হাজার বছরের গল্প—সোনালী মিত্র

সবে সন্ধ্যা নেমেছে, চারিদিক ঝিঁঝিঁ ডাকা স্তূপাকার অন্ধকার।ধূপ আর ধুনোর মোহময় শুদ্ধতায় পরিবেশে স্থিতিশীল একটা কেন্দ্রীভূত সুর ভাসছে। মন্দিরের প্রদীপ ঘণ্টার আওয়াজে কেঁপে কেঁপে উঠে এক ছান্দিক মূর্ছনায় ভরিয়ে তুলছে গর্ভগৃহ, দ্বিজ সুমন্তক নিশীথকালীন শেষ আরতি সমাপন করে ঈশ্বরের ধ্যানে লীন হতে চান কিছুক্ষণ, কিন্তু আজ তার মনে বড়ই চঞ্চল, মন জুড়ে বড়ই সংশয়, আগামী ফাল্গুনী পূর্ণিমায় কি ঘটতে চলেছে! ভীষণ কিছু কি!যা রাজা দেব পালের বংশগৌরব অক্ষুণ্ণ রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাকে রক্ষা করতে পারবে কিনা সেই চিন্তা কুড়েকুড়ে খাচ্ছে তাকে। ধর্মের ঔজ্জ্বল্য ক্রমেই ম্লান হয়ে আসাটা জাতীয় ধ্বজার প্রতি হানিকারক হতে পারে, সেটা ব্রাহ্মণ কুমারের অজনা নয়।তাই এক আগ্রাসী সন্ত্রাসের পদচ্ছায়ার পদধ্বনির সূচনায় বুক কেঁপে ওঠে! ক্রমেই প্রসার লাভ করেছে একদল অদ্ভুত মানুষের মিছিল,এরা কৌলীন্য মানে না সমাজ মানে না,নারী পুরুষের সম্পর্কবদ্ধসূচী মানে না…।দূরের রাজপ্রসাদে তখন সাঁজবাতির আলোকে স্পষ্ট উজ্জ্বল… তবুও যেন কেমন এক আলোকহীনতায় ভুগছে, যেন কোন অপাপবিদ্ধ রমণী তার অবগুণ্ঠনে ঢেকে রেখেছে উন্নতযৌবন। পাল বংশের আগে পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের যে গৌরব অক্ষুণ্ণ ছিল, ধীরে ধীরে ধর্মের করাকরি নিয়মবদ্ধতার কারনেই কি তাহলে অন্ত্যজ শ্রেণীকে সহজিয়া সম্প্রদায় লেলিয়ে দিচ্ছে ধর্ম আর রাজার বিরুদ্ধে? দেশে গুপ্তপন্থার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে তারা কী রাজার বিরুদ্ধে কি অস্ত্র ধরবে? এইসব রাষ্ট্রদ্রোহীরাই আজকাল আচার্য দ্বিজ সুমন্তকের কপালে জিজ্ঞাসা চিহ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুই
দূরে টিলা থেকে রাত্রির যাবতীয় বুকচিরে ভেসে আসা সারেং প্রতিধ্বনি যা সামনের পাহাড়ে বাধা পেয়ে ফিরে ফিরে যাচ্ছে সুরের মায়ালোকের স্বর্গদ্বারে। নীচ থেকে দেখা যাচ্ছে টিলার উপরে একটা ঝুপড়ি, বেড়ার ফাঁক দিয়ে ক্ষীণআলো আর সেই আলোর উৎসস্থল থেকেই আসছে এই মায়াময় সঙ্গীত।একজোড়া নর-নারী সেখানে, পুরুষপ্রধান কাঠের কৌচের উপর উপবেশন, নিকষ কালো রূপে উজ্জ্বল সুগঠিত কামনীয় এই যুবা, তার ঊর্ধ্বাঙ্গের উত্তরীয়র কিছুটা গলা দিয়ে জড়ানো বাকিটা ধুলায় লুণ্ঠিত, নীল ধুতির সাথে মিলে মিশে একাকার। তিনি তন্ময় হয়ে বাজিয়ে চলেছেন পটমঞ্জরী রাগ—
”এবংকার দৃঢ় বাখোড় মোড্ডিউ।
বিবিহ বিআপক বান্ধণ তোড়িউ॥ ধ্রু॥
কাহ্নু বিলসঅ আসবমাতা।
সহজনিলীবন পইসি নিবিতা॥ ধ্রু॥
জিম জিম করিণা করিণিরেঁ রিসঅ।
তিম তিম তথতামঅগল বরিসঅ॥ ধ্রু॥”
নারীটি ততোধিক তন্ময় হয়ে পুরুষের পায়ের কাছে বসে মুদিত নয়নে যেন ধ্যান করছেন প্রিয় দেবতার।তার কলমেকামিনী তন্বী-যৌবনা গজগামিনী রূপের সাথে হলদে রাধাচূড়া যেন আলো করে ফুটে মাতিয়ে রেখেছে গানের বাগান। ঘরের কুপির স্নিগ্ধ আলোতে মোহনীয় হয়ে উঠেছে চারিধার। যেন প্রেমময় মুহূর্তে পৃথিবী থমকে গিয়ে নতজানু এই যুগলের উপাসনায়। ঝুপড়ি বেড়ার পিছন দরজায় মৃদু কম্পন। সাধনায় নিবিষ্ট নারীটি তপ ভঙ্গে বেশ বিচলিত হয়ে ওঠে। বাদ্য থামিয়ে পুরুষ টিও বেশ উৎকণ্ঠা বোধ করেছেন বোঝা যায়।এই পুরুষের পরিচয় কাহ্ন পা। নারী শবরী দরজার কাছে কান রাখতেই ফিসফিসয়ে শব্দ এল-
”শবরী আমি ভুসুকু পা,দরজা খোল শিয়রে সংকট। ” নারী মুহূর্তকাল বিলম্ব না করে দরজা খুলে দিল,যিনি ঘরে প্রবেশ করলেন তিনি সুপুরুষ, ফর্সা গায়ের রঙ, চওড়া কপাল, খানিক চ্যাপটা নাক, পাতলা ঠোঁট এবং হালকা চুলে খানিক মেদবহুল মানুষটি যে রাজ সন্তান ছিলেন কোনকালে বুঝতে দ্বিধা হয় না। কাহ্ন পা’দের প্রাণপ্রিয় বন্ধু ভুসুকু পা’দ। অস্থির সময়ে নিজেদের আদর্শ বাঁচিয়ে রাখতে রাখতে কখন যে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী এরা নিজেরাও জানে না। দোর্দণ্ডপ্রতাপ রাজার ধর্ম আর স্বাধীনতা চিন্তাকামি মনুষ্যকুলের মধ্যে শ্রেণীশক্র সৃষ্টি হয়ে এসেছে বারংবার, এই শতক ও এর ব্যতিক্রমী নয়। ভুসুক পাদ খানিক হাঁপাতে থাকে, কাহ্ন পা’ র মুখের দিকে বিস্ময়ে নিরীক্ষণ করে বলতে থাকেন, – “বিরূপ পা ধরা পড়েছেন,তার মুখ খোলানোর যথেষ্ট চেষ্টা চলছে।খবর আছে সেপাই হানাদার আজ রাতে টিলায় আক্রমণ করতে পারে।এখন আর এখানে থাকা নিরাপদ নয়।আমাদের নদী অতিক্রম করতে হবে মিত্র,আর কালবিলম্ব নয়।” কাহ্ন পা মুহূর্তকাল ভেবে নিয়ে নিজ কর্তব্য ঠিক করে ফেললেন, এগিয়ে গেলেন তার চিরাচরিত লাল ঝুলির দিকে, এতেই আছে অমূল্য কিছু সম্পদ।তুণট কাগজে লেখা দুর্বোধ্য ভাষায় কিছু পদ,যা সাংকেতিক সান্ধ্যভাষা, একে রক্ষা করতেই হবে, যদিও কোন ভুল হাতে পড়ে রাজ হাতে গেলেও তাদের আদর্শ অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে এই আলো আঁধারী ভাষায় লেখা পুঁথি, এই ভাষায় পাঠোদ্ধার তাদের কম্ম নয়। ঝোলা বুকে চেপে দরজার দিকে পা বাড়ায় কাহ্ন পা ভুসুকু পা এর সাথে।কামনায় উন্মুখ নারীটি প্রেমস্পাদের আঁধারে মিলিয়ে যাওয়া বিন্দুতে চোখ রেখে গড়িয়ে পড়ে কিছু বিন্দু বিন্দু মুক্তো নরম গাল বেয়ে।
তিন
রাজ ভাঁড়ার প্রায় শূন্য হয়ে গেছে, সে জৌলুস ও নেই যা পিতা,পিতামহ বংশপরম্পরা বহন করে নিয়ে এসেছিল এতদিন গৌরবে ভাঁটা পড়ে গেছে, পৃষ্ঠপোষক তাবেদারি অমিতব্যয় ও নারীসঙ্গ করে যে রাজ্যকে পতনের কিনারায় খাড়া করছে তা রাজার অজানা নয়। যদিও অভিজাতদের প্রতিটি ঘরে ধন সম্পদে ভরপুর, দোদন্ডপ্রতাপ ব্রাহ্মণরাই একচ্ছত্র সমস্ত ক্ষমতা অধিকার করে রেখেছে, আর রাজা নিজেও বুঝছেন তিনি হয়ে উঠেছেন এদের হাতের ক্রীড়নক মাত্র। দু দিন আগে এক রাজদ্রোহী ধরা পড়েছে, তার কাছে বেশ কিছু পুঁথি মিলেছে, এরাই নিচু শ্রেণীকে ক্ষেপিয়ে তুলছে শক্তি যোগাচ্ছে তা অজানা নয় রাজার, কিন্তু সেই খর্বকায় মানুষটির মুখ দিয়ে একটিও টু শব্দ বের করাতে পারেনি কেউ। এরা যে জেহাদের আগুন জ্বালাবে আর তাতে যে পুড়ে ছারখার হবে সব যেন সব সেই অপেক্ষা করে আছে সেই ভবিষ্যৎ!
দ্বিজ সুমন্তকের কন্যা বসুমতী খাবার সাজিয়ে অপেক্ষা করছে পিতার ফেরার…সৈনিকদল ছুটে এসে খবর দেয় সাবধানে থাকতে,রাজ্য ঢুকেছে কিছু রাষ্ট্রদ্রোহী। ভয়ে কেঁপে ওঠে বসুমতী, সৈনিকরা বলছে তাদের ধাওয়া খেয়ে তারা নাকি এইদিকেই এগিয়ে এসেছে।এদিকে পিতা- পুত্রীর সংসার বসুমতী ভিন্ন অন্য কেউ নেই ভবনে। সৈনিকরা কাছেপিঠে থাকার অভয় দিয়ে চলে গেলে বসুমতী দরজা ভাল করে বন্ধ করে দেয়।কিন্তু ও কি!ও কি ওখানের জানালার পাশের পর্দা কাঁপছে কেন! সমস্ত শক্তি জড়ো করে চিৎকার করতে যাবে সে সেই মুহূর্তে কেউ যেন উল্কার বেগে তার মুখ চেপে ধরে। পিছনে যিনি হাত রেখেছেন মুখে তিনি শক্তিশালী যুবাপুরুষ সন্দেহ নেই।ফিসফিস করে তিনি কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলছেন-
“ভয় পাবেন না দেবী,আমার দ্বারা আপনার হানি হবার কোন সম্ভাবনা নেই।শান্ত হন আপনি,দয়া করা শান্ত হন।” —
বসুমতী খানিক কাবু হয়ে এলে মুখের থেকে হাত সরিয়ে দিতেই ঘুরে দাঁড়ায় বাসুমতি, -”কি চান আ…” কথা টা শেষ হয় না মুখের। কি রূপবান পুরুষ! মুখে যেন এক অভ্রভেদী প্রশান্তি। যেন সমস্ত বিশ্বাস অর্পণ করা যায় এই মানুষের পায়ে।বসুর দ্বিধাভাব দেখে পুরুষ নিজেই পরিচয় দেন,-
“আমি কাহ্ন পা দেবী, বড় মুস্কিলে পড়েই আপনার দারস্থ হয়েছি।আমাদের আদর্শে কোন বহিরাগত কে আপন পরিচয় দেওয়া নিষেধ, কিন্তু আপনার দু’ই নিটোল চোখের সারল্য আমায় মুগ্ধ করেছে, মনে হয়েছে আপনার দ্বারা ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই। আমার এক সতীর্থ তিনিও আছেন কিন্তু আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়েছে,তাকে খুঁজে পাইনি।” এক নিঃশ্বাসে বলে যায়
-”হে যুবা পুরুষ আমিও আপনাতে মুগ্ধ,কিন্তু সৈন্যদল আপনাদের খুঁজছেন কেন!”
-”আমার এক বন্ধু বিরূপ পা তিনি বন্দী রাজকারাগারে।দেবী আমাদের আসার উদ্দেশ্য তারই মুক্তি সাধন করা, রাজা ভাবছেন আমরা ক্ষেপিয়ে তুলছি জনগণকে, তাই আমাদের ধরবার নির্দেশ দিয়েছেন”
-”আপনি জানেন এখন কার আলয়ে আপনি আছেন!”
-”আমি একজন শরণার্থী, আমি জানি এক দেবীর আশ্রয়ে আছি যিনি আমায় রক্ষা করবেন।”
-মৃদু হেসে বসুমতী জানলা দিয়ে একবার বাইরে ভাল করে দেখে নিয়ে জানলা টেনে দিয়ে কাহ্নর দিকে ফিরে বলেন, – “এটা দ্বিজ শ্রেষ্ঠ সুমন্তকের আবাস, যিনি রাজার প্রধান পুরোহিত ও মন্ত্রণাদাতা, আমি তার কন্যা বসুমতী। তার ফেরার মুহূর্ত আসন্ন, এবার বুঝতে পারছেন কতখানি সংকটের মধ্যে আছেন আপনি!”
