঁদ সত্যি সত্যিই কূপের ভেতর। হাতি তো জানত না যে এই চাঁদ আসল চাঁদ না বরং আকাশের চাঁদের প্রতিবিম্ব মাত্র। হাতির রাজা মনে মনে বলল: অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে খরগোশ মিথ্যে বলেনি। এবার কূপ থেকে একটু পানি খেয়ে দেখি খরগোশের বাকি কথাগুলো সত্যি কি না! হাতির রাজা ধীরে ধীরে কূপের একেবারে কাছে গেল এবং তার বিশাল শুঁড়টা পানিতে ডুবিয়ে দিল। দেয়ার সাথে সাথে পানিতে ঢেউ উঠল আর প্রতিবিম্বিত চাঁদ ওই ঢেউয়ের নড়াচড়ার সাথে আঁকাবাঁকা হয়ে গেল। চাঁদ আর চাঁদের আকৃতিতে থাকল না উল্টাপাল্টা হয়ে গেল। হাতি ওই দৃশ্য দেখে ভাবল চাঁদ ভীষণ রেগে গেছে। রাগে ক্ষোভে উত্তেজিত হয়ে ওঠায় চাঁদের ওই দশা হয়েছে। হাতি আনমনে বলল: খরগোশ মিথ্যে বলেনি, সত্যিই বলেছে। তার মানে এই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়াই উত্তম।
তা না হলে চাঁদ রেগেমেগে আমাদের অন্ধ করে দিতে পারে। এক্ষুণি তো আমার দৃষ্টি দুর্বল হয়ে গেছে, চাঁদকে কেমন যেন কাঁপা কাঁপা দেখছি, ঘোলাটে দেখতে পাচ্ছি। সে বুঝতে পারে নি, পানিতে পা রাখার কারণে পানি ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিল। আর ওই ঘোলা পানিতে চাঁদকে একটু অস্পষ্ট দেখতে পেয়েছে। হাতিদের সর্দার তাড়াতাড়ি ফিরে গেল হাতির পালের কাছে। গিয়ে বলল: বন্ধুরা! খরগোশ যা বলেছে সব সত্য। এ রাতেই আমাদের এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত। অন্য কোথাও গিয়ে আরেকটা কূপ খুঁজে বের করা উচিত। হাতির রাজার কথায় সবাই সম্মত হলো এবং ওই রাতেই হাতির পাল কূপের কাছ থেকে অন্য কোথাও চলে গেল।*
টাকার ঝনঝনানী

টাকার ঝনঝনানী—

জুলুম-নির্যাতনের পরিণতি

জুলুম-নির্যাতনের পরিণতি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *