আফ্রিকা মহাদেশের কোথা তোমরা কতবার,কত যায়গায় শুনেছ।সেই আফ্রিকার কালো মানুষের মানুষের একটা কোথা শোন।আফিকার গভীর বন-জঙ্গলে তোমরা তো জানোই।সে এক গহিন জঙ্গলের কাহিনী।সেখানে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের এলো পৌছায় না মাটিতে।চারদিকে পাতার ঝরার শব্দ ছাড়া আর কিছুই নেই।নিরব সেই বন।বনের মাঝখানে বিশাল এক তেতুলগাছ।সেই তেতুল গাছের ডালে থাকে একটা বাদামি রঙের ছোট্ট একটা চড়ুই পাখি।ছোট্ট এত্তোতুকুন তার বাসা।বাসায় তার অনেক ডিম।চড়ুই পাখি মনের আনন্দে সেই ডিম তা দেয়।বনের পরিবেশ সবসময়ই চুপচাপ।কোন চড়ুই নেই, মারামারি নেই।গভীর নীরবতায় ঢেকে থাকে বনভুমি।এক দিন ডিমে তা দেচ্ছে চড়ুই।হাতির ধাক্কায় করেই নড়েচড়ে উঠল থর থর করে।ছোট্ট বাসাটাও দুলতে থাকে।দেখে চড়ুই টা রেগে আগুন।মাথামোটা হাতির কাণ্ড দেখ!চি চি করে চিৎকার করে চড়ুই বলল,
শোন ওহে হাটি,কোন আক্কেলে তুমি এমন কাজ করলে?এমন জোরে ধাক্কা দিলে তো আমার ডিম ফেটে যাবে!তোমার এই পাগলামি একদম সহ্য করব নাক কিন্তু। চড়ুইয়ের কথা শুনে হা হা করে হাসতে লাগল হাতি।
আমি আবার গাছ টা নাড়ালাম কই?আর গাছটা যে নড়েছে এটা বোধয় তুমি ছাড়া আর কেই জানেনও না।
চড়ুই তখন রাগে কাঁপছে।শোন হাতি,তুমি আবার যদি তুমি গাছে ধাক্কা দাও তাহলে আমি তোমাকে দেখে নেব।
হাতিটা প্রানখুলে হাসতে লাগল।
বোকার মতো হেসো না।আবার যদি ধাক্কা দাও তোমার এমন ভাবে বেধে ফেলব যে তুমি নড়তে পারবে না।
আমাকে বাঁধবে?বাহবা!তুমি ভাল বলেছ।ঠিক আছে বেধে ফেল আমাকে।পুঁচকে চড়ুই বাঁধবে হাতিকে।
হাসতে হাসতে হাতি চলে গেল।চড়ুই আবার আপন মনে ডিমে তা দিতে বসল।নিস্তব্ধ গেল বনভূমি।হঠাৎ চড়ুই টার তেষ্টা পেল।ডিম গুলো ছেড়ে ফুড়ুৎ করে গেল পাশের একটু নদিতে।নদীর তিরে ঘাসে-ঢাকা খানিক তা যায়গা আছে।সেখানে টলমল করে পানি।চড়ুই মাঝে মাঝে এখানে আসে পানি খেতে।আজ পানি খেতে এসে দেখে একটা কুমির টান টান হয়ে শুয়ে আছে সেই জলায়।চড়ুই কুমির কে দেখে চমকে উঠল।ওহে কুমির এখানে এসে একটু টলটলে পানি খাই। তাও সহ্য হয়না তোমার।কেমন চিত হয়ে শুয়ে আছ।পানি ঘোলা হয়ে গেছে।অত বড় নদিতে আমি পানি খেতে যাব কী করে?কুমির বলল,এনদী কারও একা নয়।এই যায়গায় তোমার নাম লেখা আছে কী?চড়ুই বলল,কথা বাড়িও না কুমির।ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।আবার যদি দেখি তুমি এই যায়গায় এসেছ তবে তোমাকে এমন করে বাধব যে নড়াচড়া করার ক্ষমতা থাকবে না তোমার।চড়ুইয়ের কথা শুনে কুমির আরও জোরে হেসে উঠল।বলে কী পুঁচকে চড়ুই?