-”কট কোথায় নেই দেবী? আমি জানি আপনি রক্ষা করবেন আমায়।”
হঠাৎ দরজায় জোরে আঘাত, বসু ও কাহ্ন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, কাহ্ন পর্দার আড়ালে দ্রুত অদৃশ্য হলে বসু আগল খুলে দেয়।
-”দেবী ঠিক আছেন তো! সেই দুষ্কৃতিদের ধরা এখনো সম্ভব হয়নি, সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আজ আপনার পিতা মন্ত্রণায়লয়েই থাকবেন।ভোরের দিকেই ফিরবেন চিন্তা করবেন না, সাবধানে থাকবেন আমরা আপনার গৃহের আশেপাশেই রাতপাহারা দেবো।” সৈনিক বলে যায়
সৈনিকের মুখে পিতার আনাগমনের সংবাদে খানিক স্বস্তি পায় শ্বাস।
-”এবারের মত বেঁচে গেলেন ভদ্র,কাল সূর্য ওঠার পূর্বেই বাটি ছেড়ে যেতে হবে আপনাকে। কোথায় যেতে চান আপনি?”
-”ধন্যবাদ দেবী,আমি উৎকলের দিকে যাবার ইচ্ছে রাখি। একখানি নৌকার ব্যবস্থা হলে বড় উপকার হয়।”
-”সে দেখা যাবে, চেষ্টা করব সাধু। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ অভুক্ত। আসন গ্রহণ করুন অনুগ্রহ করে।”
অনেক দিন বাদে ঘরের রন্ধন অন্ন খেয়ে পরিতুষ্ট মন। মেয়েটিও চমৎকার। কিন্তু কালবিলম্ব করা যাবে না সূর্য উঠতে বাকি নেই কিন্তু ভুসুক পা কোথায় তার সন্ধান মিলবে কি করে বড়ই ভাবনার।
“এবার যেতে হবে হবে দেবী, পূর্বের আকাশে একটু বাদেই রঙ উঠবে।” – পশ্চিম নদীর ঘাটে কুপির আলো দেখিয়ে নিয়ে এলেন বসুমতী… এখনো আঁধার সরেনি,কৃষ্ণপক্ষের বিরুদ্ধ মেঘ ভর করে আছে আকাশ। কুপির আলোয় নদীর তীরে জলের সাথে নৌকো দোলার শব্দ শোনা যাচ্ছে…
চার
“দুলি দুহি পিটা ধরণ ন জাই/রুখের তেন্তুলি কুম্ভীরে খা অ”
অর্থাৎ মাদী কাছিম দোহন দুধ পাত্রে রাখা যাচ্ছে না। গাছের তেঁতুল কুমিরে খাচ্ছে। কুক্কুরী পাদের এই প্রবাদ টিলার ঘরে মুখে মুখে ফেরে। নগরের ভিতরে টিলার বউ মেয়েরা যায় বাঁশের ঝুড়ি, শাড়ি, চুড়ি, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বেচতে। আজ রাজার বাড়ি কী এক অনুষ্ঠান, বউরা ভিড় করে কাপড় নিচ্ছে তাঁতিনী বউ এর থেকে, কলকল আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ছে হাস্যমুখর রমণীকুল ছেড়ে দূরের বাতাসে…শবরীর মন মোচড় দিয়ে উঠল। তিনসপ্তাহ ব্যাপী কাহ্ন পা এর কোন খোঁজ নেই। মাথায় পসরা সাজিয়ে বেড়িয়েছে সে রাস্তায় যদি খবর কিছু মেলে। শাশুড়ি বড়ই চোখে চোখে রাখেন। এই পরকীয়ার কথা লোকমুখে শুনে আরোই ক্রুদ্ধ তিনি। সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই আজ শবরী রাস্তায় নেমেছে। সেদিনের মাথায় সাজানো গুঞ্জরী ফুল, গলায় রাখা মালা বাসি হয়ে গিয়েছিল প্রিয়ের বিষন্নতায়। সেদিন কাহ্ন পা চলে যাবার পরে সিপাহিরা টহল দিয়ে ছিল। মধ্যরাত্রে কপাটে আঘাত, চোখের জল মুছে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল শবরীর। মিশকালো অন্ধকারে মধ্যেও চকচক করেছিল যার দু’টি চোখ তিনি আর কেউ নন,পুরোহিত শ্রেষ্ঠ সুমন্তক। তিনি মাঝে মাঝেই লোকচক্ষুর আড়ালে আসেন প্রান্তিক টিলার ঝুপড়ি ঘরে…..