গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
নয়ন বলে উঠল, “কিন্তু আপনার তো পিস্তল নেই।”
নগেন কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, তাতে কি? আমার দুটাে চোখই জোড়া পিস্তলের সমান। এই গদাইকেই জিজ্ঞেস করো না, কোনওদিন চোখে চোখ রেখে কথা কয়েছে?”
“কিন্তু খুনির কাছে পিস্তল থাকতে পারে তো নগেনবাবু?”
নগেন দারোগা হো হো করে হেসে উঠে বলল, “পারেই তো। আর সেইজন্যই আমি সবার আগে ঢুকতে চাইছি। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের। দারোগাগিরি করে হাসিমুখেই প্রাণ দেব। তোমরা বটতলায় আমার নামে একটা শহিদ বেদি বানিও।”
গদাই নস্কর ফিচিক ফিচিক হাসছিল। চাপা গলায় বলল, “আর লোক হাসিও না বাপু চম্বরপুরের জঙ্গলে আমার সাগরেদ কেলো বাঘের ডাক ডেকেছিল বলে তুমি ভয় খেয়ে কী পাঁই পাঁই করেই না ছুট দিয়েছিলে!”
নগেন বিরক্ত হয়ে বলল, “আচমকা ডেকে ওঠায় ভয় পেয়েছিলুম ঠিকই, কিন্তু বাঘের ভয় থাকলেও আমার ভালুকের ভয় নেই।”
“বাঘের চেয়ে ভালুক, আরও খারাপ। পাল্লায় পড়েনি বলে বলছ। বাঘ সব সময়ে তেড়ে আসে না, আর ভালুকের স্বভাবই হল কথা নেই বার্তা নেই তেড়ে এসে থাবা মারবে। অ্যাই বড় বড় নখ, বুঝলে?”
নগেন খুব বিরক্তির সঙ্গে বলে, “ভালুকের গল্প পরে হবে, হাতে জরুরী কাজ রয়েছে। চলো, ঘরে ঢুকে দেখা যাক৷”
“কে আগে ঢুকবে? তুমি, না আমি ?”
নগেন বলল, “টস করা যাক৷”
গদাই হেসে বলল, “তার দরকার নেই। তুমি রিটায়ার করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার বাহাদুর তোমার পিস্তল নিয়ে নিয়েছেন। আমার তো সে বালাই নেই। আমার পেটকোঁচড়ে সবসময়ে পিস্তল থাকে। তবে পিস্তলের দরকার হবে না। খুনি হোক, বাঘ হোক, এত লোক দেখে সে বসে নেই। এসো।”
গদাই ভেতরে ঢুকে চারদিকে টর্চ ফোকাস করে বলল, “ওহে নগেন, ব্যাপার সুবিধের নয়।”
টর্চের আলোয় যা দেখা গেল তা সুবিধের ব্যাপার নয় ঠিকই। শূলপাণির ঘর একেবারে লণ্ডভণ্ড। ঘটি বাটি বিছানা বাক্স সব ছত্রাকার ছড়িয়ে আছে। বানরটা ঘরের উঁচু একটা তাকে উঠে বসে আছে। ঘরের কোণে বসে বেড়ালটা ফ্যাঁস ফ্যাঁস আওয়াজ ছাড়ছে। মড়ালে কুকুরটা কোনও কালে বাঁধা থাকে না। সেটা আজ নতুন একটা চেন দিয়ে ভেতরের দরজার কড়ার সঙ্গে বাঁধা। চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে বেচারার গলা ভেঙে গেছে। গাঁয়ের লোক দেখে সে নিজস্ব ভাষায় নানারকম নালিশ জানাতে লাগল।
নগেন বলল, “শূলপাণি কি খুন হল নাকি হে গদাই?”
“আগেই খুন ধরে নিচ্ছ কেন? রক্তপাত তো হয়নি দেখছ?”
“আহা, গলায় ফাঁস দিয়ে যদি—”
“তাহলে লাশ যাবে কোথায় ?”
“সরিয়ে ফেলেছে।”
“কেন সরাবে ?”
“প্রমাণ লোপ করার জন্য।”
“নাঃ, তুমি দারোগ হলেও বুদ্ধি খাটাচ্ছ না। লাশ সরানোর পরিশ্রম কম না। বিশেষ কারণ না থাকলে কেউ একটা ডেডবডি-কাঁধে করে নিয়ে যায় না, ফেলেই যায়।”
ব্যঙ্গের হাসি হেসে নগেন বলল, “তাই বটে। এসব তো তুমি ভালই জানো। অনেক করেছ কিনা, তাই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছ।”
“অভিজ্ঞতার চেয়েও বড় কথা হল কমন সেন্স। তার জন্য মাথা খাটানো চাই। তুমি আস্ত পাঠা বা দেড়খানা পাকা কাঁঠাল খেতে পারো বটে, কিন্তু মস্তিস্কচালনা তোমার একেবারে নেই। পেটের ব্যায়ামই হয়েছে, মাথার ব্যায়াম হয়নি। যদি তাই হত তা হলে দু-দুবার তোমার গরদ থেকে আমি পালিয়ে যেতে পারতাম না।”
“অত বাহাদুরি কোরো না। আমার ফোর্সের মধ্যেও তোমার লোক ছিল। তারাই তোমাকে পালানোর পথ করে দিয়েছিল |”
গল্পের চতুর্থ অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।