ঠিক আছে পারলে বেধ আমায়।তুমি আমার কেমন করে বাঁধবে আমি দেখতে চাই।
বলেই মুমির হাই তুলে জলাভূমিতে আবার শুয়ে পড়ল।সে এখন রোদ পোহাবে।চড়ুই বেচারা কী আর করে?ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল নদীর আরেক ধারে।সেখানে গিয়ে দেখে একটা গর্তে কাদা মাখা ঘোলা পানি।তাই চুকচুক করে পান করল চড়ুইটা।টার পর ফিরে গেল আবার বাসায়।ডিমে তা দিতে বসল।পরদিন খুব সকালে হাতিটি গাছতলায় এসে হাজির।শুঁড়টা দুএকবার নড়াচড়া করে বিকট জোরে হাঁক দিল সে।কই হে চড়ুই ছানা,তুমি কোথায়?তারপর শুঁড় দিয়ে ধক্কা মারল গাছে।গাছটা নড়ে চড়ে উঠল। আর তাতেই দুলে উঠল গাছটা।চড়ুই রাগে তিরতির করে কাঁপতে লাগল-দাঁড়াও তোমাকে মজা দেখাচ্ছি।আরে আমি তো মজা দেখার জন্য এখানে এসেছি।আমিও তো সেতাই চাই।একটা পিচ্চি চড়ুই হাতির থেকে শক্তিশালী কে,কবে,কোথায় শুনেছে।একটু সবুর কর।টের পাবে টার পর।এই বলে চড়ুই টা ফরফর করে উড়ে গেল পাশের একটা গাছে।সেই গাছে আকটা শক্ত লম্বা লতা গজিয়ে উঠেছিল।সেই লতার একটা প্রান্ত মুখে ধরে নিজের গাছে ফিরে এল।টার পর লতাটা মুখে নিয়ে হাতির গলায় পাচিয়ে দিল।কাণ্ড দেখে হাতি হা হা করে হাসতে লাগল।চড়ুই বলল,দাঁড়াও আমি নদী থেকে একপলকের জন্য একটু পানি খেয়ে আসছি।তুমি চুপচাপ দারিয়ে থাক।আমি এসে তোমাকে টানতে বলব।তখন দেখব তোমার গায়ে কত শক্তি।চড়ুই উড়ে গেল সেই জলের ধারে।যে গাছ থেকে লতার এক প্রান্ত এনে ছিল সেই গাছে গিয়ে লতার আরেক প্রান্ত মুখে দিয়ে নদীর ধারে চলে গেল পাখিটা।গিয়ে দেখ,আগের দিনের মতোই কুমিরটা সেখানে শুয়ে পানি ঘোলা করছে।কী হে চড়ুই,যাও যাও শিগগির কেটে পড় এখান থেকে।তুমি আমার কী করবে সে আমার জানা আছে।চড়ুই তখন সেই লতার আরাক টা দিক দিয়ে কুমিরের শরীর টা শক্ত করে বেঁধে দিল।টার পর বলল,একটু থাম।আমি দড়ি টাকে ভাল করে ধরি।আমি বললে তুমি টান শুরু করবে।একই লতার দুদিকে দুজনকে বাধা হলো।এক দিকে হাতি আর এক দিকে কুমির।চড়ুই উড়ে উড়ে লতাটার মাঝখানে ঘুরতে লাগল।আর চিৎকার করে বলতে লাগল,এবারে টান মার।হাতি আর কুমির তখন হাসতে হাসতে টান শুরু করল।কিন্তু তারা কেউ কাউকে দেখতে পেল না।কুমিরটা তখন পানিতে লাবার জন্য টানাটানি করতে লাগল পিছন থেকে।আর হাতিটা গাছতলা থেকে বনের দিকে যাবার জন্য টানতে লাগল সামনের দিক থেকে।
লিন্তু দুজনের গায়ে বেশ সক্তি।কেউ কাউ কে নড়াতে পারছে না।চড়ুই তখন আরও জোরে টানতে বলল,আরে জোরে টান,এই নাকি তোমাদের গায়ে সক্তি।গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে তো টানাটানি করছি।কিন্তু নড়াতে পারছি না।ব্যাপার কি?তোমার গায়ে যে এত শক্তি তা আগে জানতাম না ভাই।
কুমির বলল,আর তো পারি না।তোমার গায়ে এত শক্তি এল কোথা থেকে?তুমি কি জাদু যানো নাকি হে চড়ুই পাখি?
লতা টানাটানি করতে গিয়ে কুমিরের পা পিছলে যাচ্ছিল বারবার। হাতিও দুএক বার পড়ে পড়ে অবস্থা।সারা সকাল থেকে কুমির আর হাতি দুজন দুদিকে থেকে টানতে লাগল।কিন্তু কেউ কাউকে নড়াতে পারল না।কারণ তাদের দুজনের শক্তি প্রায় একই রকম।অথচ দুজনে মনে করছিল,চড়ুই বুঝি তাদের অন্য দিক থেকে টানছে।হাতি আর কুমির প্রানান্ত লতা টানাটানি দেখে চড়ুই পাখি টা হাসতে লাগল।কী হে একটা পাতলা লতার বাঁধন টেনে ছিঁড়তে পারছ না।আবার তোমরা কিনা শক্তির বড়াই কর।টান দাও,জোরসে টান দাও।কিন্তু হাতি আর কুমির প্রায় ঝিমিয়ে পড়েছে।মুখে ওদের আর কোথা সরছে না।কুমির তখন হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,চড়ুই আমি কখনো ভাবি নি তুমি আমার চেয়ে শক্তি শালি।কথা দিলাম আর কখনো পানি ঘোলা করব না।দয়া করে বাঁধন খুলে দাও না।হাতি বেচারা হাঁপাতে হাঁপাতে মাথা নিচু করে চড়ুই-এর কাছে ক্ষ্মা চাইল।চড়ুই হাতি ও কুমির কে ক্ষমা করে মহত্বের পরিচয় দিল।ছাড়া পেয়ে কুমির ডুবদিয়ে পানির নিচে চলে গেল আর হাতি বনের মধ্যে চলে গেল।
কিছুদিন পর চড়ুইয়ের ডিম ফুটে চারটা ফুত ফুটফুটে বাচ্চা বেরিয়ে এলো।চড়ুই নিশ্চিত মনে তার বাসায় বাস করতে থাকল।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।