আসলে শবরীর শ্যামল কালো তন্বী রূপ, হরিণী চোখ বার বার টেনে আনে তাকে,উপেক্ষা করতে পারে না এ মেয়ের বুকের ওঠাপড়া,উদ্ধত যৌবন। তার চেয়েও বেশি এক অদৃশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্যপঞ্চাশের বুকের সাথে বছর ২৪ এর এক যুবকের। সুমন্তক ভালই জানেন কাহ্ন পা শবরীর ঘরে রাত্রি যাপন করেন। যদি শবরীর সুধা পানের অছিলায় এদের আদর্শের গূঢ় খবর বের করা যায় রক্ষা পেয়ে যাবে সংস্কার। কিন্তু শবরী বড়ই বুদ্ধিমতি বুক ফাটলেই মুখ ফোটে না।
পাঁচ
নদীতে ভেসে চলছে নৌকো,জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দে একাকী ভেসে চলেছে যুবক, ভুসুকু পাদের দেখা না পেয়ে মন বিষণ্ণ, মন হাজার প্রশ্নের ভিড়ে জর্জরিত, তবে কি ধরা পড়ে গেলেন সতীর্থ! সবাই যদি এই ভাবে হাত ছেড়ে দেয় তবে তাদের যে পরিবর্তনের আশা নিয়ে পথ চলা তার কি হবে? তাদের পূর্বতন গুরু লুই পাদের আদর্শ কে মাথায় করে নিয়েই পথ চলা। তার জীবন কাহিনী শক্তি যোগায় পথ চলতে। লুই শব্দের অর্থ যে ব্যক্তি মাছের অন্ত্র ভক্ষণ করেন। আবার শব্দ টির প্রাচীন বাংলা শব্দ লোহিত। চুরাশিজন মহাসিদ্ধের একজন হলেন গুরু লুই। তিনি উড্ডিয়ানের রাজা ললিত চন্দ্রের পুত্র। তিনি রাজ্য শাসন ভারের দায়িত্ব ছেড়ে বোধিলাভের উদ্দেশ্য বুদ্ধ গয়া আসেন। এরপর সালিপুর বা মগধ এ এক ডাকিনী তাকে বোধি লাভের জন্য রাজসিক অভিমান ভুলে সাধারণ হবার পরামর্শ দিলে তিনি দীর্ঘ বারো বছর শুধু মাত্র মাছের অন্ত্র খেয়েই জীবন ধারণ করেন। গণচক্র অনুষ্ঠানে চব্বিশ জন ডাকিনীর সাথে মৃতদেহ ভক্ষণ করেন। এই সময় মগধের রাজা ইন্দ্রপাল তার শিষ্য হন। বাংলায় চলে এসে গঙ্গার তীরে মাছের অন্ত্রের স্তূপের পাশে বসে বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের সর্বচ্চ সিদ্ধি লাভ করেন। লুই পা এর গুরু ছিলেন শরহ পা। কত কিছু মনে পড়ছে তার, পুরনো কথা মনের মধ্যে ভেসে উঠছে, এই সব ভাবতে ভাবতেই কাহ্ন পা এর মনে পড়ে যায় শবরীর কথা, শরহ পা এর একটা গীতি আপন মনে গুন গুন করে গেয়ে ওঠেন।
“উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী।
মোরঙ্গি পীচ্ছ পরহিণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।.
