হযরত হেযক্বীল (আঃ) এর নামকরণ, বংশ পরিচয় ও জীবনী

হযরত হেযক্বীল (আঃ) বুষীর কাহিনের পুত্র। (বনি ঈসরাঈলদের ভাষায় খুব শ্রেষ্ঠ আলেম ও পীরে কামেলকে কাহিন বলা হয়।) তাঁর নাম হেযক্বীল। হিক্র ভাষায় হেযক্বী শব্দের অর্থ কুদরত এবং শক্তি। আর “ঈল অর্থ আল্লাহ । অতএব, আরবী ভাষায় এর অর্থ “কুদরতুল্লাহ” কথিত আছে যে, শৈশবকালেই হযরত হেযক্বীল (আঃ) পিতৃহারা হন। যখন তাঁর নবুয়ত প্রাপ্তির সময় নিকটবর্তী হল তখন তাঁর মাতা খুব বৃদ্ধা ও দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। সুতরাং ইসরাঈলীদের মধ্যে “ইবনুল আজুয” (বুড়ির পুত্র) উপাধিতে তিনি খ্যাত ছিলেন।

জেহাদ ঘোষণা

তাফসীরের কিতাবসমূহে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং অন্যান্য কতিপয় সাহাবায়ে কেরাম হতে এ রেওয়াতটি বর্ণিত আছে যে, বনি ইসরাঈলদের একটি বিরাট দলকে তাদের পয়গম্বর হযরত হেযক্বীল (আঃ) যখন বললেন যে, শত্রু পক্ষের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হও এবং আল্লাহ পাকের বাণীকে উন্নত করার কর্তব্য পালন কর। তখন বনী ইসরাঈলরা মৃত্যুর ভয়ে পলায়ন করল। এত দূরে চলে গেল যে, তাদের মনে বিশ্বাস জন্মিল যে, এখন তারা জেহাদ হতে আত্নরক্ষা করে মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা পেয়েছে। তারা সেই দূরবর্তী এলাকায় এক উপত্যকা ভূমিতে বসবাস করতে লাগল। বনী ইসরাঈলদের এ পলায়ন কার্যকে আল্লাহ তা’য়ালার আদেশ অমান্য করা মনে করে পায়গম্বর হযরত হেযক্বীল (আঃ) অসন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ পাকের দরবারে তাদের জন্য বদদোয়া করলেন। আল্লাহ পাক নবীর বদদোয়ায় তাদের প্রতি গযব স্বরূপ দু’জন ফিরিশতা প্রেরণ করলেন। ফিরিশতাদ্বয় এসে পাহাড় ঘেরা এ ময়দানের দু’পার্শ্বে মৃতপুরীতে পরিণত হয়ে গেল। একজনও বাঁচতে পারল না। অতঃপর আশপাশের লোকজন এ ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে ময়দানে পৌঁছে আল্লাহর পযব দেখে হতবাক হয়ে গেল। তারা মৃত্যু ব্যক্তিদের দাফন কাফনের কথা ভাবলেও এত লোকের দাফন কাফন সম্পন্ন করা অসম্ভব ব্যাপার। তাই তারা দেহগুলোর চার পার্শ্বে একটি উচু দেয়াল প্রস্তুত করে দিল। তাদের মৃত দেহগুলো পচে মজে গেল।

শুধু তাদের হাড়গুলো সেখানে পড়ে রইল। এর দীর্ঘ সময় পরে হযরত হেযক্বীল (আঃ) এ স্থান দিয়ে গমন করছিলেন। দেয়ালের ভীতর স্থানে স্থানে মানুষের জীর্ণশীর্ণ হাড়সমূহ দেখে বড়ই মর্মাহত হলেন এবং তাদের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করলেন যে, হে আল্লাহ! তাদেরকে পুনরায় জীবিত করে তাদের জন্য এবং পরবর্তী লোকদের জন্য একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন যেন তারা অসৎ পথে না চলে। আল্লাহ পাক হযরত হেযক্বীল (আঃ) এর দোয়া কবুল করলেন এবং তাঁকে ওহীর মাধ্যমে বললেন, তিনি যেন জীর্ণশীর্ণ হাড়গুলোকে সম্বোধন করে বলেন-হে জীর্ণশীর্ণ হাড়সমূহ! আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিতেছেন তোমরা যেন স্ব স্ব স্থানে মিলিত হয়ে যাও!”

হাড়সমূহ নবীর মুখে আল্লাহ পাকের নির্দেশ শুনতে পেয়ে সাথে সাথে স্ব স্ব স্থানে মিলিত হয়ে গেল। অতঃপর হযরত হেযক্বীল (আঃ) কে পুনরায় নির্দেশ দেয়া হল যে, হে নবী! এবার বলুন, হে হাড়সমূহ! তোমরা নিজেদের গোশত, শিরা, উপশিরা ও চামড়া পরিধান কর। এ কথা বলার সাথে সাথে হাড়সমূহের সংগে গোশত, চামড়া, লেগে পরিপূর্ণ মানবদেহে পরিণত হয়ে গেল। অতঃপর হযরত হেযক্বীল (আঃ) কে বলা হল যে, এখন আপনি আত্নাসমূহকে সম্বোধন করে বলুন যে, হে রূহ সকল! আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যে যে দেহে ছিলে পুনরায় সে সে দেহে প্রবেশ কর। এ নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে মৃত দেহগুলো জীবিত হয়ে গেল। তারা জীবিত হয়ে অবাক দৃষ্টিতে চারদিকে তাকিয়ে দেখতেছিল। আর সকলে বলে উঠল, হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র, আপনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই।

এরপর হযরত হেযক্বীল (আঃ) দীর্ঘকাল পর্যন্ত বনী ইসরাঈলদের মধ্যে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন।

সূত্রঃ আল কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।