এমন এক সময় ছিল, যখন হাতির নাক এতোটা লম্বা ছিল না।সে এপাশ ওপাশ মোড়াতো। কিন্তু হাতির বাচ্চা
সব কিছু পরিবর্তন করেদিলো।
সে ছিল জিজ্ঞাসু, অনেক কিছুই জানার জন্য সে শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন করতো।
সে উট পাখিকে জিজ্ঞেস করলো, কেন তার লেজে এতো পাখা?
সে জিরাফকে জিজ্ঞেস করলো, কিসে তার সারা শরীরে এতো ফোটা ফোটা দাগ তৈরি করলো?
সে জল হস্তিকে জিজ্ঞেস করলো, কেন তার চোখগুলো এতো লাল।
একদিন সে জিজ্ঞেস করলোঃ “কুমির তার দুপুরের খাবারের জন্য কি খায়?”
তার এতো সব প্রশ্নে সব পশু তাকে ধমক দিয়ে বললোঃ
“চুপ কর” ।
কিন্তু সে চুপ করলো না। প্রসঙ্গক্রমে সে একটি পাখির সাথে দেখা হলে পাখিটি তাকে বলে দিলো কোথায় গেলে সে এতোসব প্রশ্নের উত্তর পেতে পারে।
“ধূসর, সবুজ, পিচ্ছিল লিপুপু নদিতে যাও” পাখি তাকে বললো।
সুতরাং সে রাস্তায় ক্ষুধা পেলে যেন খেতে পারে তাই কলা, আখ আর তরমুজ সাথে বহন করে নিয়ে গেলো ওখানে ।
এক সপ্তাহ পরে পা টেনে টেনে অতি কষ্টে সে ওখানে গিয়ে পৌঁছল ।
নদীর কিনারে একটি গাছের গুড়ি মনে করে সে পা রাখলো, তার এক চোখ মিট মিট করছে;
“আমাকে ক্ষমা করবেন, আপনি কী এখানে একটি কুমির দেখতে পেয়েছেন।” হাতির বাচ্চা সবিনয়ে জিজ্ঞেস করলো।
প্রানিটির অন্য চোখটি মিট মিট করলো, এবং তার লেজ আধা আধি বাঁকা করে কাদা মাটি থেকে উপরে উঠালো
“আমিই কুমির” সে উত্তরে বললো।
হাতির বাচ্চাটি আবেগ প্রবণ হয়ে উঠে এবং নীচে হাটু গেড়ে বসে।
“আমি তোমাকে বেশ কিছু দিন থেকে খোঁজছি।
দয়া করে আমাকে বলবে তুমি দুপুরের খাবারে কি খাও?”
প্যাচপেচে কাঁদায় কুমিরের লেজ বাঁকা হয়ে গেলো।
“আর একটু অধিকতর কাছে এসো, আর একটু কাছে, আমি তোমার কানের কাছে বলবো” কুমিরটি বললো।
হাতির বাচ্চাটি তার মাথা কুমিরটির দাঁতালো হা করা মুখের কাছে নিচু করলো।
সাথে সাথেই কুমির তার ছোট্ট নাকে কামড় বসিয়ে ধরে ফেললো।
হাতির বাচ্চা বুঝতে পারলো, সে এখন বড় এক সমস্যায় পড়েছে। সে তার পিছনটা নিচে বাঁকিয়ে সামনের পায়ে খুটি করে, আর নিজকে রক্ষা করেতে প্রাণপনে টানতে লাগলো।
কুমির তার লেজ দিয়ে পানিতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঝাপটাচ্ছে আর টানছে।
এরা উভয়ই খুব জুরেসুরে টানাটানি করছে।এতে করে হাতির বাচ্চার নাকটি কিছুটা লম্বা হতে লাগলো। অবশেষে কুমির একসময় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে; হাল ছেড়ে হাতিকে ছাড়তে বাধ্য হয়ে আবার জলে হারিয়ে গেলো। হাতির বাচ্চা তার পিছনের দিকে পিঠে উপর ধপাস করে পরে গেলো।
সে তার নাক দেখতে লাগলো। সে দেখতে পারছে না, কোথায় এটা শেষ হয়েছে! এটা এতোটা লম্বা হয়েছিলো, অনেক লম্বা। সে এটাকে শাঁই শাঁই করে ঘুরাতে পারে। কিন্তু এটা তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।
সে তার নাকটাকে ঠান্ডা কলাপাতায় জড়িয়ে অপেক্ষা করছে আর নিজের মধ্যে সঙ্কোচ বোধ করছে।
সে অপেক্ষা করছে আর করছে। কিন্তু কিছুই হোল না। সে এখনো তার নাকটাকে শাঁই শাঁই করে চারদিকে ঘুরায়।