উমত সবরো পাগল শবরো মা কর গুলী গুহডা তোহৌরি।
ণিঅ ঘরণী ণামে সহজ সুন্দারী। ”
ভোরের আলো ফুটতে আর দেরি নেই। পূবের আকাশ লাল।সামনের ফাল্গুন পূর্ণিমায় যাবতীয় রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মিলিত হবে সকল শবর শবরী এমনটাই নির্দেশ আছে।এর অন্যথা হবে না। বিকেলের মধ্যে উড়িষ্যার ঘাটে নাও পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সকালের আলোয় কাহ্ন দেখতে দেখতে দেখতে চলে বউ- ঝি’রা জলে নেমে অজলা ভরে জল তুলে ছিটিয়ে দিচ্ছে এক সখী অন্য সখীর মুখে আর হাস্যকেলিতে গলে পড়ছে এ ওর গায়ে। তামার বাসন তেঁতুল দিয়ে মেজে ঝকঝকে করছে এক বুড়ি ঝি।কাপড় কাচায় মন দিতে পারছে না সন্তানের কান্নায় ব্যস্ত হয়ে উঠছে যুবতী মা। কোলের ছেলেকে টেনে মুখে স্তনে ভরে দিয়ে পান করাচ্ছেন অমৃত সুধা। গবাদি পশু নিয়ে পাচন হাতের রাখাল বিচুলি হাতে গা ধুয়ে যাচ্ছে গাভীর একমনে, মিষ্টি সুন্দর হাওয়া পাখিদের জেগে ওঠার কলতানে ভরে যাচ্ছে নদীর জলের স্রোত, আর এই স্রোতের মতই বোধহয় সময় বয়ে যায়। ওই দূরে সাদা কাপড়ে কে যেন ছুটছে নদীর পাড় ধরে, গায়ের বসন খানি মাথার উপরে গোলাকারে নাড়িয়ে সে কি সাহায্য চায়! চোখে স্বচ্ছ নয় তার অবয়ব, দূরবর্তী হওয়ায়। নাও পাড়ে ভেড়ানোও সমুচিন নয় এতে বিপদের আশঙ্কা প্রবল, তবুও দেখাই যাক ভেবে পাড়ের ধার ঘেঁষে বৈঠা বইতে থাকে, আরে এ তো ভুসুকু পাদ, উনি এত দূরে এলেই ই বা কী ভাবে! তবে ঘন মেঘ মনের কোণ থেকে সরে গিয়ে ঝলমলে রোদ জেগে উঠল মনে। প্রাণের বন্ধু ফিরে এলেন… ভুসুকু পা কে নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে হাসাহাসি হয়। তাকে অত্যন্ত আলস বলে বিদ্রূপ করে সবাই। ভু কথার অর্থ হল ভুক্তি (ভোজন), সু অর্থ সুপ্ত (শয়ন/নিদ্রা), কু অর্থ কুটির !মনে পড়ে যাওয়ায় কাহ্নু পায়ের মুখে এক চিলতে হাসি খেলে গেল।
ছয়
খোলা সমুদ্রপাড়ে চারিধার খোলা দোতলার বারান্দায় হাতির দাঁতের কাজ করা কোচে হেলান দিয়ে দেবত্তম সোমলতা গুন গুন করে এক চেনা সুরের কলি ভাঁজছেন।তার রূপের ছটায় পড়ন্ত সূর্য ও লাজুক হেসে সমর্পণ করতে চাইছে যেন নিজের যৌবন। সাদা বসন,ততোধিক সাদা গোপালের মত প্রস্ফুটিত এই কন্যা। আজ তার মন খুব ভাল…
স্বামী রাজা দেবপালের প্রাণপ্রিয় বন্ধু বিশ্বদত্তর স্ত্রী অভিষিক্তা তার ও প্রাণের সই। বেশকিছুদিন ধরে মন টিকছিল না রাজ প্রাসাদে। হাওয়া বদলে উড়িষ্যা সীমান্তে সমুদ্রসৈকতের এই বাটিকায় তাই আগমন। বেশ ভালই কাটছে দিন। এই বাটিতে কর্মরত দুই মিত্র যুবার উপস্থিতি যেন থাকার আগ্রহ অনেক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে।গতকালের সন্ধ্যা-ভ্রমণে দেবদত্তা প্রমাণ পেয়েছে ওই কৃষ্ণরূপা ঝঁকড়া চুলের ব্যক্তিটি অনেক জ্ঞানী গুণী। তার প্রতিটি প্রশ্নের এত সুন্দর মার্জিত উত্তর দিয়েছেন যা প্রশংসাযোগ্য ই বটে। দেবদত্তা সহজে কারো সুনাম করেন না কিন্তু এই সপ্তাহ খানিক এই ব্যক্তির সাথে মিশে বুঝতে পেরেছে যা সে রাজপ্রাসাদে খুঁজে বেড়াত তাই আছে এই ব্যক্তির মধ্যে। রাজার এগারোজন মহিষীর মধ্যে দেবদত্তা সব চেয়ে ছোট এবং পাটরাণি রাজার চোখের মণি। আদর আহ্বান কোন কিছুর অভাব না থাকলেও প্রচণ্ড নিজস্ব অনীহায় ভুগতে ভুগতে মৃত্যু দুরায়ে পৌঁছে যেতে শুরু করেছিল। তারপর ই এই হাওয়া বদল। রাজার কাছে সংবাদ যায়, রাণী দেবদত্তা এক সপ্তাহে অনেক ভাল হয়ে উঠেছেন। তিনি আরো কিছুকাল যাপন করতে চান সমুদ্রপরিমন্ডলে।
