গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“সেটা ধরতে তোমার এতদিন সময় লাগল কেন? যাকগে, এখন এসো, শূলপাণির ঘরদোর ভাল করে দেখে পরিস্থিতিটা খতিয়ে দেখা যাক৷”
একটু কাঁপা গলায় পেছন থেকে ভূতনাথ বলে উঠল, “দেখার কিছু নেই ভায়া। আমি সেই কবেই শূলপাণিকে বলেছিলুম, ওরে শূল, ভূত-প্রেত ধরে অধৰ্ম করিস না। ওরাই একদিন তোর ঘাড় মটকাবে। সেই কথাই ফলে গেল।”
ভিড় ঠেলে জটেশ্বর তান্ত্রিক এগিয়ে এসে বলল, “কটা ভূত ছিল শুনি শূলপাণির? সব গাঁজাখুরি গল্প। এ-গাঁয়ের সব ভূত শ্মশানকালী মন্দিরের বট আর অশ্বথগাছে ঝুলে আছে। আমি গুনে দেখে এসেছি একটু আগে। মোট সাতশো তিরানব্বইটা। এ-গাঁয়ে ও কটাই আছে। তাও চারশোর ওপর হচ্ছে বহু পুরনো ভূত। তাদের কারও-কারও বয়স হাজারের ওপরে। ঝুরঝুরে চেহারা, আবছা হয়ে এসেছে, তারা সাতে-পাঁচে থাকেও না। ভূতের নামে খবদার বদনাম দেবেন না।”
ভূতনাথ রামনামটা একটু থামিয়ে কাঁদো-কাঁদো গলায় বলল, “বদনাম করিনি বাপু, পাঁচজনে বলছিল আর কি।”
বৈষ্ণব গোপেশ্বর দাস জটেশ্বরের পিছুপিছু এসে মিষ্টি করে বলল, “শূলপাণি কি কৃষ্ণে লীন হয়েছেন? এখানে এত গোল কেন?”
গোপেশ্বর বিনয়ী হলেও চতুর লোক। গাঁয়ের সবাই তাকে সমঝে চলে। পবনকুমার তার দিকে চেয়ে ভূ কুঁচকে বলল, “শূলপাণি কৃষ্ণে লীন হলে তোমার সুবিধেটা কী বলো তো!”
“হরি হরি। আমার সুবিধে হবে কেন? জীবাত্মা যদি পরমাত্মায় মিলে গিয়ে থাকে তাহলে তো ভাল কথাই।”
“না, ভাল কথা নয়। এ-গাঁয়ের অনেকের ধারণা আছে যে, সরলাবুড়ির গুপ্তধন ছিল। আর সেই গুপ্তধনের সন্ধান সে শূলপাণিকে দিয়ে গেছে। সেই ধারণার বশবর্তী হয়ে যদি কেউ তার কাছ থেকে গুপ্তধনের সন্ধান আদায় করার জন্য গুম করে থাকে, তা হলে আশ্চর্য হব না। গোপেশ্বর, তোমাকে পরশুদিন দেখেছি বটতলায় বসে জটেশ্বরের সঙ্গে শূলপাণির গুপ্তধন নিয়ে কথা কইছিলে।”
রাজদ্রোহী পবনকুমারকে সবাই একটু ভয় খায়। এক সময়ে দুরন্ত পবনকুমারের দাপটে সবাই থরহরি ছিল।
গোপেশ্বর মিনমিন করে বলল, “সবাই বলে, আমরাও বলি। দোষের তো কিছু নয়। বিষয়-আশয়ে ডুবে থাকে জীব, সেই নিয়েই কথা হয়। তবে শূলপাণির কী হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।”
কে যেন বলল, “ভূতপ্রেত নয়, গুপ্তধনও নয়। আমি ভাল করেই জানি, শূলপাণি একজন ছদ্মবেশী বৈজ্ঞানিক। একদিন দুপুরে আমি এ-বাড়ি থেকে নীল আর লাল ধোঁয়া বেরোতে দেখেছি।”
গায়ের উটকো লোক রাখাল বলল, “আমি সবুজ ধোঁয়াও দেখেছি।”
বজ্র সেন বলল, “মনে হয় শূলপাণিকে আমরা ঠিক চিনতে পারিনি। তার কোনও বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের জন্যই তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে কেউ। ”
নগেন দারোগ বলল, “ওসব আষাঢ়ে গল্প। ”
সুধার ঘোষ বলল, “আচ্ছা দারোগাবাবু, শূলপাণির কি ঘড়ি ছিল?”
“জানি না।”
কয়েকজন একসঙ্গে বলে উঠল, “ছিল না ! ছিল না !”
সুধীর বলল, “ঘড়িই যদি ছিল না তা হলে শূলপাণি কি করে রাত আটটা বাজলে টের পেত আর হেসে উঠত বলুন তো!”
নগেন দারোগা খেঁচিয়ে উঠে বলল, “তার আমি কী জানি?”
সুধীর ঘোষ বলল, “তাতেই তো প্রমাণ হল শূলপাণি একজন বৈজ্ঞানিকই ছিল।”
নগেন দারোগা চোখ কটমট করে বলল, “কী করে প্রমাণ হল?”
সুধীর ঘোষ সকলের দিকে চেয়ে বলল, “হল কি না ভাইসব ?”
সবাই বলে উঠল, হ্যাঁ হ্যাঁ, “হলই তো।
গল্পের পঞ্চম অংশ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভানুধ্যায়ী এবং সম্মানিত অবদানকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।