দেবদত্তা নিজের অনুভবে নিজেই অবাক…সে কি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে সেই যুবকের প্রতি? সেই যুবক আর কেউ না স্বয়ং কাহ্ন পা! মনে এক প্রবল দ্বন্দ্ব। কিন্তু কি করে জানাবেন তাকে! কাহ্ন পা এর মুখে সংগীত শুনে তন্ময় হয়ে যাওয়া কি পূর্বরাগের সূত্রপাত? সখী অভিষিক্তা সই এর মন আবিষ্কার করে তাকে শুধুরে যেতে পরামর্শ দেন। না হলে রাজার কানে উঠলে তার প্রাণের সাথে সাথে এই নিরীহ প্রাণটির সমূহ ক্ষতি হবে। আর এদের সহজিয়া পথ, যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সমাজ পরকীয়া কে মান্যতা দেবে না দেবদত্তার মত বুদ্ধিমতী শাস্ত্র নিপুণা, শস্ত্র চালনায় পারদর্শিনী নারীর অজানা নয়। তবুও এই মরণ পথ যেন তাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে…
সাত
কুপির আলো হাওয়ায় কাঁপে কেঁপে উঠছে,সমুদ্রের গর্জন যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে যুবা পুরুষের বলিষ্ঠ বুক।পালকে কালি ঘষে তুণট কাজগে কিছু পদ লিখেছেন তিনি, আর তাতেই সুর দিচ্ছেন আপন মনে।
“আলো ডোম্বি তোএ সম করিব মা সাঙ্গ।
নিঘিন কাহ্ন কাপালি জোই লাংগ।।
এক সো পদুমা চৌষঠঠী পাখুড়ী।
তহিঁ চড়ি নাচঅ ডোম্বী বাপুড়ী।।”
আজ খুব টিলার কথা মনে পড়ছে।আগামী কাল পূর্ণিমা। আজ মধ্যরাত্রেই টিলার উদ্দেশ্য রওনা হতে হবে। সে দিন যদি বিশ্বদত্তের বাড়ি আশ্রয় না পেত সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে যেত তাহলে কি হত ভেবে শিউড়ে ওঠে। এইখানে এসে জীবন চিনতে শিখল রাণী সোমলতা দেবদত্তার চোখ দিয়ে। কী তার রূপ! পুরুষ যৌবন ঝলসে যায়। কিন্তু দিন দিন যেন উনি বেশিই অনুরক্ত হয়ে পড়ছেন।এক অশুভ দিক চিন্তা করে কেঁপে উঠছে।আজ রাত্রেই চলে যাওয়াই ঠিক হবে তার…
বেশ কিছু সতীর্থ সহজিয়া রা তিব্বতের গুফায় আত্ম গোপন করে নিজে দের ভূমিকা পলন করে যাচ্ছেন। আদর্শ কে রূপ দিতেই হবে .বদ্ধ পরিকর তারা।
*
শবর শবরী রা আজ সেজেছে সুন্দর করে, পূর্ণিমার চাঁদকে তারা সাক্ষী রেখে বছরে এই একটি বার যে যার পছন্দের মনের মানুষ বেছে নিতে পারে। আর খোলা মাঠে চাঁদের আলোয় শয্যা পেতে ভালবাসায় মিলিত হতে পারে তার সাথে।আজ টিলার ঘরে প্রিয়তমের মনের মত সেজেছে শবরী।লোক মারফৎ খবর এসেছে সে আজ রাত্রেই আসছেন। কল্পনায় প্রিয়তমের ছোঁয়া কে অনুভব করে শিহরণ জাগছে শরীরে।
এই কয় দিন রোজ রাজার সিপাইরা দেখে গেছে।আজ ও আসবে তারা।আজ রক্তারক্তি ঘটবে তারা জানে।এটা ভেবে বিষদ ঘনিয়ে আসে মননে।
পূর্ণ রূপে চাঁদ হাসছে আকাশে, সেও তিথি আগত। সেই পুরুষ এসেছে তার বুকে, কাহ্ন পা শবরী বুকে মুখ রেখে সুখে অতিবাহিত করছে মুহূর্ত। এই মিলনে ধরিত্রীও যেন মেতে উঠেছে সুখে…
কিন্তু ও কী, ওকি কিসের চিৎকার শোনা যায়!
আক্রমণ করেছে টিলার পাদদেশে রাজার সৈন্য। টাংগি বল্লম নিয়ে যে যার মত লড়ে যাচ্ছে।কাহ্ন পা পালিয়ে যাবে না,সে কাপুরুষ নয়।ভুসুক পা হাত চেপে ধরে তার।বন্ধু লড়াই আমরা করব,ইতিহাসে আমাদের যুদ্ধ বেঁচে থাকবে। কিন্তু আমাদের আদর্শ কে বাঁচিয়ে রাখতে হবে তোমায়। তুমি এই স্থান ত্যাগ কর এখুনি। এ আমার অনুরোধ। ইতিহাসের জন্য এ তোমায় করতেই হবে।
-কিন্তু বন্ধু ইতিহাস আমায় কাপুরুষ বলবে।আমি লড়াই করে মরতে পারি কাপুরুষের মত পালিয়ে যেতে পারি না।
-না ইতিহাস তোমায় মনে রাখবে। আর তোমার এখন অন্যখানে সব চেয়ে বেশি দরকার। রানী দেবদত্তা আপন হাতের শিরা চ্ছেদন করেছেন। তুমি শীঘ্র তার কাছে যাও। তুমি না গেলে তিনি বাঁচবেন না।
*
ঘরে মাত্র একখানি প্রদীপ প্রজ্বলিত।পালঙ্কে আচ্ছন্ন দেবী দেবদত্তা। মাথার কাছে বসে আছেন অভিষিক্তা এবং পুরোহিত কন্যা বসুমতী। জ্ঞান ফিরলেই দেবদত্তা, কাহ্ন পা কে স্মরণ করে আবার আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন। দেবদত্তার এইরূপ অবস্থা বসুমতী ভালই অনুধাবন করতে পারছেন।কারণ তিনি নিজেও জ্বলছেন সদাই প্রেমের বহ্নিতে।কিন্তু নিজের মনের প্রতি তার নিয়ন্ত্রণ অনেক।তাই লোকচক্ষু, সমাজচক্ষু সর্বোপরি নিজের চোখ কে বার বার ধোঁকা দিয়ে চলেছেন। উসকোখুসকো চুল পরনের বস্ত্র খানি ময়লা,ধূমকেতুর মত উদয় হয় কাহ্ন পা। তার অবস্থা দেখে বসুমতী চমকে ওঠে। এই কয় দিনে নিজের একি পরিণতি বানিয়েছেন ভদ্রশ্রেষ্ঠ!
তিন রাত তিন দিন কাহ্ন পা এক ভাবে দেবদত্তার সেবা করে প্রাণ ফিরিয়ে আনেন। ভরা সন্ধ্যায় আজ মেঘ জমেছে আকাশে বর্ষণ নামতে দেরি নেই। পালঙ্কে কাহ্ন পা এর বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছেন দেবত্তমা। বুককেশরে বিলি কাটতে কাটতে যেন হরিণী তার কস্তূরীয় নাভির যাবতীয় গন্ধ উপুড় করে ঢেলে দিতে চান প্রিয়তমের ঠোঁটে।
-দেবী আজ আমার যাবার বেলা।আপনি আর কখনই এমন পদক্ষেপ নেবেন না শপথ করুন। আমাদের পথ ভিন্ন, আপনি শিক্ষিতা আপনি জানবেন,অধিক বোঝানোর প্রয়োজন নেই জানি।
– আমি মনে প্রাণ আপনাকের স্বামী স্বীকৃতি দিয়েছে কুমার। সব জানি, সব মানি, মন যে বসে নয় প্রভু, তাকে কি ভাবে বাঁধি প্রিয়? বেশ যাবার আগে আমায় এমন কিছু দিয়ে যান যা নিয়ে অবশেষ জীবন যাপন করতে পারি।
আরো জোরে কাহ্ন পা এর বুক চেপে ধরল দেবদত্তা। কাহ্ন পা তার মাথায় হাত রেখে আসস্থ করলেন তবে তাই হোক। বাইরে বিদ্যুৎ চমকিয়ে বৃষ্টি শুরু হল। পৃথিবী যেন দামল হয়ে উঠেছে আজ ধ্বংসের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যাবে সৃষ্টি। প্রথম পাখির ডাকে ঘুম ভাঙল দেবদত্তার। হাত বাড়িয়ে দেখল কাহ্ন পা পাশে নেই। দরজার দিকে ছুটে গেল। তার উত্তরীয় পড়ে আছে মাটিতে। দোতলার বারান্দায় দৌরে গিয়ে দেখল, নদীতে নোকর দিকে চলেছেন কাহ্ন পা তার শেষ বিন্দু মিলিয়ে যাচ্ছে…
দেবদত্তা উত্তরীয় টা বুকে চেপে ধরল…
কোথায় যেন দূরের থেকে ভেসে আসছে এক সংগীত
“কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীএ পৈঠা কাল।।”
“দেহ গাছের মত, এর পাঁচটি ডাল/ চঞ্চল মনে কাল প্রবেশ করে।”

দুঃখিত!